ঢাকা রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

Motobad news

ফ্লাইওভার নির্মাণ : ঢাকায় ব্যয় ৬ গুণ বেশি

ফ্লাইওভার নির্মাণ : ঢাকায় ব্যয় ৬ গুণ বেশি
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

ভারত, মালয়েশিয়া, চীনসহ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে ফ্লাইওভার নির্মাণ ব্যয় বেশি। এসব দেশে কিলোমিটারপ্রতি যে খরচ বাংলাদেশে তার চেয়ে দুই থেকে ছয় গুণ পর্যন্ত বেশি হয়। দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে এখানে ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্পগুলোর ব্যয় একটি অন্যটিকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

ভারত, মালয়েশিয়া ও চীনের কয়েকটি ফ্লাইওভার নির্মাণ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রতি কিলোমিটারে তাদের ব্যয় হচ্ছে গড়ে ৫০ কোটি টাকা। সেখানে বাংলাদেশে ১০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার বেশি খরচ। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করে বাংলাদেশে ব্যয়ের পার্থক্য প্রায় এমনই দেখা গেছে।

জানা গেছে, মাত্রাতিরিক্ত দুর্নীতি, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, জমি অধিগ্রহণে তিনগুণ ক্ষতিপূরণ দেওয়া, প্রকল্পের সমীক্ষা যথাযথভাবে শেষ না করেই উন্নয়ন কাজে হাত দেওয়া হয়। বিদেশ থেকে উচ্চমূল্যে আমদানিকৃত নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারে ব্যয় অনেক বেড়ে যাচ্ছে। একই চিত্র অবকাঠামো নির্মাণে ঠিকাদার ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগেও। প্রকল্প বাস্তবায়নে দেশি দক্ষ প্রতিষ্ঠান গড়ে না ওঠায় বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হচ্ছে।

এছাড়া নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে না পারায় খরচ বাড়ছে। দেশের পরিকল্পনাবিদ, প্রকৌশলী, স্থপতিরা এ কারণগুলোকে সমর্থন করছেন। তারা মনে করেন, সরকার চাইলে ফ্লাইওভার নির্মাণের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ব্যয় বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. সামছুল হক বলেন, ভারত, মালয়েশিয়া, চীনসহ আশপাশের দেশের চেয়ে বাংলাদেশে ফ্লাইওভারের নির্মাণ ব্যয় বেশি। নানা কারণে এমন অস্বাভাবিক ব্যয় হয়ে থাকে। প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়া। দ্বিগুণ, তিনগুণ সময়েও বেশির ভাগ ফ্লাইওভার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়।

আর ঢাকা একটি অপরিকল্পিত শহর। এখানে ফ্লাইওভার তৈরির জন্য আগে কোনো জায়গা বরাদ্দ রাখা হয়নি। এজন্য নতুন করে বিভিন্ন সংস্থার সেবা সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে পুনঃস্থাপন করতে হয়। এতে ব্যয় বাড়ে। তিনি বলেন, কাজ শুরুর আগে সমীক্ষায় ক্রটি থাকছে। এতে কাজ শুরু ও বাস্তবায়নে দেরি হয়। আর প্রকল্পের সময় বাড়লে ব্যয় বাড়বেই।

জানা গেছে, পরিকল্পনা পর্যায় থেকেই দেশে ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্পের গলদ শুরু হয়। যানজট নিরসনের কথা বলে ঢাকায় নেওয়া পরিকল্পনায় ব্যয় ধরা হয় আকাশচুম্বী। যেনতেন সমীক্ষার ওপর প্রকল্প প্রণয়ন শেষে, তড়িঘড়ি শুরু হয় কাজ। ঠিকাদারের সময়ক্ষেপণের সংস্কৃতি তো আছেই। ফলে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হয় না।

এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সুবিধাভোগীদের কমিশন বাণিজ্য, ঢাকায় অপরিকল্পিত পরিষেবা লাইনে স্থানান্তরে সময় ও ব্যয় বৃদ্ধি এ অবস্থার তৈরি হয়েছে। এ সুযোগ নিয়ে থাকে প্রকৌশলী ও ঠিকাদারদের একটি অংশ। অথচ বাংলাদেশের শ্রমিক ও নির্মাণ সামগ্রীর ব্যয় তুলনামূলক কম। এ কারণে খরচ কম হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে এর প্রতিফলন নেই।


এমবি
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন