ঢাকা শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫

Motobad news
শিরোনাম
  • আপনাদের সুখ-দুঃখে পাশে দাঁড়ানোই আমার রাজনীতির উদ্দেশ্য: হেলাল স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু কাল, জেনে নিন নতুন নিয়ম ফিরল তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা— আপিল বিভাগের রায় ৩-৪ কার্যদিবসের মধ্যে গণভোট অধ্যাদেশ: আইন উপদেষ্টা ভারত থেকে শেখ হাসিনা-কামালকে ফেরাতে হেগের আদালতে যাবে সরকার গৌরনদীতে যাত্রীসহ খাদে বাস, আহত ১৩ নির্বাচন উৎসবমুখর করতে সেনাবাহিনীর সহায়তা দরকার : প্রধান উপদেষ্টা ২১০০ সালের মধ্যে তাপমাত্রা বাড়তে পারে সাড়ে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস দুদকের মামলায় ইসলামি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান কারাগারে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের নিশ্চয়তা চায় দলগুলো, বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি
  • প্রকৌশলী থেকে দুর্ধর্ষ ছিনতাইকারী

    প্রকৌশলী থেকে দুর্ধর্ষ ছিনতাইকারী
    আশরাফুল ইসলাম ও লেলিন শেখ
    গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

    আশরাফুল ইসলাম (৩৭)। বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার। বড় চারটি কোম্পানিতে চাকরি করেছেন। বেতন পেতেন অর্ধ লাখ টাকার বেশি। কিন্তু এতে তৃপ্ত ছিলেন না তিনি। অল্প সময়ে কোটিপতি হওয়ার লোভ পেয়ে বসে তার। তাই জড়িয়ে পড়েন ছিনতাইয়ে। দুই বছরের মধ্যে হয়ে যান দুর্ধর্ষ ছিনতাইকারী।

    এক বছরে দুই শতাধিক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছেন। কিন্তু গ্রেফতার হননি কখনো। অবশেষে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) জালে ধরা পড়েছেন। দুইজনের গ্রুপ তার। গ্রুপের অপর সদস্যের নাম লেলিন শেখ (৩৬)। তিনিও গ্রেফতার হয়েছেন। রিমান্ড শেষে সোমবার তাদের আদালতে হাজির করা হয়।

    ডিবির রিমান্ডে ছিনতাই তৎপরতার আদ্যোপান্ত জানিয়েছেন আশরাফুল ও লেলিন। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর রাস্তায় মোটরসাইকেলে চালক হিসাবে থাকেন আশরাফুল। আর পেছনে থাকা লেলিন রিকশা বা অন্য যানবাহনে থাকা যাত্রীর কাছ থেকে ছোঁ মেরে ব্যাগ টান দিয়ে নিয়ে যান। পরে দুজন মিলে ছিনতাই করা টাকা ভাগ করে নেন। ছিনতাইয়ের মাধ্যমে এরই মধ্যে তারা কমপক্ষে দুই কোটি টাকা অর্জন করেছেন।

    ডিবি সূত্র জানায়, গত বছরের ডিসেম্বরে মিরপুরের পল্লবী থানা এলাকায় এক সরকারি কর্মকর্তার ১১ লাখ টাকাসহ একটি ব্যাগ ছোঁ মেরে নিয়ে মোটরসাইকেলযোগে পালিয়ে যায় দুই ছিনতাইকারী। এর কিছুদিন পর মোহাম্মদপুরে একই কায়দায় আরেক সরকারি কর্মকর্র্তার ২৩ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। দুটি ঘটনা ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। এরপরই ছিনতাইকারীদের ধরতে মাঠে নামে ডিবি।

    ডিবি গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান গনমাধ্যমকে বলেন, ছিনতাইকারীদের শনাক্ত করতে শতাধিক সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। চার মাস ধরে চলে ওই ফুটেজ পর্যালোচনার কাজ। কিন্তু বিপত্তি দেখা দেয় মোটরসাইকেলের নম্বর প্লেট নিয়ে। কোনোভাবেই প্লেটের নম্বর মেলানো যাচ্ছিল না। অন্যদিকে বড় দুটি ছিনতাইয়ের ঘটনার পর তারা সাময়িক সময়ের জন্য এই পেশা ছেড়ে দেয়। তাই তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছিল না। অবশেষে বিশেষ কৌশলে মোটরসাইকেলের নম্বর, চালক ও পেছনে বসে থাকা ছিনতাইকারীকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়। প্রথমে লেলিন শেখকে গ্রেফতার করা হয়। তার বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানীতে। তার দেওয়া তথ্যে গ্রেফতার করা হয় মোটরসাইকেলের চালক ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল ইসলামকে। জব্দ করা হয় ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি। আশরাফুলের বাড়ি কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালীতে। দুই ছিনতাইকারীই ঢাকার মোহাম্মদপুরে বসবাস করতেন। আশরাফুল স্ত্রী ও একমাত্র পুত্রসন্তান নিয়ে থাকতেন। আর দুই সন্তান নিয়ে লেলিনের স্ত্রী গ্রামের বাড়িতে আছেন।

    গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, দুই ছিনতাইকারীর কাছ থেকে ১১ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। ওই টাকা প্রকৃত মালিকের কাছে হস্তান্তর করতে আদালতের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। কর্মকর্তারা জানান, লেলিন প্রথম জীবনে রিকশা চালাতেন। এরপর ড্রাইভিং শিখে পিকআপ চালানো শুরু করেন। পিকআপ চালানোর পাশাপাশি ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়েন।

    প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম ডিবিকে জানিয়েছেন, তিনি ২০০৭ সালে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশোনা শেষ করেন। এরপর বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরি করেন। ২০১২ সালে ইবাইস ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে আজমেরী প্রপার্টিস লিমিটেড, ডাইমেনশন ডিজাইন ও মোহাম্মদীয়া হাউজিং লিমিটেড এবং সর্বশেষ বিশ্বাস গ্রুপে ফ্যাক্টরি ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে চাকরি করেন। বিশ্বাস গ্রুপে চাকরির সময় কোম্পানির বিভিন্ন মালামাল আনা-নেওয়ার জন্য পিকআপ ভাড়া করার দায়িত্ব ছিল তার। সেই সূত্র ধরে মোহাম্মদপুর পিকআপ স্ট্যান্ডে পরিচয় হয় লেলিনের সঙ্গে।

    আশরাফুল ডিবিকে আরও জানান, চাকরি করে তিনি বেশ টাকা জমান। এর মধ্যে ৬ লাখ টাকা ইভ্যালিতে আর ৫ লাখ টাকা আলিশা মার্ট নামের অনলাইন মার্কেটিং কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেন। লাভসহ বিনিয়োগের টাকার চেক পেলেও টাকা পাননি। এমন অবস্থায় ছিনতাই হয়ে ওঠে তার মূল পেশা।

    ডিবির অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) রেজাউল হক জানান, গ্রেফতার ব্যক্তিদের মোটরসাইকেলের নম্বর প্লেটের ওপর হ্যালোজেন লাইট লাগানো হয়। যাতে সিসি ক্যামেরায় মোটরসাইকেলের প্রকৃত নম্বর দেখা না যায়।


    এইচকেআর
    গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

    সর্বশেষ