আয়া সোফিয়ার প্রাচীন মাদরাসা উদ্বোধন করলেন এরদোয়ান

উসমানীয় শাসনামলে ইস্তাম্বুলের প্রথম মাদরাসা ছিল বিখ্যাত আয়া সোফিয়া ফাতিহ মাদরাসা। প্রায় ৯ দশক আগে ভেঙে ফেলা মূল কাঠামোর ওপর তা পুনর্নির্মাণ করা হয়। গত শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে তা উদ্বোধন করেন।
১৪৫৩ সালে ইস্তাম্বুল বিজয়ী সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদ আল ফাতিহ এর নামানুসারে এ মাদরাসার নামও ফাতিহ রাখা হয়। সেই সময় আয়া সোফিয়াকে মসজিদে রূপান্তরের পর গির্জার যাজকদের বাসস্থান হিসেবে ব্যবহৃত এ স্থাপনাকে মাদরাসা করা হয়েছিল।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান বলেন, ‘এ শহরে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ফিরিয়ে দিতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত, যার চিহ্ন ইচ্ছাকৃতভাবে মুছে ফেলা হয়েছে। তারা এই জায়গা ভেঙে ফেলেছে এই অজুহাতে যে তা পুরো দৃশ্য অবরুদ্ধ করেছে। এরপর ঐতিহাসিক এ স্থানটি নিঃশব্দে ধ্বংস করা হয়। ’
তিনি বলেন, ‘আমরা নিজেদের মহিমান্বিত অতীতকে বর্তমান ও ভবিষ্যতে ধারণ করে তা আমাদের জনগণের কাছে তুলে ধরতে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছি। ইস্তাম্বুল শহর বিজয়ের পর এ স্থানটি শহরের প্রথম মাদরাসা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। ’ তিনি বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন সময়ে রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত ও নির্মাণের মাধ্যমে ১৯২৪ সাল পর্যন্ত চালু ছিল। কিন্তু পরবর্তী যারা দেশের সমৃদ্ধ ইতিহাস মুছে ফেলতে চেয়েছিল তারা এটি ভেঙে ফেলেছিল। ’
উসমানীয় ঐতিহ্য ধারক মাদরাসাটি শিক্ষা ও গবেষণাকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। থাকবে সব ধরনের অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা। উসমানীয় সুলতানের প্রতিষ্ঠিত ফাউন্ডেশন কর্তৃক ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত ফাতিহ সুলতান মেহমেদ ইউনিভার্সিটি দুইতলাবিশিষ্ট এ মাদরাসা পরিচালনা করবে।
২০১২ সালে গৃহীত তুরস্ক সরকারের মাদরাসা পুনর্গঠন ও পুনর্নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দেয় স্থানীয় সংরক্ষণ বোর্ড। অতঃপর ২০১৭ সালে ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টর জেনারেল, সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের একটি বিভাগ আনুষ্ঠানিকভাবে মাদরাসা পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু করে। এরপর ২০২০ সালের ২৩ জুলাই আয়া সোয়িয়া জাদুঘরকে পরিবর্তন করে আয়া সোফিয়া গ্র্যান্ড মসজিদ নাম দিয়ে তা মসজিদে রূপান্তর করা হয়। মাদরাসার নতুন ভবনটি সুলতান আহমেদ স্কোয়ারে অবস্থিত। এর আশপাশেই বিখ্যাত ব্লু মসজিদসহ বিখ্যাত সব স্থাপনা রয়েছে
উল্লেখ্য, আয়া সোফিয়া ৫৬৭ খ্রিস্টাব্দে বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের খ্রিস্টানদের সর্ববৃহৎ গির্জা হিসেবে নির্মাণ করা হয়। ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মাদ আল ফাতিহ কনস্টান্টিনোপল বিজয় করে খ্রিস্টানদের কাছ থেকে তা ক্রয় করেন। এরপর তা ৪৮১ বছর পর্যন্ত মসজিদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এরপর ২০২০ সালের ১০ জুলাই তুরস্কের একটি আদালত ১৯৩৪ সালের মন্ত্রিসভার আদেশ বাতিল করে। এরপর ২০২০ সালের ২৪ জুলাই ৮৬ বছর পর তাতে সর্বপ্রথম জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
এমইউআর