মানুষ আমার ওপর আস্থা রেখেছে বলেই বিজয়ী হয়েছি-গোলাম সরোয়ার টুকু
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরগুনা -১ আসনের পাঁচ বারের জাতীয় সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম সরোয়ার টুকু। আগেও এলাকায় তাঁর বেশ জনপ্রিয়তা ছিল। তবে এবার দীর্ঘদিনের একজন দক্ষ রাজনীতিককে ভোটে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে বেশি আলোচনায় আসেন তিনি। তাঁর এই সফলতার গল্প ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে দৈনিক মতবাদের সঙ্গে একান্তে কথা বলেছেন গোলাম সরোয়ার টুকু। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন-মতবাদের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক বিপ্লব রায়।
মতবাদ: হঠাৎ আপনি নির্বাচনে আসার সিদ্ধান্ত নিলেন কীভাবে?
গোলাম সরোয়ার টুকু - আমি একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে বড় হয়েছি। প্রতিমুহূর্তে আমি একটি নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় কখনো দলীয় প্রার্থীর জন্য, কখনো নিজের জন্য স্বপ্ন দেখেছি। কিন্তু এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সুযোগ দিয়েছেন। আমি সেই সুযোগটি নিয়েছি। গত নির্বাচনে আমি মনোনয়ন পেয়েছিলাম। এবারও আমার মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভবনা ছিলো। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আমাকে দিতে পারেননি। কিন্ত যখন দেখলাম তিনি প্রার্থী হতে দলের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন, সুযোগ করে দিয়েছেন তখন আমি চিন্তা করলাম এটাই প্রপার টাইম। আমি এই সিদ্ধান্তটা গ্রহণ করলাম। মানুষ আমাকে সমর্থন দিয়েছে, আমার ওপর আস্থা রেখে ভোট দিয়েছে বলেই আমি বিজয়ী হয়েছি।
মতবাদ: বরগুনা-১ আসনের প্রায় ৩০ বছরের এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুকে এক ধাক্কায় হারালেন, এটা কীভাবে সম্ভব হলো?
গোলাম সরোয়ার টুকু: আমার সারাজীবনের সৎ রাজনীতি। নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির কারণে বা বিনয়ী রাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে মানুষ আমার প্রতি সমর্থন দিয়েছেন।
মতবাদ: আপনার নির্বাচনে এই অংশগ্রহণ ও সাফল্যের পেছনে বিশেষ কারো অবদান আছে কী?
গোলাম সরোয়ার টুকু: আমার এই নির্বাচনের বিজয়ী হওয়ার পেছনে শুধুমাত্র জনগণের সাফল্য রয়েছে। জনগণ আমাকে সমর্থন করছে বলেই আমি বিজয়ী হয়েছি। এর পেছনে বিশেষ কোনো নেতা বা অন্য কোন ব্যক্তির সাফল্য নেই। এই সাফল্য শুধু জনগণের।
মতবাদ: আপনি আওয়ামী লীগের নেতা হয়ে নৌকার বিপক্ষে নির্বাচন করেছেন, বিপক্ষে অনেক বক্তব্য রেখেছেন। কিন্তু ভবিষ্যতে আপনাদের রাজনৈতিক অবস্থান কেমন হবে? এই দ্ব›দ্ব কি থাকবে? না থাকলে কীভাবে এ অবস্থা দূর করবেন বলে ভাবছেন?
গোলাম সরোয়ার টুকু: এটা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। দলের সভানেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিনি সুযোগ দিয়েছেন সেই সুযোগ গ্রহণ করেছি। এটা তো স্পষ্ট দেশের কোথাও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বহিষ্কার করা হয়নি, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বারবার এদের উৎসাহিত করেছেন।
মতবাদ: গত ৩০ বছরে বরগুনায় একজন সংসদ সদস্য দায়িত্ব পালন করেছেন, আপনি নতুন সংসদ সদস্য হিসেবে কী কী কাজ করবেন, যা দৃষ্টান্ত হতে পারে?
গোলাম সরোয়ার টুকু: সবক্ষেত্রে আমি আমার এমপির ক্ষমতা প্রয়োগ করব। একটি স্মার্ট বরগুনা বিনির্মাণের জন্য যা যা করা প্রয়োজন তা করব। যেমন- শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পর্যটন ,যুব সমাজকে মাদকের হাত থেকে বাঁচানো, চাঁদাবাজি থেকে এই অঞ্চলের মানুষকে রক্ষা করা, একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। সমগ্র বাংলাদেশের যা হয়েছে বরগুনা তার কিছুই হয়নি। কেউ না পাওয়ার বেদনা থেকে আমি কাজ করবো এবং এই অঞ্চলের মানুষকে আমি একটি ভালো পরিবেশের বরগুনা উপহার দেব।
মতবাদ: আপনি তরুণ প্রজন্মের একজন পরিচ্ছন্ন নেতা। তরুণদের জন্য আপনার বিশেষ কোনো চিন্তা আছে কী? থাকলে সেগুলো কী?
গোলাম সরোয়ার টুকু: আমাদের তরুণদের জন্য আত্মকর্মসংস্থানের জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করব। তাদেরকে উদ্যোক্তা বানানোর চেষ্টা করব। পরনির্ভশীল এবং অন্যায় কেরানীগিরি করা থেকে আমি তাদেরকে তাদের মানসিক শক্তি বাড়াবো। অর্থাৎ আমি তরুণদের স্কিল ডেভেলপমেন্টের জন্য দক্ষতার পেছনে অবদান রাখব এবং তাদেরকে অনুপ্রাণিত করব। দক্ষতা বৃদ্ধির সরকারের অনেক প্রকল্প আছে, সেসব দিয়ে তাদেরকে ধাবিত করব। তরুণদের জন্য দিকনির্দেশনা দেব। তাদেরকে আলোর পথ দেখাবো।
মতবাদ: একজন আইন প্রণেতা হিসেবে আপনি সংসদে এমন কোনো ভ‚মিকা রাখবেন, যাতে শুধু বরগুনা নয়, গোটা দেশবাসীর কাছে আপনি ইতিহাস সৃষ্টি করতে পারেন?
গোলাম সরোয়ার টুকু: এমন অনেকগুলো কাজ আছে যেগুলো পার্লামেন্টে উত্থাপন করা উচিত। শুধু আমার নির্বাচনের এলাকা নয় যেমন এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জাতীয়করণ, বেতন স্কেল বৃদ্ধি, তাদের উন্নতি জীবন দেয়া, তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে কথা বলা, সর্বজন কিছু দাবি আছে যখন সুযোগ পাবো আমি সেই দাবিগুলো উত্থাপন করার চেষ্টা করব।
মতবাদ: সংসদে গিয়ে আপনার প্রথম উদ্যোগ কী হবে? আপনি এলাকার কোন বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরবেন?
গোলাম সরোয়ার টুকু: সংসদকে কেবল এলাকার উন্নয়নে কথা বলায় না। সংসদ হচ্ছে আইন প্রণয়নের জায়গা। আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে দেশ কীভাবে এগিয়ে যাবে, সেই বিষয়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে মতামত দিবো। সরকার কোন আইন প্রণয়ন করবে, কোন আইন বিলুপ্ত করবে, কোন আইন সংশোধন করবে সেটা সরকারের ব্যাপার। সরকার যখন যে পদক্ষেপ নিবে, তার ইতিবাচক দিকগুলোরসমর্থন করবো। আর আমার বিবেক যদি বলে ভুল হচ্ছে, তাহলে সে বিষয়টির জড়ালো বিরোধিতা করবো।
মতবাদ: আপনার কাজে বরগুনার আওয়ামী লীগ অর্থাৎ নৌকার সমর্থকরা আপনাকে সহযোগিতা করবে? যদি না করে, তাহলে তা কীভাবে সংকট মোকাবিলা করবেন?
গোলাম সরোয়ার টুকু: আমি কোন সংকট মনে করি না। দলের তৃণমূল কর্মীরা ও জানেন যে এবার যারা স্বতন্ত্র নির্বাচন করেছেন, তারা দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক করছেন। তারা হয়তো প্রতীক পেয়েছেন। একটি প্রতীক তো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পাঁচজনকে দিতে পারবেন না। তাই অন্যদেরও নির্বাচন করার সুযোগ দিয়েছেন। আমি সেই সুযোগ গ্রহন করে নির্বাচন করেছি। এখন দলীয় কর্মকাÐ চালাবো। দলে আমার পদ-পদবি আছে। আমি দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। আমি সাংগঠনিক দক্ষতা ও যোগ্যতা দিয়ে নৌকা সমর্থকদের মন জয় করব। তারা বুঝতে পারবেন যে নবনির্বাচিত এমপি শুধু স্বতন্ত্র নয়, তিনি আওয়ামী লীগকে মনে প্রাণে লালন করেন। আওয়ামী লীগকে এগিয়ে নেয়ার পেছনে অবদান রাখতে চান। কমীরা এমনিতে আমার পাশে থাকবেন।
মতবাদ: বরগুনার মানুষ আপনার ওপর আস্থা রেখেছেন, তাদের প্রতি আপনার বক্তব্য কী?
গোলাম সরোয়ার টুকু: আমি শুধু এতটুকুই বলবো তৃণমূলের লাখ লাখ সাধারণ মানুষ আমার প্রতি আস্থা স্থাপন করেছেন। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি দোয়া চাই সমগ্র মানুষের কাছে। আমি যেন এই আস্থা- বিশ্বাস -ভালোবাসার মর্যাদা রাখতে পারি।
মতবাদ: আপনাকে ধন্যবাদ
গোলাম সরোয়ার টুকু: আপনাকেও ধন্যবাদ
এমএন