ভোলা সদর হাসপাতালে খাবার পানির কষ্টে রোগীরা


ভোলার ২২ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতের গুরু দায়িত্ব জেলা সদরে অবস্থিত ২৫০ শয্যার ভোলা সদর হাসপাতালের। কিন্তু, এই হাসপাতালে বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
বৈশাখের তীব্র গরমে হাসফাঁস করা রোগী ও রোগীর স্বজনদের হাসপাতালের বাইরে থেকে পানি এনে পান করতে হচ্ছে। এতে করে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা। ২৫০ শয্যার ভোলা সদর হাসপাতালের তিনটি টিউবওয়েলের দুটি টিউবওয়েল বিকল ও চুরি হওয়ায় ও অপরটি থেকে পানি বের হতে সমস্যা হওয়ায় পানির এই সংকট। এতে প্রতিদিন দুর্ভোগে পড়ছেন হাসপাতালের ভর্তি প্রায় চার শতাধিক রোগী ও তাদের স্বজনরা। বিশেষ করে রাতের বেলা রোগীর ভোগান্তি আরও বাড়ে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ভোলা সদর হাসপাতালের ভেতরে পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ডের সামনে থাকা টিউবওয়েলের পাইপটাই শুধু দেখা যায়, টিউবওয়েল হাওয়া। চুরি হয়ে গেছে কত আগে কেউ বলতে পারে না। ঘুরে দেখা গেলো, মেডিসিন ওয়ার্ডের সামনে থাকা টিউবওয়েলটিও বিকল। এটিরও হাতল দেখা যায় না। আছে কি নেই কেউ জানে না।
হাসপাতালের নতুন ভবনের সামনে আরেকটি টিউবওয়েল আছে, সেটিও নষ্টের অবস্থায়। অনেক শক্তি দিয়ে চাপতে হয়, পানি পড়ে কম। তারপরও এখানেই রোগীর স্বজনদের চাপ। বাধ্য হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা বেশিরভাগ রোগীর স্বজনদের দোকান থেকে বোতলজাত পানি কিনে খেতে হচ্ছে। তবে যাদের সামর্থ কম, তাদের জন্য এই চাপ দুঃসহ হয়ে উঠছে।
বাকি আয়োজন দেখে মনে হয় এখানে একটা টিউবওয়েল ছিল কোনও এক সময়। কিন্তু সেটার ভূগর্ভস্থ পাইপটি ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।বাকি আয়োজন দেখে মনে হয় এখানে একটা টিউবওয়েল ছিল কোনও এক সময়। কিন্তু সেটার ভূগর্ভস্থ পাইপটি ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। হাসপাতাল ভর্তি হওয়া রোগী তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন সদর হাসপাতালে দুই শতাধিক রোগী ভর্তি থাকেন। আর প্রায় চার শতাধিক রোগী আউটডোরে চিকিৎসা নেন।
হাসপাতালে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী জানান, হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া রোগী ও স্বজনদের বিশুদ্ধ খাবার পানির চাহিদা মেটাতে হাসপাতালে ব্যবস্থা আছে তিনটি টিউবওয়েলের। এর মধ্যে দুটি টিউবওয়েল বিকল হয়ে পড়ে আছে অনেকদিন ধরে। রোগীরা প্রতিদিন পানি আনার কষ্টের কথা ওয়ার্ডে বলাবলি করে। কিন্তু, স্যারেরা কেউ সে কথা গায়ে মাখে না।
বাংলাবাজার থেকে চিকিৎসা নিতে আসা মো. মাইনুদ্দিন জানান, হাসপাতালে ভেতরে পাইপের পানি আছে, তবে খাবার পানির কোনও ব্যবস্থা নেই। বাইরে দূরে একটি টিউবওয়েল আছে তাও নষ্ট, এত কম পানি ওঠে যে দুই লিটারের একটা বোতল ভরতে আধাঘণ্টা সময় লাগে।
ডায়রিয়া আক্রান্ত মেয়েকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করাতে ভেলুমিয়া থেকে এসেছেন ফয়জুন নেছা। তিনি বলেন, মেয়েকে নিয়ে দুইদিন আগে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। রাতে খাবার পানির দরকার। কিন্ত, হাসপাতালের ভেতরে টিউবওয়েল নষ্ট থাকায় পানি সংগ্রহ করতে পারিনি। ভোরবেলা বাসায় ফোন দিলে বাসা থেকে বোতলে করে পানি নিয়ে আসে।
ভোলা জেলা সচেতন নাগরিক ফোরামের সদস্য সচিব মো. বাহাউদ্দিন জানান, সদর হাসপাতালে খাবার পানির কোনও ব্যবস্থা নেই। যা একটা টিউবওয়েল আছে তা অকেজো। সদর হাসপাতালে অতি দ্রুত বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহের জন্য পর্যাপ্ত টিউবওয়েল স্থাপন প্রয়োজন। তা না হলে প্রতিদিন যে হারে ডায়রিয়াসহ অন্যান্য রোগী হাসপাতালে আসছে তারা বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটে পড়ে বড় ধরনের বিপর্যয়ের সৃষ্টি হবে।
অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতাল ক্যাম্পাস থেকে দুই দুটো টিউবওয়েল ও যন্ত্রাংশ অনেক আগেই চুরি গেলেও একেবারেই নড়চড় নেই কর্তৃপক্ষের।হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক তার ক্যাম্পাসের খাবার পানির কল চুরি যাওয়ার ঘটনা নিজে না দেখে ‘অবহিত’ হয়েছেন।
হাসপাতালে রোগীর সেবা করতে এসে পানির জন্য ছোটাছুটি করতে থাকা শোভন নামে এক তরুণ বলেন, হাসপাতালের সংস্কার কাজে প্রতিবছর কোটি টাকার বিলে নিশ্চয় নিয়মিতই স্বাক্ষর পড়ে কর্তৃপক্ষের। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর ও গণপূর্ত বিভাগ প্রতিবছর হাসপাতাল সংস্কারে বিশাল বিশাল বিল বানায়। তবে নষ্ট ও চুরি যাওয়া টিউবওয়েলগুলো তীব্র গরমের সময়েও রোগীদের কষ্ট দেখে নিজেদের উদ্যোগে সংস্কার বা মেরামত হয় না। আদৌ কী হবে কেউ জানে না।
জানতে চাইলে ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. সিরাজ উদ্দিন বলেন, ‘‘আমি পানি সমস্যার বিষয়টি সম্পর্কে ‘অবগত’ হয়েছি। তবে হাসপাতালে আমাদের নিজস্ব সাপ্লাইয়ের পানি আছে। ধোয়ামোছাসহ অন্যান্য কাজগুলোতে আমাদের সাপ্লাইয়ের পানি ব্যবহার করা হয়।’’
রোগীর স্বজনরা খাবার পানির জন্য এসব টিউবওয়েলের ওপর নির্ভর করেন, কিন্তু সেগুলো দীর্ঘদিন ধরেই নষ্ট ও চুরি হয়ে গেছে জানালে তিনি বলেন, ‘জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের ইঞ্জিনিয়ারকে ‘অবগত’ করা হয়েছে হাসপাতালের বিকল টিউবওয়েলগুলো মেরামত করার জন্য।’
তবে তিনি যে ভুল জায়গায় জানিয়েছেন সেটা নিজেই সংশোধন করে বলেন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর থেকে আমাদের জানানো হয়েছে, হাসপাতালের বিকল টিউবওয়েলগুলো মেরামতের দায়িত্ব গণপূর্ত বিভাগের। তাই আমরা পরে গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলীকে ‘অবহিত’ করেছি। তারা সমাধানের জন্য সঠিক পদক্ষেপ নেবে বলে আশ্বস্ত করেছেন।
এইচকেআর
