ঢাকা মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫

Motobad news

উপকূলজুড়ে গোলের গুরের ব্যাপক চাহিদা

উপকূলজুড়ে গোলের গুরের ব্যাপক চাহিদা
গোলপাতা থেকে সংগ্রহ রস
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় গুড়ের তৈরি পায়েস কিংবা মুখরোচক খাবার পছন্দ করেন না এমন মানুষের জুড়ি মেলা ভাড়। কিন্তু মিষ্টিতে সুগার থাকায় সুস্বাদু বাহারি রকম খাবার খেতে পারেন না অনেকেই। তবে প্রকৃতির সৃষ্ট গোল বাগান থেকে আহরিত রস কিংবা গুড়ে সুগার কম থাকায় দিনে দিনে ক্রেতাদের কাছে এর কদর বেড়েছে কয়েকগুন। এর চাহিদা বাড়লেও ক্রমশই ধ্বংস করা হচ্ছে বাগান।

ফলে বাগানের পাশাপাশি কমছে গাছিদের সংখ্যাও। গোল বাগান বিনষ্টের ফলে গুড় উৎপাদন কমে যাওয়ায় এখন অনেক গাছিরাও করেছেন পেশার পরিবর্তন। ফলে রাষ্ট্রীয় ভাবে বাগান রক্ষা ও নদীর তীর কিংবা লোনা জলাশায়ে গোলগাছ বনায়নের দাবী গোলচাষী এবং গাছিদের। গুড়ের উৎপাদন কমে যাওয়ায় গোলগাছ সংরক্ষনের দাবি কৃষি বিভাগের।

কলাপাড়ার বিস্তীর্ণ লোনা জলভূমিতে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠেছে গোল বাগান। এই বাগান থেকেই বছরের প্রায় ৪ মাস সময় ধরে দুই দশক যাবৎ রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরীর মাধ্যমে জীবন জীবিকা চলছে প্রায় ৮ শতাধিক পরিবারের। শীতের শুরুতেই বিকালে গাছের ডগা কেটে হাড়ি পাতেন গাছিরা। রাতভর হাড়িতে জমা রস কাকডাকা ভোরে সংগ্রহ করেন তারা। পরে পাতালে জাল দিয়ে কঠোর পরিশ্রমের মধ্যেদিয়ে তৈরী করা হয় গুড়। আর এসব গুড় গাছিরা বিক্রি করছেন থেকে দেড়শ থেকে দুই’শ টাকা কেজি দরে। বিশেষ করে রোগাক্রান্ত মানুষের কাছে লবনাক্ত এই গুড়ের চাহিদা অনেক।

পৌর শহরের বাসীন্দা রানী বেগম জানান, আমার ডায়াবেটিসের জন্য সব ধরনের মিষ্টি খাওয়া নিষিদ্ধ করেছেন চিকিৎসক। তবে লবনাক্ত গোল গুড়ে সুগার কম থাকায় অমি মাঝে মধ্যেই গোলের গুড় সীমিত খেতে পারি। আমার তাতে সমস্যা হয়না। এদিকে এই গুড়ের ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বাগান কমে যাওয়ায় কাঙ্খিত রস সংগ্রহ করতে পারছেন না গাছিরা । এছাড়া বাগান ধ্বংসের ফলে রোজগার কমে যাওয়ায় পেশার পরিবর্তন করছেন অনেক আহরনকারিরা।

নীলগঞ্জ ইউপির নবীপুর গ্রামের গাছি হরি নারায়ন মিত্র (৮৫) জানান, তার পূর্ব পুরুষ থেকে প্রায় ১৫০ বছর ধরে এই পেশায় নির্ভরশীল হয়ে জীবীকা নির্বাহ করে আসছেন। দিনে দিনে গোলের গুড়ের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। বিশেষ করে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীরা বাড়িতে গিয়ে অগ্রিম টাকা দিয়ে আসেন গুড়ের জন্য। কিন্তু ক্রমাগত বাগান ধংসের ফলে এখন ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে পারছেন না।
গাছির স্ত্রী পারুল মিত্র ৭০ বলেন, স্বামীর সাথে দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে গুড় তৈরিতে কঠোর পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে যোগান দিয়ে আসছেন।

কিন্তু বর্তমানে গোল গাছের সঙ্কটে তাদের পেশা প্রায় পরিবর্তনের দিকে ঝুঁকছে। তিনি বলেন, এর আগে আমার ছেলে মেয়ে ও পুত্রবধুও এই কাজে সংশ্লিষ্ট ছিলো। তারা এখন পেশার পরিবর্তন করে ভিন্ন পেশায় যোগ দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, গাছিরা বলছেন প্রকৃতি রক্ষা এবং ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে বনায়নের পাশাপাশি গোলগাছ সংরক্ষনের কোন বিকল্প নেই। খুব দ্রুতই সরকারের উদ্যোগ নেয়া উচিৎ।

কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এমআর সাইফুল্লাহ জানান, গোলগাছ মানুষের ঘরনির্মাণসহ প্রকৃতি রক্ষায় একটি বড় ভূমিকা পালন করে। এছাড়া গুড়থেকে বিশাল একটা অর্থ আয়ের পাশাপাশি হাজারো মানুষ এর উপর নিভর্রশীল হয়ে জীবীকা নির্বাহ করে। এমনকি ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষ সহনশীল পরিমানে গোলগুড় খেতে পারে বলে আমরা জানতে পেরেছি। গোলবাগান রক্ষায় আমরা উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। যাতে বাগান রক্ষায় পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়।

পটুয়াখালী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, গোলবন সংরক্ষনসহ বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় আন্ধারমানিক নদী তীরসহ লোনা জলভূমিতে গোলচারা রোপন করা হবে।


কেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন