বরিশালে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ালো একাংশ, প্রতিরোধের ঘোষণা


বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ সারা দেশে স্বাস্থ্যখাতে সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলন নতুন মোড় নিয়েছে। কেননা চলমান এই আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজ শিক্ষার্থীরা। এমনকি আন্দোলনের নামে কেউ জনভোগান্তির সৃষ্টি করলে তা প্রতিহত করার ঘোষণাও দিয়েছেন তারা।
বুধবার রাতে বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজ থেকে একটি মশাল মিছিল নিয়ে নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের গোল চত্বরে গিয়ে এই ঘোষণা দিয়েছেন কলেজটির শিক্ষার্থীরা।
এ নিয়ে রাতে সেখানে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনও করেছে বিএম কলেজ শিক্ষার্থীরা। এতে লিখিত বক্তব্য রাখেন কলেজটির ছাত্র ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বরিশাল জেলার সাবেক আহ্বায়ক সাব্বির হোসেন সোহাগ।
তিনি বলেন, আমরা আশা করছি আগামী ৩০ কার্য দিবসের মধ্যে আমাদের দাবিগুলো পূরণ করবেন এবং মেডিকেলের সকল সিন্ডিকেট এবং দালালদের নির্মূল করতে সক্ষম হবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যদি এর ব্যাপ্তয় ঘটে আমরা আবারও কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবো।
সাব্বির হোসেন বলেন, বরিশালে স্বাস্থ্যখাত সংকার আন্দোলন বা শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় সংকারের আন্দোলনে বরাবরের মতোই বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা সামনের সারিতে ছিল। সকলের মতামতের ভিত্তিতে দীর্ঘ ১৭ দিন আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছি।
তিনি বলেন, আমাদের সকলের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সহ একটি প্রতিনিধি দল বরিশালের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা এবং অনশনরত শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙাতে পাঠান। তারা শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করেন। বরিশালের সুধীজনদের সাথে আলোচনা করেন।
শিক্ষার্থী ও সুধীজনদের সাথে ফলপ্রসু আলোচনার মাধ্যমে মহাপরিচালক শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়া আশ্বাস দিয়েছেন এবং শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতাল পরিচালক মহোদয় সম্প্রতি কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। বাকি দাবিগুলো অতিদ্রুত বাস্তবায়ন করার আশা ব্যক্ত করেছেন।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পাঠানো প্রতিনিধি দলের এবং মেডিকেলের পরিচালকের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ৩০ কার্য দিবস সময় বেধে দিয়ে আন্দোলন স্থগিত করলাম। আগামী দিন থেকে আর জনভেগান্তি হবে না। কেউ যদি জনভোগান্তির সৃষ্টি করে তবে তা সকলে মিলে প্রতিহত করার ঘোষণা দেন সাব্বির।
এদিকে, বিএম কলেজ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেও কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনের মূল উদ্যোক্তা মহিউদ্দিন রনি। বিকেলেই তিনি স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে বরিশালে আসার আহ্বান জানিয়ে হাসপাতাল চত্বরে গণঅনশন কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
তাছাড়া আন্দোলন নিয়ে স্বাস্থ্যের মহাপরিচালকের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে রাতে হাসপাতালের সামনে মহিউদ্দিন রনির নেতৃত্বে একটি মশাল মিছিরও বের হয়। যদিও বিএম কলেজ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দিলেও এ বিষয়ে রনির বক্তব্য জানা যায়নি।
তবে আন্দোলনের নেতৃত্বস্থানে থাকায় কয়েকজন জানিয়েছে, স্বাস্থ্যখাতে সংস্কার আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছে বিএম কলেজ শিক্ষার্থীরা। তাদের আহ্বানে অন্যান্য কলেজ শিক্ষার্থীরাও সারা দিয়েছিল। এখন বিএম কলেজই না থাকলে আন্দোলন শেষ পর্যন্ত টিকবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান সংশ্লিষ্টরা।
প্রসঙ্গত, বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে সিন্ডিকেট ভাঙার পাশাপাশি অনিয়ম-দুর্নীতি বিরুদ্ধে এবং স্বাস্থ্যখাতে সংস্কারের দাবিতে গত ১৭ দিন ধরে বরিশালে আন্দোলন করে আসছে ছাত্র-জনতা। এর মধ্যে গত ৭ দিন ধরে নথুল্লাবাদে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করে আসছে তারা। এতে সীমাহীন জনদুর্ভোগে পড়তে হয় সাধারণ মানুষের।
চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফরের নেতৃত্বে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধি দল বরিশালে আসে। তারা আন্দোলনকারীসহ সর্বস্তরের প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময় করে দাবি মেনে নেয়ার ঘোষণা দেন।
এইচকেআর
