ঢাকা সোমবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

Motobad news

চরফ্যাশন ইউএনওকে মন্ত্রণালয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ

 চরফ্যাশন ইউএনওকে মন্ত্রণালয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে তিনদিন বন্দী রাখার পর নছিমন চালক আরিফকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৬ মে) নিজ জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় নিশ্চিত করেছেন ইউএনও রুহুল আমিন। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবারই আমি নছিমন চালককে ছেড়ে দিয়েছি। তার কাছ থেকে কোন ক্ষতিপূরণ, মুচলেকা আদায় করা হয়নি। এমনকি অভিভাবকের আসার জন্যও অপেক্ষা করিনি। 

রুহুল আমিন বলেন, আমি খুব চাপের মধ্যে রয়েছি ভাই। চাপে পড়েই জরিমানা, মুচলেকা বা অভিভাবকের আসার অপেক্ষা না করে নছিমন চালক আরিফকে ছেড়ে দিতে হয়েছে। মানুষ সবাইতো সব কিছু বোঝে না, আমি আসলে এই কাজটি না বুঝে করেছি।

চরফ্যাশনের ইউএনও বলেন, নছিমন চালক আরিফকে কেন ইউএনও অফিসে আটকে রেখেছি তার কারন দর্শাতে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে নোটিশ এসেছে। বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে আমাকে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে। 

বর্তমানে লিখিত জবাব প্রস্তুত করছেন উল্লেখ করে বলেন, এই গোলমালটি পাকিয়েছে আমার অফিসেরই স্টাফরা। তারাই সাংবাদিকদের জানিয়েছে। আর শেষে চাপে পড়তে হলো আমাকে। 

রুহুল আমিন বলেন, আমিতো অমানবিক কোন কাজ করিনি। তাকে মারধর বা কারাদন্ড দেইনি। শুধু আটকে রেখেছি। যেন তার পিতামাতা আসেন। আসলে তাদের হাতে তুলে দিব। কিন্তু আটককৃত নছিমন চালক ‘নেশাখোর’ হওয়ায় তার মা বাবাও আসেনি। 

আমিতো কেবলমাত্র জরিমানা আদায় করতে চেয়েছিলাম। এমনকি নছিমন চালক ধার-দেনা করে ২০ হাজার টাকা এনেছিলেন ক্ষতিপূরণের জন্য। কিন্তু আমি মানবিক কারনে সেই টাকা রাখিনি। 

ওদিকে আরিফ রাতেই ভোলা সদর উপজেলার নিজ বাড়িতে ফিরেছে বলে জানিয়েছেন। ছেড়ে দেওয়ার আগে তার কাছ থেকে একটি ভিডিও ধারণ করে রাখা হয় বলে আরিফ জানান, ইউএনও অফিসের লোকজন ভিডিওটি ধারণ করেন। তারা আরিফের মুখ থেকে স্বীকারোক্তি রাখেন যে ইউএনও অফিসে শুধু আটকে রেখেছে। কোন মারধর করেনি, নিয়মিত খাবার দিয়েছে। 

আরিফ বলেন, এটি সত্য যে আমাকে মারধর করেনি কেউ। কিন্তু আটকে রাখায় এই চারদিন আটকা থাকতে খুব কষ্ট হয়েছে। আরিফ বলেন, গরিবের উপর এই অত্যাচারের বিচার আল্লাহর উপর দিয়েছি। এই দুনিয়ায় কোন বিচার নাই। আমার ওই ইউএনওর উপরও কোন রাগ নাই। 

আরিফ ভোলা সদরের ৭ নং ওয়ার্ড চরসামাইয়া ইউনিয়নের বজলু মেম্বার বাড়ির বাসিন্দা। তার পিতার নাম মোঃ ইউসুফ এবং মা বকুল বিবি। ইউসুফ পেশায় দিন মজুর। আরিফ ৫ বছর আগে বিয়ে করেন। তার ২ বছর বয়সী এক কন্যা রয়েছে। মেয়ের নাম হাবিবা। 

আরিফের পিতা ইউসুফ বলেন, আরিফ বাংলা বাজার এলাকায় মাছের ব্যবসা করেন। কিন্তু করোনার কারনে ব্যবসা খারাপ হওয়ায় ভাড়ায় নছিমন চালায়। ওইদিনও ভাড়ায় নছিমন চালাচ্ছিল। তাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পরের দিন চরফ্যাশন উপজেলার ইউএনও অফিসে গিয়েছিলাম। তখন ইউএনও স্যার গাড়ির ড্রাইভারের সাথে কথা বলতে বলেন। ড্রাইভার আমাদের জানান, ক্ষতি তিন লাখ টাকার হয়েছে; তবে আমাদের এক লাখ টাকা দিতে হবে। আমরা ২০ হাজার টাকা দিতে চেয়েছি। কিন্তু নেননি। পরের দিন আর যাইনি। আরিফ পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে সবার বড়। 

আটকের পর পরিবারের কষ্ট হয়েছে উল্লেখ করে ইউসুফ বলেন, ওর স্ত্রী সন্তান আমরা এক সাথেই থাকি। ওকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার পর কষ্টতো হয়েছিই। যেভাবেই হোক দুইজনে আয় করতাম। একজন না থাকায় বাড়তি চাপ ছিল আমার ওপরে।  

ওদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চরফ্যাশনের ইউএনও রুহুল আমিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের ছাত্র। ৩১ তম বিসিএসে তিনি নিয়োগ পান। তার মূল বাড়ি পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলায়। 

প্রসঙ্গত, সোমবার (০৩ মে) ভোলা সদর উপজেলা থেকে চরফ্যাশনে যাচ্ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন। সদর উপজেলার বাংলাবাজার এলাকায় ইউএনওর গাড়ির সঙ্গে সদর উপজেলার বাসিন্দা আরিফের নছিমনের ধাক্কা লাগে। এতে দুটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দুর্ঘটনার পর নছিমনচালককে আটক করেন ইউএনও। তাকে সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় চরফ্যাশন উপজেলায়। প্রথমে তাকে থানায় সোপর্দ করা হয়। কিন্তু তাতে ক্ষতিপূরণ উসুল হবে না বলে থানা থেকে এনে ইউএনও কার্যালয়ের একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। তিনি জানান, মন্ত্রণালয়ের একটি ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দিতে সোমবার তিনি ভোলা সদরে গিয়েছিলেন। ফেরার পথে এই দুর্ঘটনা ঘটে।


টিএইচএ/
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন