বৃষ্টির পানি শ্রেণি কক্ষে, দুর্ভোগের কবলে শিক্ষার্থীরা


বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে গতকাল রাত থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে বরগুনায়। বৃষ্টির পানি জমে বরগুনার বেশ কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অস্থায়ী টিনশেড ঘরে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান, ভোগান্তিতে পড়ছে শিক্ষার্থীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনা চলাকালীন সময় বরগুনা সদর উপজেলার ১০ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য পুরাতন ভবন গুলো ভেঙে ফেলা হয়। এসময় শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার জন্য বিদ্যালয়গুলোর পাশে নির্মাণ করা হয় টিনশেড ঘর। বিদ্যালয় খুলে দেওয়ার পর এই টিনশেড ঘরেই শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গতকাল রাত থেকে দফায় দফায় বৃষ্টি হওয়ায় এসকল বিদ্যালয়ের শ্রেনীকক্ষগুলোর মেঝেতে পানি জমে যায়। ফলে ক্লাস নিতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের।
মঙ্গলবার দুপুরে বরগুনা পৌর শহরের চরকলোনী হামিদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, পুরাতন ভবনটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। পাশেই একটি টিনশেড ঘরে পাঠদান চলছে শিক্ষার্থীদের। টিনশেড ঘরটি রাস্তার পাশের ঢালুতে নির্মাণ করায় বৃষ্টির পানি ঢুকে পড়েছে ক্লাসরুমে। এতে পানির মধ্যেই ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষকরা। পানি জমে জলাবদ্ধতা তৈরি হওয়ায় বেড়েছে মশার উপদ্রব। সেই পানির মধ্যে ক্লাস নেওয়ায় ভোগান্তি হচ্ছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম। স্কুলটির শুধু পঞ্চম শ্রেণিতেই ৭৮ জন এবং সব মিলিয়ে ৩৪৫ শিক্ষার্থী রয়েছে বলে জানান স্কুল কর্তৃপক্ষ।
বরগুনা সদর উপজেলার দক্ষিণ বাঁশবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ধুপতি মনসাতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাইঠা লবণগোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং দক্ষিণ ইটবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিনে দেখা গেছে, নিলাম ক্রেতাদের কেউ পুরনো ভবন ভেঙে নিয়ে গেছে, কেউবা এখনও তা ভাঙার কাজে ব্যস্ত। তবে প্রত্যোকটি বিদ্যালয়েই নির্মাণ করা হয়েছে টিনশেড একটি করে আর এসকল ঘরের ফ্লোর নিচু হওয়ায় বৃষ্টির পানি জমছে।
চরকলোনী হামিদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, দীর্ঘদিন পর স্কুল খুলেছে। আমরা সবাই এতে আনন্দিত কিন্ত ক্লাসের মধ্যে পানি জমে থাকায় আমাদের খুবই কষ্ট হচ্ছে।
এই স্কুলের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মনোয়ারা বেগম বলেন, আমাদের ছেলেমেয়েরা অনেক কষ্টে পানির ভিতরে ক্লাস করে এবং মশার উৎপাত বেশি দেখা যাচ্ছে। এতে করে করোনা ভাইরাস ও ডেঙ্গু জ্বর দুইটারই সম্ভাবনা বেশি রয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাসনাহেনা বলেন, বৃষ্টির পানি জমে থাকার সমস্যা কিছু দিন ধরে। তবে আমরা শুক্রবার এটি মেরামতের কাজ করবো যাতে পানি জমে না থাকে। আর নতুন ভবনের কাজ তো চলছে সেটির কাজ সম্পন্ন হলে তো আর কোন সমস্যা হবে না আশাকরি।
চরকলোনি হামিদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি অ্যাড. সেলিনা হোসেন বলেন, নতুন ভবন নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে প্রায় এক বছর আগে। অথচ পুরনো ভবন নিলামে দেওয়া হয়েছে মাত্র সাত-আট দিন আগে। এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে বহুবার যোগাযোগ করা হলেও যথাসময়ে তা করা হয়নি। এ কারণে এখন চরম ভোগান্তিতে পড়েছে এ বিদ্যালয়ের তিন শতাধিক কোমলমতি শিক্ষার্থী। তবে সাময়িক সমস্যা হলেও আমাদের উদ্যোগেই এটা সমাধান করা হবে।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিইও) এমএম মিজানুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন পর বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান শুরু হয়েছে। বৃষ্টির কারণে কয়েকটি নির্মাণাধীন ভবনের পাশের অস্থায়ী টিনশেড ঘরে পানি প্রবেশ করতে পারে। এবিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদানে যাতে ভোগান্তি না হয় সে বিষয়ে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছি।।
 
এমবি

 
                 
                                 
                                             
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                 
                                     
                                     
                                    