ঢাকা রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

Motobad news

স্বর্ণের দোকানে চুরির ঘটনায় বরিশালের সুমনসহ গ্রেপ্তার ৩

 স্বর্ণের দোকানে চুরির ঘটনায় বরিশালের সুমনসহ গ্রেপ্তার ৩
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

রাজধানীর কাকরাইলে অবস্থিত কর্ণফুলী গার্ডেন সিটিতে দুই দোকান থেকে ৭০০ ভরি স্বর্ণালংকার চুরির ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) রমনা বিভাগ। এসময় তাদের কাছ থেকে ২০১ ভরি স্বর্ণালংকার জব্দ করা হয়। গত ২৬ ও ২৭ ডিসেম্বর ঢাকা, বরিশাল ও ফরিদপুরে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে ডিবি।

গ্রেপ্তাররা হলেন ফরিদপুরের শাহিন মাতব্বর ওরফে শাহিন (৪৮), বরিশালের শৈশব রায় ওরফে সুমন (৩৫) ও রাজধানীর তাঁতিবাজারের স্বর্ণালংকারের ছোট ব্যবসায়ী উত্তম কুমার সুর (৪৫)। ডিবি জানায়, এই চুরির নেতৃত্ব দেয় শাহিন মাতব্বর। তবে শাহিন ও শৈশব ঢাকায় আসে চুরির ঘটনার ১৫ দিন আগে। তাদের তাঁতিবাজারের কল্পনা বোর্ডিংয়ে থাকার ব্যবস্থা করে দেয় উত্তম। এছাড়া, চুরির জন্য যা টাকা পয়সা খরচ হয়েছে তাও বহন করে উত্তম। তারা ওই বোর্ডিংয়ে থাকার সময় উত্তমকে সঙ্গে নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে রেকি করে। পরে অপেক্ষাকৃত দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থা মনে হওয়ায় তারা কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি মার্কেট বেছে নেয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী মার্কেটের দুইটি দোকানে চুরি করে ৭০০ ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়।

মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মিন্টু রোডে অবস্থিত ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার। তিনি বলেন, ১৮ ডিসেম্বর (শনিবার) কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি মার্কেটের মোহনা জুয়েলার্স ও বেস্ট অ্যান্ড ক্রিয়েশন জুয়েল অ্যাভিনিউ জুয়েলার্স নামক দুটি সোনার দোকানে প্রায় ৭০০ ভরি স্বর্ণালংকার চুরি হয়। এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের হয় রমনা থানায়। মামলা হওয়ার পর এ বিষয়ে ছায়া তদন্ত শুরু করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের রমনা বিভাগ।

 তিনি আরো বলেন, মার্কেটের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আমরা ছায়াতদন্তের শুরুতে চোরদের গতিবিধি শনাক্ত করতে সক্ষম হই। তদন্তে আমরা জানতে পারি শৈশব ও শামীম দুজনই নিজ নিজ এলাকায় চুরি ও ডাকাতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তাদের একদিন মনে হলো তারা ঢাকায় এসে কিছু করবে। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তারা তাদের পূর্বপরিচিত উত্তম রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে। পরে তারা তিনজন মিলে চুরির পরিকল্পনা করে।

এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, পরিকল্পনার অংশ হিসেবে উত্তম তাঁতিবাজারের কল্পনা বোডিংয়ে শাহিন ও শৈশবকে রাখে ঘটনার ১৫ দিন আগে। পরে তারা তিনজন মিলে রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে চুরি করার জন্য রেকি করা শুরু করে। তারা তাদের রেকিতে দেখে অন্য যেকোনো মার্কেটের তুলনায় কর্ণফুলী গার্ডেন সিটিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা তুলনামূলক কম। পরে তারা সেখানে চুরির পরিকল্পনা করে। ঘটনার চারদিন তারা মার্কেটিতে চেষ্টা করেও চুরি করতে ব্যর্থ হয়। পরে তারা ঘটনার দিন মার্কেটের পার্শ্ববর্তী একটি নির্মাণাধীন ভবন দিয়ে বেয়ে মার্কেটের একটি বাথরুমে প্রবেশ করে। বাথরুম থেকে তারা মার্কেটের ভেতর প্রবেশ করে দুই দোকানে চুরি করে ৭০০ ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে যায়।

 তিনি বলেন, গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পেরেছি, তারা সোনার পাশাপাশি একটি দোকান থেকে কিছু হিরাও চুরি করেছে। কিন্তু চুরি করে যাওয়ার সময় হিরা ও সোনা থাকা একটি ব্যাগ রাস্তায় পড়ে যায়। এর মধ্যে রাস্তা থেকে ২২ ভরি সোনা পাওয়া গেছে যা রমনা থানায় জমা রয়েছে। তবে আমরা বলতে চাই রাস্তা পড়ে যাওয়া সোনা ও হীরা কেউ যদি পেয়ে থাকেন তাহলে তাদের অনুরোধ জানাব, যেন তারা এসব জিনিস দ্রুত স্থানীয় থানায় জমা দিতে। যদি কেউ তা না করেন আর আমাদের তদন্তে যদি তাদের নাম বা খোঁজ পায় তাহলে চোরাই মাল রাখার দায়ে তাদের বিরুদ্ধেও আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

ডিবি প্রধান বলেন, আমরা তদন্তকালে আরো দেখেছি, কল্পনা বোর্ডিংয়ে চোররা যে উঠেছিল তারা কোনো ধরনের নাম এন্ট্রি করিনি। কিন্তু ডিএমপি থেকে সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে হোটেলে নাম এন্ট্রি করার। কল্পনা বোর্ডিংয়ে তাদের নাম এন্ট্রি করা থাকলে আমরা তাদের আরো সহজে ধরতে পারতাম। তবে এ বিষয়ে আমরা কল্পনা বোর্ডিংয়ের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করব। তবে আমরা আরো একটি বিষয় বলে রাখতে চাই, কেউ যদি মনে করে গ্রাম থেকে এসে ঢাকায় এসে চুরি করে সহজে চলে যেতে পারবেন বা পার পেয়ে যাবে সেটি হবে না। আমরা সব সময় এ বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখি।

চুরির স্বর্ণগুলো চোররা কি নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে ফেলেছিল নাকি দোকানে বিক্রি করে দিয়েছিল এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা কিছু স্বর্ণ দোকানে রেখেছিল আবার কিছু স্বর্ণ তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয়েছে। তবে তারা বলেছে কিছু স্বর্ণ রাস্তায় পড়ে গেছে। তাদের কাছ থেকে আমরা ২০১ ভরি সোনা জব্দ করেছি। তাদের রিমান্ডে আমরা পেলে বাকি সোনা কোথায় আছে তা জিজ্ঞাসাবাদ করে উদ্ধারের চেষ্টা করব। তিনি আরো বলেন, আরেকটি বিষয় বলে রাখতে চাই যেসব দোকানিরা চোরাই স্বর্ণ কেনেন তাদের বিরুদ্ধেও কিন্তু আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব যদি আমাদের তদন্তে তাদের নাম আসে। এছাড়া, বাংলাদেশ জুয়েলারি অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে সবাইকে বলব যে, কেউ যেন চোরাই জিনিস কিনবেন না। আর যদি কেউ কেনেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে অনেক দোকানি চোরাই সোনা কিনে গলিয়ে অন্য সোনা বানিয়ে ফেলেন। তবে আমরা তদন্তে তাদের নাম পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

তিনি বলেন, তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমরা শুনেছি যে কিছু স্বর্ণ পড়ে গেছে। তবে এই বিষয়গুলো আমরা জানার চেষ্টা করছি। কোনো দোকানও যদি তারা আরো স্বর্ণ বিক্রি করে থাকে তাহলে সেটা আমরা বের করার চেষ্টা করব জিজ্ঞাসাবাদ করে। মার্কেটের কেউ চোরদের সঙ্গে জড়িত আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখনো কারো নাম আমরা পাইনি তবে বিষয়টি তদন্ত করছি।

 


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন