ঢাকা রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

Motobad news

‘ভারতের কাছে আমাদের চিরকৃতজ্ঞ থাকা উচিত নয়’

‘ভারতের কাছে আমাদের চিরকৃতজ্ঞ থাকা উচিত নয়’
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভে অবদানের জন্য ভারতের কাছে বাংলাদেশের চিরকৃতজ্ঞ থাকা উচিত নয় বলে মনে করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সাবেক সচিব আকবর আলি খান।

তিনি বলেন, অবশ্যই ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভে ভারতের অবদান রয়েছে। সে জন্য আমাদের ভারতের কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকা উচিত নয়। এ কথা কিন্তু ১৯৭১ সালে শোনা যেত না, সম্প্রতি উঠেছে। আমি এর সোজা জবাব দিতে চাই। ভারতও জানে, বাংলাদেশও জানে যে চিরন্তন কৃতজ্ঞতাবোধ পৃথিবীর কোথাও নেই, এটা ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব নয়। এটা জাতির সঙ্গে জাতির, রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের বন্ধুত্ব। রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের বন্ধুত্ব তখনই হবে যখন আমাদের স্বার্থ অভিন্ন হবে। আর যদি আমাদের স্বার্থের ক্ষেত্রে সংঘাত থাকে, তাহলে চিরন্তন কৃতজ্ঞতাবোধ কোনো দিনই হবে না।

সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে একটি আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনা সভাটি সোমবার দুপুরে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠিত হয়।

ড. আকবর আলী খান স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশের সার্বিক অবস্থা এবং ভবিষ্যৎ পথরেখার পদক্ষেপসমূহ কী হতে পারে সেটি আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, ৫০ বছরে বাংলাদেশের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সূচক নিয়ে গর্বের জায়গা থাকলেও দারিদ্র্যের আন্তর্জাতিক মাপকাঠিতে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, বাংলাদেশের ৩০-৪০ শতাংশ মানুষ এখনো দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করে। এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের আরও সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার বলে তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

তিনি বলেন, দেশের উন্নয়ন হলেও উন্নয়ন সবদিকে সমানভাবে হয় নি। যেকোনো সময় যেকোনো দিকে আমরা পিছিয়ে পড়তে পারি। তিনি আরও বলেন দুর্বলতাগুলোকে স্মরণে রেখে আমাদের সমন্বিতভাবে এগিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদ চূড়ান্তভাবে অর্জিত হয়েছে। তবে এখন গণতন্ত্র এবং ধর্ম নিরপেক্ষতা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। গণতন্ত্র না থাকলে দেশে টেকসইভাবে ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষা করা সম্ভব নয়।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য নিয়ে চললেও, দুর্নীতির কারণে সমাজের সকল স্তরে সাম্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হচ্ছে না। দুর্নীতির লাগাম টেনে না ধরলে সমাজে অসঙ্গতি বেড়েই যাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এ সময় ড. আকবর আলী খান সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় দেশে বৈষম্য বেড়ে চলেছে বলেও মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, দেশে সুশাসনের অভাব রয়েছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার স্বপ্ন নিয়ে যে সমাজতন্ত্র রয়েছে, সে সমাজতন্ত্র হলো মানুষে মানুষের মধ্যে বিভেদ কমানো। বাংলাদেশে মানুষের মানুষের মধ্যে বিভেদ বেড়ে চলেছে। যে সব হিসাব আমাদের কাছে আছে, এই সব হিসাবের ভিত্তিতে দেখা যাচ্ছে যে, পৃথিবীতে যতগুলো দেশ আছে তার প্রায় ৬৫ ভাগ দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের আয় বৈষম্য রয়েছে। পৃথিবীর বাকি ৩৩ শতাংশ দেশে আয়ের যে ধরনের বৈষম্য আছে বাংলাদেশেও সেটা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এই বৈষম্য বেড়েছে গত ২৫ থেকে ৩০ বছরে। এর একটি কারণ হলো দেশে প্রচুর দুর্নীতি হচ্ছে, দুর্নীতির ফলে কালো টাকা এবং সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় আমাদের এখানে বৈষম্য বাড়ছে। এই বৈষম্যের দিকে যদি আমরা দৃষ্টি না দেই তাহলে আমাদের মধ্যে দেখা যাবে বিভিন্ন ধরনের গণ্ডগোল। সেজন্য আমরা যদি দেশের শান্তি চাই, দেশের অগ্রগতি চাই, তাহলে এই সমস্যাগুলোর দিকে দৃষ্টি দিতে হবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের তিন বীর সৈনিক- লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাফর ইমাম (বীর বিক্রম), মেজর জেনারেল (অব.) হেলাল মোর্শেদ খান (বীর বিক্রম), মেজর জেনারেল (অব:) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম (বীরপ্রতীক)। তারা অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধকালীন অভিজ্ঞতাও তুলে ধরেন।

সিজিএস চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী সভাপতিত্বে আয়োজিত এই আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান। অনুষ্ঠানে সিজিএস আয়োজিত ‘বাংলাদেশের ৫০ বছর’ শীর্ষক রচনা প্রতিযোগিতার বিজয়ীদেরকেও পুরষ্কৃত করা হয়।


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন