ঢাকা রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

Motobad news

করোনা হয়নি ছেলের, মৃত্যুর এক বছর পর জানতে পারলেন বাবা-মা

করোনা হয়নি ছেলের, মৃত্যুর এক বছর পর জানতে পারলেন বাবা-মা
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন


মৃত্যুর পর কেটে গেছে এক বছরেরও বেশি সময়। গত বছরের জুলাইয়ে মৃত্যু হওয়া মেধাবী ছাত্র শুভ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের বাবা-মা এতদিনে জানতে পারলেন, করোনাতেই আক্রান্ত হয়নি তাদের ছেলে! অথচ করোনা হয়েছে এই আশঙ্কাতেই বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে কার্যত বিনা চিকিৎসায় শুভ্রজিতের মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ।

গত বছরের জুলাই মাসে করোনা অতিমারির মধ্যেই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে উত্তর চব্বিশ পরগণার ইছাপুরের বাসিন্দা শুভ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায়। বুক ধড়ফড় এবং শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দেয় তার। অভিযোগ, শুভ্রজিৎকে বেলঘড়িয়ার কাছে মিডল্যান্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানে কয়েক মিনিটের মধ্যেই একটি পরীক্ষা করে দাবি করা হয়, সে করোনায় আক্রান্ত। এরপর ভর্তি না করিয়েই শুভ্রজিৎকে অন্য হাসপাতােল রেফার করা হয়।

শেষ পর্যন্ত শুভ্রজিৎকে নিয়ে কলকাতা মেডিকেল কলেজে পৌঁছায় তার পরিবার। আগের বেসরকারি হাসপাতাল থেকে শুভ্রজিৎ করোনা আক্রান্ত বলে লিখে দেওয়ায় মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষও তাকে ভর্তি নিতে টালবাহানা করে। ১৬ আগস্ট শুভ্রজিতের আরটি পিসিআর টেস্ট করা হয়। কিন্তু সেই রিপোর্টই এতদিন পাননি তার বাবা-মা।

এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে টানাপড়েনের মধ্যেই শুভ্রজিতের মৃত্যু হয়। উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশিত হলে দেখা যায় শুভ্রজিৎ ৭৫ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েছে। কিন্তু মাসের পর মাস কেটে গেলেও শুভ্রজিতের সত্যিই করোনা হয়েছিল কি না, তা জানতে পারেনি মেধাবী ছাত্রের পরিবারটি। ওই রিপোর্ট পেতে আদালতের দ্বারস্থও হতে হয় তাদের। তথ্যের অধিকার আইনেও রিপোর্ট দেখার আর্জি জানানো হয়। শেষ পর্যন্ত বেলঘড়িয়া থানার তরফে শুভ্রজিতের পরিবারের হাতে মেডিকেল কলেজে করা করোনা পরীক্ষার সেই রিপোর্ট তুলে দেওয়া হয়। সেখানেই স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, শুভ্রজিতের আদৌ করোনা হয়নি।

শুভ্রজিতের এই করোনা রিপোর্ট দেখে তার বাবা মায়ের যন্ত্রণা আরও বেড়েছে। তারা এখনও মনে করেন, যথাসময়ে চিকিৎসা শুরু হলে নিশ্চয়ই বেঁচে যেত শুভ্রজিৎ। তবে করোনা রিপোর্ট পেতে কেন এক বছর সময় লাগল, তার নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়ে ফের কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার কথা ভাবছেন শুভ্রজিতের বাবা-মা।

শুভ্রজিতের বাবা বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘গত বছরের জুলাই মাসে আমার ছেলে মারা গিয়েছিল। তারপর এক বছর সময় লাগল রিপোর্ট পেতে। আমরা তখন বার বার বলেছিলাম যে ওর করোনা হয়নি। ওর করোনা হলে আমাদের কেন একবারও করোনার পরীক্ষা করা হল না? কারণ আমরা তো ওর বাবা-মা। যে ডাক্তার দুই মিনিটে কিছু না দেখেই কাগজে লিখে দিলো যে ও করোনায় আক্রান্ত, তার চিকিৎসক হওয়ার যোগ্যতাই নেই।’

ছেলের শোকে চোখের জল ফেলতে ফেলতে শুভ্রজিতের মা শ্রাবণী চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘মা ডাকটা এখন আমার কাছে অতীত। বড় বড় আইনজীবীরা আমার পাশে না দাঁড়ালে এই লড়াই করতে পারতাম না। সুূবিচার পেতে যতদূর যেতে হয় যাব।’

সূত্র : নিউজ১৮


এসএম
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন