ঢাকা শনিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

Motobad news

রাজবাড়ীতে কবর থেকে তুলে মরদেহে আগুন

রাজবাড়ীতে কবর থেকে তুলে মরদেহে আগুন
ছবি: সংগৃহীত 
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে ইমাম মেহেদী দাবি করা বিতর্কিত নুরাল পাগলের মরদেহ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে দিয়েছেন স্থানীয় একদল মানুষ।

শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পদ্মার মোড় এলাকায় প্রকাশ্যে পেট্রোল ঢেলে মরদেহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এরআগে জুমার নামাজের পর পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী শহীদ মহিউদ্দিন আনসার ক্লাবে জড়ো হয়ে তারা বিক্ষোভ করেন।

এসময় বিক্ষুদ্ধ জনতা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পুলিশের দুটি গাড়ি ভাঙচুর করে। তারা নুরাল পাগলের বাড়ি ও দরবারের গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। 

পরে ভবন ও দরবার ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করে। এতে দরবারের ভক্তরাসহ প্রায় অর্ধশত মানুষ আহত হয়েছেন। আহতদের উদ্ধার করে গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, রাজবাড়ী সদর ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ঘটনার পর সেনাবাহিনী ও র‌্যাব গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলেও বিক্ষুব্ধরা বাড়ির অদূরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। এসময় ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা কার্যক্রম চালাতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন।

পরে পুনরায় বিক্ষুদ্ধরা দরবারে প্রবেশ করে নুরাল পাগলের কবর থেকে কফিনসহ মরদেহ তুলে পদ্মার মোড় এলাকায় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এসময় অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এদিকে এ ঘটনায় ফরিদপুরে রাসেল মোল্লা (২৮) নামে এক যুবক নিহতের খবর পাওয়া গেলেও রাজবাড়ী প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়নি। রাসেল মোল্লা রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দেবগ্রামের জুট মিস্ত্রিপাড়ার আজাদ মোল্লার ছেলে। তিনি নুরাল পাগলের দরবারের ভক্ত বলে জানা গেছে।

বিক্ষুদ্ধ জনতার দাবি, ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কথাবার্তা ও কাজকর্ম করতো নুরাল পাগল। তিনি নিজেকে ইমাম মেহেদী দাবি করেছেন। কালিমাকে বিকৃতি করেছেন ও নিজেকে খোদা দাবি করতেন। এছাড়া তিনি পবিত্র কোরআনকে ভোজ পাতা দাবি করতেন। এর মাধ্যমে তিনি মুসলমাদের হৃদয়ে আঘাত করেছেন। তার মৃত্যুর পর পবিত্র কাবার আদলে তৈরি করা ১২ ফুট উঁচু বেদিতে শরীয়ত পরিপন্থীভাবে দাফন করা হয়।

তাদের দাবি, উঁচু কবরের কবর নিচু করা, কবরের রঙ পরিবর্তন ও ইমাম মেহেদী লেখা দরবার নাম অপসারণের দাবি জানানো হচ্ছিলো। তবে কবরের রঙ ও ইমাম মেহেদী লেখা সাইনবোর্ড অপসারণ করলেও কবর নিচু করা হয়নি। এজন্য পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বিক্ষোভ হয়। এসময় নুরালের আস্তানা ও বাড়িতে হামলা করে মরদেহ তুলে জনসম্মুখে পোড়ানো হয়েছে।

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদুর রহমান জানান, নুরু পাগলের বাড়ি ও দরবারে হামলা করে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়েছে। এসময় তার (ইউএনও) গাড়িসহ পুলিশের দুটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থলে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও র‌্যাব রয়েছে।

রাজবাড়ী পুলিশ সুপার মো. কামরুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। স্থানীয় জনতা জেলা ঈমান আকিদা রক্ষা কমিটির ব্যানারে মহিউদ্দিন ক্লাব মাঠে সমাবেশে ছিল। সেখান থেকে হঠাৎ কিছু লোক দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পাশে ডিউটি থাকা পুলিশের ওপর হামলা করে পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে। সে সময় তারা ইউএনওর গাড়ি ভাঙচুর করে। পরবর্তীতে তারা উশৃঙ্খলভাবে নুরাল পাগলের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ ঘটায়।

তিনি আরও বলেন, প্রথম দফায় ফায়ার সার্ভিস এসে চলে গেলেও পরে আগুন নেভানোর কাজ করেছে। এছাড়া হতাহতের সময় নির্দিষ্ট কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। আমরা শুনেছি মরদেহ এখান থেকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে। তবে এখন পর্যন্ত নিহতের কোনো খবর নেই।

রাজবাড়ী সিভিল সার্জন ডা. এস এম মাসুদ জানান, এ ঘটনায় রাজবাড়ী থেকে ২২ জনকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এরমধ্যে দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তবে দুজনের মৃত্যুর খবর শুনতে পেলেও অফিসিয়ালি কেউ আমাকে নিশ্চিত করেননি। পুলিশের রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছি না।

গত ২৩ আগস্ট ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গোয়ালন্দ পাক দরবারের পীর নুরাল হক নুরাল পাগলের মৃত্যুর পর তার প্রতিষ্ঠিত গোয়ালন্দ দরবারের ভেতরে কাবা শরীফের আদলে রঙ করা মাটি থেকে প্রায় ১২ ফুট উঁচু বেদিতে দাফন করা হয়। এরপর থেকে কবর নিচু, রঙ পরিবর্তন ও ইমাম মেহেদী দরবার শরীফ লেখা সাইনবোর্ড অপসারণের দাবি করে শুক্রবার জুমার নামাজের পর বিক্ষোভের ঘোষণা করেন স্থানীয়রা।
 


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন