ঢাকা মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫

Motobad news

এক পরিবারে তিন প্রতিবন্ধী, ভাতাই একমাত্র আয়

এক পরিবারে তিন প্রতিবন্ধী, ভাতাই একমাত্র আয়
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

জন্মগতভাবে কেউই প্রতিবন্ধী ছিলেন না। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনজনের শরীরে দেখা দেয় নানা ধরনের সমস্যা। জসিম উদ্দিন হঠাৎ শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েন। পরবর্তী সময়ে তার বোন মোর্শেদা শারীরিক ও তার স্বামী মফিজ ব্যাপারী হয়ে যান শ্রবণপ্রতিবন্ধী। এক পরিবারের তিনজন প্রতিবন্ধীর মধ্যে ভগ্নিপতি মফিজই সামান্য আয় করেন। তার ওপর নির্ভর করে চলছে মোট ছয়জনের ভরণপোষণ। 

অভাবের সংসার হলেও কখনো সাহায্যের জন্য কারও কাছে হাত পাতেননি তারা। শত কষ্টের মধ্যে দিন কাটালেও তারা ভিক্ষাবৃত্তিকে পছন্দ করেন না। সরকারের দেওয়া প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড আগেই বড় ভাই জসিম উদ্দিন পেয়েছিলেন। চলতি বছর তিনজনই সরকারি ভাতার সুবিধার আওতায় এসেছেন। এত খুশি তারা। তবে কোনো আর্থিক সহযোগিতা পেলে ছোটখাটো কোনো ব্যবসা করে সংসারে একটু সচ্ছলতা আনতে পারবেন বলে জানান তারা।

 সরেজমিনে দেখা যায়, কুয়াকাটা পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের খাজুরা গ্রামের জরাজীর্ণ একটি ঘরে বসবাস করেন জসিম উদ্দিন তার স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে। অন্যদিকে মফিজ ব্যাপারী ও মোর্শেদা দম্পতি নিঃসন্তান। তাদের মধ্যে শারীরিক প্রতিবন্ধী দুজন অন্যের সহযোগিতা ছাড়া ঘরের এক মেঝে থেকে অন্য মেঝেতে চলাচল করতে পারেন না। শারীরিক প্রতিবন্ধী জসিম ব্যাপারী বলেন, আমরা ১৪ ভাই-বোন ছিলাম। ১৩ নম্বরে আমি এবং ১৪ নম্বরে  মোর্শেদা। এই এলাকায় বেড়িবাঁধ না থাকায় আমার নয় ভাইবোন বন্যায় মারা গেছে। পরে আমরা তিন ভাই ও দুই বোন জন্ম নিয়েছি। তাদের মধ্যে এক ভাই মারা গেছে এবং এক ভাই ও এক বোন অন্যত্র থাকে। আমার দুটি সন্তান। ছেলে কুয়াকাটা বঙ্গবন্ধু স্কুলে ক্লাস সেভেনে পড়ে। আর মেয়ে মাদ্রাসায় ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। তাদের লেখাপড়ার মেধা ভালো। তাই শত কষ্টের মধ্যেও তাদের লেখাপড়া চালিয়ে নিচ্ছি। কিন্তু উপার্জন করতে পারি না বলে মানসিকভাবে খুব কষ্টে আছি। 

জসিম উদ্দিনের ছোট বোন শারীরিক প্রতিবন্ধী মোর্শেদা বলেন, শারীরিক কারণে চলতে-ফিরতে পারি না। সরকারের সাহায্য-সহযোগিতা পাই। এর বাইরে কিছু কাজ করি। সেই আয় দিয়ে চলি। কেউ ব্যবসা করার জন্য সহযোগিতা করলে আমরা একটু ভালোভাবে চলতে পারতাম। মোর্শেদার স্বামী শ্রবণপ্রতিবন্ধী মফিজ ব্যাপারীকে ইশারার মাধ্যমে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার আয়ের টাকা দিয়ে ছয়জনের সংসার চলে। কাজ এক দিন পেলে আবার দুই দিন পাই না। তিনি আরও জানান, আজ ১৫ দিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত। তাই কাজ করতে যেতে পারি নাই। কানে শুনতে পাই না। তাই পরিচিত ছাড়া কেউ কাজ দেয় না।

 কুয়াকাটা বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. খলিলুর রহমান বলেন, প্রতিবন্ধী জসিম উদ্দিন সম্পর্কে আমি জানি। কিন্তু তার সন্তান আমার বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী, তা আমার জানা ছিল না। তিনি আরও বলেন, আজ থেকে এই শিক্ষার্থীর লেখাপড়ার জন্য আমার বিদ্যালয়ে কোনো টাকা দিতে হবে না। কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, জসিম উদ্দিন ব্যাপারীর পরিবার আসলেই অসহায় অবস্থায় দিন পার করছে। পৌরসভায় যত ধরনের ত্রাণ আসে, আমি তাদের জন্য রাখি। তিনি আরও বলেন, বাজেটে প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ রেখেছি। এ ছাড়া ওই পরিবারকে ঘর দেওয়ার ব্যাপারে আমি চেষ্টা করছি। পৌর ভবনে প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা রুম নির্মাণের ব্যবস্থা করছি।

 কলাপাড়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, এই পরিবারের তিনজন প্রতিবন্ধী সরকারি ভাতা পান। সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবন্ধীদের জন্য ঋণ কার্যক্রমের আওতায় তাদের আনার জন্য আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করব। এ ছাড়া সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাদের জন্য বরাদ্দ পাওয়া সুযোগ-সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে।
 


এইচেকআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন