দাদির কোলে গিয়েই কান্না থামলো যমজ সেই শিশু দুটির

ঝালকাঠি পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে রেখে যাওয়া যমজ শিশু দুটি এখন দাদির কাছে। রোববার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঝালকাঠি সদর থানা থেকে দাদি এসে শিশু দুটিকে নিজ জিম্মায় নেন।
কাঠালিয়া থানার কনস্টেবল ইমরান স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার পর বাচ্চাদের খরচ ও ভরণপোষণ বাবদ মাসিক তিন হাজার টাকা দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকলেও তা নিয়মিত দিতেন না। চিকিৎসা খরচ চালাতেও অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে নিরুপায় হয়ে ইমরানের স্ত্রী সুমাইয়া আক্তার রোববার বিকেল ৩টার দিকে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে শিশু দুটিকে রেখে যান। পরে তাদের ঝালকাঠি সদর থানার নারী ও শিশু হেল্প ডেস্কে নিয়ে রাখা হলে দায়িত্বরত পুলিশের নারী কনস্টেবল তাদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। দুই শিশুর কান্নায় থানার পরিবেশ হৃদয়বিদারক হয়ে ওঠে।
সদর থানা থেকে ইমরানকে বিষয়টি জানানো হলে তার মা রাত সাড়ে ১০টার দিকে শিশু দুটিকে নিয়ে যান। দাদির কাছে যাওয়ার পরপরই কান্না থামে তাদের।
ঝালকাঠি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খলিলুর রহমান বলেন, যমজ দুই শিশুকে রাতেই ওদের দাদির জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।
থানা পুলিশ ও শিশু দুটির মা সূত্রে জানা যায়, শিশু দুটির বাবা ইমরান হোসেন কাঁঠালিয়া থানায় কনস্টেবল পদে কর্মরত আছেন। তিনি বর্তমানে এক মাসের প্রশিক্ষণের জন্য জামালপুরে অবস্থান করছেন। তার বাড়ি বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার মালুহার গ্রামে। ২০১৯ সালের মে মাসে ঝালকাঠি সদরের খাওক্ষির গ্রামের সুমাইয়া আক্তারের সঙ্গে বিয়ে হয় কনস্টেবল ইমরানের। দাম্পত্য কলহের জেরে চলতি বছরের মার্চ মাসে স্ত্রীকে তালাক নোটিশ পাঠান ইমরান। তালাক নোটিশ পেয়ে স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুক মামলা করেন সুমাইয়া।
সুমাইয়ার দাবি, তালাক নোটিশ পাঠানোর আরও আগে থেকে তার এবং সন্তানদের কোনো ভরণপোষণ দিচ্ছেন না ইমরান।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে চা দোকানি মাহফুজ মিয়া বলেন, বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে একজন নারী তার দুই শিশু সন্তানকে- এসপি অফিসের চেকপোস্টের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের সামনে রেখে যান। যাওয়ার সময় বলে যান, ‘তোমাদের সন্তান তোমাদের কাছেই থাক।’
রোববার সন্ধ্যায় ঝালকাঠি সদর থানায় গিয়ে দেখা যায়, শিশু দুটির কান্নায় থানার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। নারী ও শিশু হেল্প ডেস্কের একজন নারী কনস্টেবল শিশু দুটিকে সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। এ সময় শিশু দুটির শরীরে জ্বর ছিল।
সুমাইয়া আক্তার মোবাইল ফোনে বলেন, গত ১২ সেপ্টেম্বর টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় শিশু আরাফ ও আয়ানকে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রোববার সকালে চিকিৎসকরা তাদের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে বলেন। এতে প্রায় ছয় হাজার টাকার প্রয়োজন ছিল। বিষয়টি কনস্টেবল ইমরানকে জানানো হলেও তিনি টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তাই বাধ্য হয়ে শিশু দুটিকে নিয়ে পুলিশ সুপার ফাতিহা ইয়াসমিনের সাক্ষাতের জন্য যাই। কিন্তু প্রধান গেটের সামনে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ইমরান মিয়া ও মো. সুমন নামের দুই পুলিশ সদস্য ভেতরে প্রবেশ করতে দেননি। তাই বাধ্য হয়ে শিশুসন্তানদের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে রেখে চলে এসেছি।
তিনি আরও বলেন, ওদের লালন-পালন করতে আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু খরচ চালানোর মতো সঙ্গতি আমার নেই।
কনস্টেবল ইমরান বলেন, ‘প্রতি মাসে শিশু দুটির ভরণপোষণের জন্য তিন হাজার টাকা সুমাইয়ার ব্যাংক হিসাবে পাঠিয়ে দিই। আমি আমার সাধ্য অনুযায়ী তাদের খোঁজখবর নেই। কিন্তু মা হয়ে সে কীভাবে সন্তানদের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে ফেলে গেলো?’
ঝালকাঠি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খলিলুর রহমান বলেন, আমরা বিষয়টি দুই পরিবারের সঙ্গে কথা বলে মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করেছি। রাতে শিশুদুটিকে তাদের দাদির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
এইচেকআর