ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

Motobad news

আজ বিশ্ব সহানুভূতি দিবস

আজ বিশ্ব সহানুভূতি দিবস
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন


১৩ নভেম্বর, আজ বিশ্ব দয়া দিবস। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীর উন্নয়নের পাশাপাশি শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো যখন আত্মশক্তির হাতিয়ার হিসেবে পারমাণবিক শক্তির উন্নয়ন ও আবিষ্কারে ব্যস্ত, ঠিক তখনই ১৯৯৭ সালে জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল বিশ্ব শান্তি সম্মেলন। 

আমন্ত্রণ করা হয় সারা বিশ্বের জননেতাদের। তাদের নিজ নিজ দেশের শান্তির গল্প বলার জন্য। সেই সম্মেলনেই সিদ্ধান্ত হয় ১৯৯৮ সালে পালন করা হবে আরেকটি সম্মেলন। গঠন করা হয় বিশ্ব সহানুভূতি আন্দোলন নামে একটি সংগঠন। সেই সংগঠনই পালন করে প্রথম বিশ্ব সহানুভূতি দিবস। সেই দিবস পালন করা হয় বিশ্বের ২৮টি দেশে। 
 
২০১০ সালের নভেম্বর মাসের ১৩ তারিখেই বিশ্ব সহানুভূতি দিবসকে নতুন মাত্রা দেয় বিশ্ব সহানুভূতি আন্দোলন, যুক্তরাজ্য। সেই বছর থেকে বছরের ১৩ নভেম্বর সারা বিশ্বে বিভিন্ন দেশে দেশে সহানুভূতির বার্তা ছড়িয়ে দিতে পালন করা হয় বিশ্ব সহানুভূতি দিবস। 

বর্তমানে আমরা বিশ্বগ্রাম বা গ্লোবাল ভিলেজে বসবাস করছি। সুদূর আমেরিকায় কী ঘটছে মুহূর্তের মধ্যেই জানতে পারি। নিজেদের দেশেও ঘটে যাওয়া ঘটনা শেয়ার করছি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। প্রতিটি দেশ নতুন নতুন করে নানা বৈশ্বিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। নিজ দেশের পাশাপাশি অন্য দেশের সমস্যাগুলো উপলব্ধি করার এখনই সময়। সেই জন্য সহানুভূতিশীল বিশ্ব গড়ার জন্য বিশ্ব সহানুভূতি দিবসের বিকল্প নেই।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মানুষ একটু ভালো ব্যবহার পেলে, একটু উৎসাহ পেলে অনেক ভালো কাজ করতে পারে, অনেক বড় বাঁধা অতিক্রম করতে পারে। সহানুভূতির ফলে সহজেই মানুষ জয় করতে পারে মানুষের মন। লস অ্যাঞ্জেলেসের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার বেদারি কাইন্ডনেস ইনস্টিটিউট অবশ্য এ নিয়ে অনেকের করা হাসি-ঠাট্টার জবাব দিতে শতভাগ তৈরি। 

প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ড্যানিয়েল মি. ফেসলারের গবেষণার বিষয় হলো, কীভাবে দয়া ও সহমর্মিতার দৃষ্টান্ত দেখিয়ে মানুষকে আরো দয়ালু ও সহানুভূতিশীল হতে উৎসাহিত করা যায়। তার মতে, দয়ামায়ার বিষয়টি মূলত একটি ভাবনা, একটি অনুভূতি এবং একটি বিশ্বাস, যা মূলত অপরের ভালোর সঙ্গে সম্পর্কিত। আর নির্দয় হওয়া মানে অসহিষ্ণু মতবাদ, অপরের ভালো সম্পর্কে উদাসীন। প্রতিষ্ঠানটি মনে করে দয়ালু বা সহানুভূতিশীল বেশি হলে মানুষের আয়ু বাড়ে।  

উন্নত দেশগুলোতে শিক্ষার হার বৃদ্ধির পাশাপাশি সেই দেশে বৃদ্ধাশ্রমগুলোর সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। যে শিক্ষা পরিবারের দায়িত্ব নেয়ার ক্ষেত্রে অবহেলা শেখায় তা প্রকৃত শিক্ষা হতে পারে না। পরিবার, সমাজ ও চারপাশে সহানুভূতি ছড়িয়ে দিতে প্রয়োজন সহানুভূতি ভিত্তিক শিক্ষা। একুশ শতকের অন্যতম দক্ষতা হল সামাজিক ও নৈতিক দায়িত্বের দক্ষতা। মানুষ সামাজিক জীব হিসেবে তাকে সমাজ ও চারপাশ নিয়ে ভাবতে হবে। চারপাশের ঘটনাগুলো উপলব্ধি করতে হবে। সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে। চারপাশ সম্পর্কে সচেতন হয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।  

সহানুভূতির চর্চা করার উপায়  
আলোকিত হৃদয় ফাউন্ডেশনের ইনোভেশন ল্যাব হিসেবে আলোকিত হৃদয় স্কুলে সহানুভূতি ভিত্তিক শিক্ষন পদ্ধতি নিয়ে নানান কাজ করা হয়ে থাকে। সেই শিক্ষা পদ্ধতি শিক্ষক শিক্ষার্থীরা চর্চা করে থাকেন। সেই পদ্ধতি বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা থেকে সহানুভূতি ভিত্তিক শিখন পদ্ধতির জন্য পরামর্শ হলো-  

শ্রেণিকক্ষে একটি সহানুভূতির পরিবেশ তৈরি করুন 
শিক্ষকের জন্য শ্রেণিকক্ষ একটা গবেষণাগারের মতোই। শিক্ষণ-শিখনের সেরা জায়গা হতে পারে এই শ্রেণিকক্ষে। শিক্ষার্থীরা অধিকাংশ সময় কাটিয়ে দেয় শ্রেণিকক্ষেই। এখন কোভিড-১৯ সময়ে অনলাইনেই ক্লাস নিতে হয় আমাদের। ফলে ক্লাসের শুরুতেই আমরা একে অপরের খোঁজ খবর নেবো। একই অপরের মনের অবস্থা বুঝার মাধ্যমে ক্লাস পরিচালনা করতে হবে। কারো মন খারাপ থাকলে শেয়ার করার সুযোগ দিন। মন খারাপ থাকা শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা রেখেই শ্রেণিকক্ষের পরিবেশ আনন্দায়ক তৈরি করুন। কোনো শিক্ষার্থী যদি খুব মন খারাপ থাকে সেই শিক্ষার্থীকে উৎসাহমূলক কথা বলে পুরো শ্রেণিকে প্রাণবন্ত ও উৎফুল্ল করুন। 

শ্রেণির সহানুভূতির পাঠগুলো অনুশীলন করুন 
প্রতিটি পাঠ্য বইয়েই সহানুভূতি চর্চার জন্য কিছু পাঠ থাকে যেমন তৃতীয় শ্রেণির বাংলা বইয়ে ‘কুঁজো বুড়ির গল্প’ আছে। সেই গল্পে বুড়ি যখন বিপদে পড়ল তখন তার তিন কুকুর রাঙা বাঙা ও ভুতু এসে বুড়িকে সহযোগিতা করছে। আলোকিত হৃদয় বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা প্রতিটি অধ্যায় পড়ানোর পরই শিক্ষার্থীদের সহযোগিতামূলক দক্ষতাগুলো চর্চা করা হয়। 

কাইন্ডনেস ট্রি 
আলোকিত হৃদয় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের চারটি দল গঠন করে দেওয়া আছে। চারটি দল দুইটি কাইন্ডনেস ট্রিতে নিজেদের সহানুভূতির কাজগুলো চিরকুটে লিখে সেই ট্রিতে পাতা হিসেবে লাগিয়ে দেয়। মাস শেষে আমাদের শিক্ষকেরা যে গাছের পাতা ও সহানুভূতির কাজগুলো ভালো হয় সেই দল দুইটিকে বিজয়ী ঘোষণা করে দেয় ও স্বীকৃতি হিসেবে বিজয়ী দলের নাম ট্রিয়ের নিচে লিখে রাখা হয়। 

কাইন্ডনেস চেক্লিস্ট তৈরি করুন
প্রতি দিন ও প্রতি সপ্তাহে একটা চেকলিস্ট তৈরি করুন। চেকলিস্টে লিখতে পারেন, সে তার ছোট ভাই/বোনকে যে কোনো কাজে সহযোগিতা করেছে কিনা, বাবা-মাকে সহযোগিতা করেছে কিনা, পরিবারের বাইরে কাউকে সহযোগিতা করেছে কিনা, করে থাকলে কী ধরনের সহযোগিতা করেছে তা লিখে রাখতে পারে। প্রতি সপ্তাহে ভালো ও সেরা কাজগুলো শিক্ষার্থীরা উপস্থাপন করতে পারে এবং অন্যরা যেন আরো নতুন নতুন কাজ করে সেই জন্য উৎসাহ দিন। 

সব কাজেই কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করানোর অভ্যাস করুন 
কারো কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পেলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ছোট ছোট বাক্যেও আমরা চর্চা করতে পারি। যেমন ধন্যবাদ, আপনার মঙ্গল হোক, শুভ কামনা রইল ইত্যাদি। সহানুভূতিশীল সমাজ গঠনের পূর্ব শর্ত হলো, সহানুভূতিশীল পরিবেশ তৈরি করা। এই জন্য আমরা সব জায়গায়ই একটি সহানুভূতিশীল হওয়ার চেষ্টা করবো। 


এসএম
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন