উন্নয়ন প্রকল্প ও সরকারি সেবা সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করতে হবে : আনোয়ার হোসেন মঞ্জু.
.jpg)
জাতীয় পার্টি-জেপি’র চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি বলেছেন, জানার অধিকার জনগণের সাংবিধানিক বলে উম্মুক্তস্থানে তথ্য সম্বলিত বোর্ড স্থাপন করে সংশ্লিষ্ট এলাকার উন্নয়ন সম্পর্কে মানুষকে অবগত করতে হবে। সিটিজেন চার্টার বা নাগরিক সনদ মানুষের দৃষ্টির আওতায় রাখা হলে বরাদ্দকৃত সম্পদ, বাস্তবায়নাধীন উন্নয়ন প্রকল্প বা সরকার প্রদত্ত সেবা সমূহ নাগরিকরা যথাযথভাবে ভোগ করতে সক্ষম হন। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের কার্যালয় প্রাঙ্গণে যাতে সিটিজেন চার্টার স্থাপন করে জনগণকে সঠিক তথ্য দেয় তার ব্যবস্থাও দায়িত্বপ্রাপ্ত জনপ্রতিনিধিদের করা বাঞ্চনীয়।
তিনি সোমবার (২০সেপ্টেম্বর) পিরোজপুরের ভা-ারিয়া উপজেলা সদরে উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের উপর এক মতবিনিময় সভায় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্যের উদ্দেশ্যে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, জনগনের অভাব-অভিযোগ ও দাবী-দাওয়ার কথা প্রথমে তাদের দোরগোড়ার ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বরদের কাছে জানাতে হবে। চেয়ারম্যান-মেম্বররা যদি মানুষের চাহিদা পূরণে অসমর্থ হন তখন উপজেলা চেয়ারম্যানের মাধ্যমে স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাছে তা পেশ করবেন। জনগণের এই প্রয়োজনের কথা সংসদ সদস্যরা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, মন্ত্রী এমনকি প্রধানমন্ত্রীর কাছেও পৌঁছে দিতে পারেন। ধাপে ধাপে মানুষের আকাঙ্খা-চাহিদা উপস্থাপন করা গেলে তার প্রতিকার পাওয়া সহজ হয়। মানুষ যখন বরাদ্দকৃত সম্পদ, বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প, সরকারের চালুকৃত সেবাসমূহ সম্পর্কে অবগত থাকে তখন উন্নয়ন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়। পাশাপাশি কাজের মান নিয়েও মানুষ প্রশ্ন করতে পারে। তার প্রয়োজনে যে কর্মসূচি চলমান তার তদারকি, নিরাপত্তা, বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া প্রত্যক্ষভাবে নাগরিকদের গোচরিভূত থাকে। তখন দেশী-বিদেশী উৎস থেকে প্রাপ্ত সম্পদের সদ্ব্যবহার সুনিশ্চিত হতে বাধ্য। সংসদ সদস্য বা উপজেলা থেকে পাওয়া সম্পদের বিবরণ সিটিজেন চার্টার বা বোর্ডে উল্লেখ থাকতে হবে। অবকাঠামো উন্নয়ন ও সামাজিক নিরাপত্তা ইত্যাদি কর্মসূচিতে বরাদ্দকৃত সম্পদ ও তার বিবরণ জনগণের জানা থকেলে আত্মসাৎ, অপচয় তথা দুর্নীতি বহুলাংশে হ্রাস পায়।
স্থানীয় সরকারের কাছে রাষ্ট্র থেকে প্রাপ্ত সম্পদ হয়তো পর্যাপ্ত বা যথেষ্ট নয়। কিন্তু এই সীমিত সম্পদেরও যথাযথ ব্যবহার করে গ্রাম এলাকার রাস্তা-ঘাট ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন তথা ছোট-খাটো রক্ষণাবেক্ষণ কাজ করা সম্ভব। এ সব তৃণমূলের কাজগুলো সম্পর্কে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের তৎপর, আন্তরিক ও মনোযোগী হতে হয়। যা আমরা সাধারণত দেখতে পাই না।
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি বলেন, মানুষকে স্বাধীনতার স্বাদ দিতে হবে। স্বাধীনতা নাগরিকদের ভোগ করার জন্য এ সুফল যাতে মানুষ পায় তার জন্য তাদের যোগ্য করে তোলা আমাদের দায়িত্ব। বৃটিশ ও পাকিস্তানের হাত থেকে দুই প্রাপ্ত স্বাধীনতার বয়স ৭০বছরেও বেশী। এই স্বাধীনতার সুফল যারা পাচ্ছেন তারা সমাজের কায়েমী স্বার্থভোগকারী, শক্তিধর, ক্ষমতার অধিকারী তথা প্রভাবশালী। দুর্বল ও সাধারণ গণমানুষ, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, শ্রমজীবি শ্রেনী তথা এখনও যারা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী তারা প্রকৃতপক্ষে স্বাধীন হননি। এই দেশ সকলের, সাধারণ মানুষকে স্বাধীনতার সুফল দিতে হবে।
তিনি স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্য করে বলেন, তাদের কাজের হিসাব দিতে হবে, এ জন্য জবাদিহিতা মোকাবেলায় প্রস্তুত হোন। তা নাহলে এক সময় দেশে নৈরাজ্য আসবে। যদিও পরিস্থিতিগত কারণে এই নৈরাজ্য বিপ্লবে রূপ নেবে না, কিন্তু তা সামাল দেওয়াও দুঃসাধ্য হবে। মনে রাখবেন আজ হোক, কাল হোক জনগণ এলাকার মানুষ চেয়ারম্যান বা এমপিদের কাছে হিসাব চাইবে। কারণ সম্পদ বা অর্থের মালিক জনগণ। মানুষ ক্রমান্বয় সচেতন হচ্ছে। বাংলাদেশে সংগ্রাম এখনও শেষ হয়নি। বৃটিশ বা পাকিস্তান আমলের উপনেবেশিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে স্বাধীন দেশের মানুষকে দেখলে চলবে না। মানুষ যদি একবার জেগে ওঠে তাহলে তা সামাল দেয়া যাবে না।
তিনি বলেন, দেশে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তালিকা প্রণয়ন নিয়ে বিভ্রান্তি কাটেনি। যখন যে ক্ষমতায় আসেন তখন তিনি তার পছন্দসই তালিকা করে আগেরটি বাতিল করে দেন। এই মুক্তিযোদ্ধা তালিকা প্রণয়ন সঠিক না হলে দেশে নৈরাজ্য দেখা দিতে পারে। আমরা চাই ভা-ারিয়াসহ সারা দেশে ঐক্য বজায় থাকুক। এই দেশ আমাদের, দেশকে বিভক্ত করবেন না। ভা-ারিয়ায় মানুষ ঐক্যবদ্ধ আছে বলে আমরা অনেক কিছু পাই। যার কারণে দেশ-বিদেশ থেকে আমরা অনেক কিছু আনতে পারি। ভা-ারিয়া যা যা ভালো কিছু হয়েছে তার চেয়েও আরও ভালো হতে পারতো। উন্নয়ন বরাদ্দ তথা প্রকল্প গ্রহণের প্রক্রিয়া অনেক জটিল ও প্রশ্ন সাপেক্ষ হওয়ায় প্রশাসনের কাছ থেকে আমরা আমাদের কাঙ্খিত চাহিদা পূরণ করতে অনেক সময় সক্ষম হই না।
তবে ভা-ারিয়ায় বাস্তবায়ন ক্ষেত্রে দলীয়করণ না থাকায় আমরা সম্পদের শতভাগ সদ্ব্যবহারে সক্ষম হই। তারপরও জনপ্রতিনিধিদের অনেক কিছু সংশোধন করতে হবে। প্রকল্প গ্রহণ বা বাস্তবায়নে কোনরূপ কমিশনবাজী বরদাস্ত করা যাবে না। আসুন আমরা সকলে মিলেমিশে থাকি, একত্রে বসবাস করি। এক থাকলে অতীতের মত নায্য হিস্যা আদায় করা যাবে। ঈমানের সাথে, সততার সাথে, আন্তরিকতার সাথে কাজ করতে হবে। ও ভাণ্ডারিয়া তথা বাংলাদেশকে একটি সুন্দর তথা আদর্শ রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। যেখানে থাকবে উন্নয়ন আকাঙ্খা, আইনের শাসন, মানুষের মধ্যে শৃঙ্খলাবোধ। তাহলেই এখানে মানুষ সন্তুষ্টির সাথে সুখে শান্তিতে বসবাস করবে। আগামী প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পরিবেশ আমরা এখানে রেখে যেতে চাই।
সোমবার দুপুরে ও ভাণ্ডারিয়া উপজেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত এ মতবিনিময় সভায় উপজেলার সকল ইউনিয়নের সম্মানিত চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য এবং ভা-ারিয়া পৌরসভার পৌর প্রশাসক, পৌর কাউন্সিল ও পৌর সহায়ক কমিটির সদস্যরা অংশ নেন। ও ভাণ্ডারিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মিরাজুল ইসলাম এ মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন।
এ সময় মঞ্চে ছিলেন ও ভাণ্ডারিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সীমা রানী ধর, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা জেপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক মশিউর রহমান মৃধা, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা মহিলা জাতীয় পার্টি’র সভানেত্রী আসমা আক্তার, ও ভাণ্ডারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত মাসুমুর রহমান বিশ্বাস, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফায়জুর রশীদ খসরু জোমাদ্দার, টুঙ্গীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা হাফিজুর রশীদ তারিক প্রমুখ।
জনপ্রতিধিদের মধ্যে অডিটরিয়ামে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা জাতীয় পার্টি-জেপি’র সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও ভাণ্ডারিয়া পৌরসভার কাউন্সিলর গোলাম সরওয়ার জোমাদ্দার, উপজেলা জেপি’র সদস্য সচিব ও ধাওয়া ইউপি চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান টুলু, উপজেলা জেপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক ও গৌরীপুর ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান চৌধুরী, আওয়ামী লীগের উপজেলা সংগঠনিক সম্পাদক ও ইকড়ি ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির, ভিটাবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান খান এনামুল করিম পান্না ও তেলিখালীর ইউপি চেয়ারম্যান মো. সামসুদ্দিন। মিলনায়তনে আরও উপস্থিত ছিলেন ও ভাণ্ডারিয়ার পৌরসভা ও পাঁচটি ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিবৃন্দ।
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি সোমবার বিকালে ও ভাণ্ডারিয়া উপজেলার গৌরীপুর ইউনিয়নের পৈকখালী বাজার সংলগ্ন পুকুরে উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনায় মাছের পোনা অবমুক্ত করনে অংশ নেন।
এমবি