ঢাকা সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫

Motobad news

ভিডিও ভাইরাল হয়েই মুখোশ খুলে গেলো কিলার সেলিমের

ভিডিও ভাইরাল হয়েই মুখোশ খুলে গেলো কিলার সেলিমের
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

বগুড়া : সিরিয়াল কিলার বাউল সেলিমের প্রকৃত নাম মো. হেলাল উদ্দিন। এলাকায় খুনি হেলাল নামে পরিচিত ছিল সে। বগুড়ার বিদ্যুৎ হত্যা মামলায় তাকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছেন আদালত।  এরপর থেকেই পলাতক ছিল। 

পরে বাউল বেশ ধারণ করে নিজের প্রকৃত নাম গোপন করে হয়ে উঠে বাউল সেলিম। চার বছর আগে সে ভৈরবে এসে খোদেজা নামে এক নারীকে বিয়ে করে। এরপর সেখানেই স্ত্রী খোদেজাকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতে শুরু করে। 

ভৈরবে আসার পর ‘ভাঙ্গা তরি ছেঁড়া পাল’ একটি গানের বাউলের মডেল হন। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইউটিউবে গানটি ভাইরাল হয়। আর এই ভাইরাল হওয়াই কাল হয় হেলালের। 

এই গানে তার ছবি দেখে তাকে এক ব্যক্তি চিনতে পারে। পরে ঘটনাটি ঢাকার র‍্যাবকে অবহিত করে। র‍্যাব দীর্ঘদিন তদন্ত করে তার খোঁজখবর নিয়ে বুধবার তাকে ভৈরব রেলস্টেশন থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

র‌্যাব জানায়, ভৈরব পৌর শহরের আমলাপাড়া এলাকার আবু তাহের মিয়ার একটি ছোট ঘরে সে তার স্ত্রীসহ ভাড়া থাকত। ভৈরবে ফকির নামে এলাকার লোকজনের কাছে পরিচিত সে। তার প্রকৃত নাম কেউ জানতো না। 

এলাকাবাসী জানায়, বাউল সেলিমের স্ত্রী খোদেজা বেগমের পৈতৃক বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল এলাকায়। দীর্ঘদিন ধরে খোদেজা ভৈরবে ভাড়া থাকে। ভিক্ষা করা তার পেশা। চার বছর আগে বাউল সেলিমের সঙ্গে তার পরিচয়। পরে খোদেজাকে বিয়ে করে সে। বিয়ের পর তারা দুজন ভৈরব পৌর শহরের পঞ্চবটি এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকত। আড়াইমাস আগে তারা স্বামী-স্ত্রী দুজন পঞ্চবটির বাসা ছেড়ে আমলাপাড়ার ভাড়া বাসায় উঠে। প্রতিদিন সকালে স্ত্রী খোদেজা ভিক্ষা করতে গ্রামে চলে যেত। আর বাউল সেলিম বাসা থেকে বের হয়ে রেলস্টেশনে চলে যেত। রেলস্টেশন ও ট্রেনে ট্রেনে গান গেয়ে যা আয় হত, তা দিয়ে সংসার চলত তার। 

স্ত্রী খোদেজা বেগম সারা দিন ভিক্ষা করে চাল যোগার করত। এভাবেই দুজনের সংসার চলেছে চার বছর যাবত। বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাউল সেলিম ভৈরব রেলস্টেশনে র‍্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়। 

গ্রেফতারের খবর পেয়ে তার স্ত্রী খোদেজা রেলস্টেশনে ছুটে যায়। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, তার স্বামী একটি খুনের মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। খবর শুনে হতবাক খোদেজা। 

শুক্রবার বেলা ১১টায় শহরের আমলাপাড়ার ভাড়া বাসায় গিয়ে দেখা যায়, বাউল সেলিমের বাসার দরজায় তালা ঝুলছে। তার স্ত্রী খোদেজা বেগম বাসায় নেই। রাতেও খোদেজা বাসায় ছিল। সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে। কোথায় গেছে কেউ বলতে পারছে না। 

বাসার মালিক মো. আবু তাহের মিয়া জানান, আমরা তার নাম জানতাম না। তবে ফকির নামে ডাকতাম তাকে। সে কখনো তার প্রকৃত নাম বলতো না। বাউল সেলিম আগে পঞ্চবটি এলাকায় ভাড়া থাকতো। আড়াইমাস আগে আমার বাসাটি মাসিক ১ হাজর ৩০০ টাকায় ভাড়া নেয়। দিনের বেলায় সে বাসায় থাকত না। স্ত্রী ভিক্ষা করে। প্রতিদিন সকালে দুজনই বাসা থেকে বাইরে বেরিয়ে যেত। বাসায় ফিরত সন্ধ্যার পর। 

প্রতিবেশি চায়ের দোকানদার মোরশেদ মিয়া জানান, এত বড় সিরিয়াল কিলার ছদ্মবেশে ভৈরবে থাকত তা আমরা কখনও টের পায়নি। আমরা জানতাম সে রেলস্টেশনে ও ট্রেনে ট্রেনে গান গাইত। সবাই জানত এ কথা। সে আধ্যাত্মিক গান গাইত। আমিও তার গান শুনেছি। ভাল গান গায় সে। তার স্ত্রী ভিক্ষা করত। র‍্যাবের হাতে আটকের পর জানতে পারি তার খুন ও সাজার কথা।

মিজান মিয়া আরেক প্রতিবেশি বলেন, বাউল সেলিম তার নাম আমরা জানতাম না। তাকে রেলস্টেশনে গান গাইতে দেখতাম। গান গাইলে লোকজন ৫-১০ টাকা দিত। তাকে র‍্যাব আটক করলে তার স্ত্রীর কাছে সব ঘটনা জানতে পারি।

এই সিরিয়াল কিলারের বাউল হওয়ার কাহিনী যেন রূপকথার গল্পকেও হার মানিয়েছে। ২০০১ সালে বগুড়ার চাঞ্চল্যকর বিদ্যুৎ হত্যা ও ২০০৬ সালে রবিউল হত্যার আসামি এই বাউল সেলিম। সে একটি চুরির মামলায়ও জেল খেটেছে বলে জানায় র‍্যাব।


এসএমএইচ
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন