ঋণ পরিশোধের চিন্তায় স্ত্রী-কন্যা হত্যা

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলায় বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের আঙ্গারপাড় এলাকায় কথিত ‘দন্ত চিকিৎসক’ আসাদুজ্জামান ওরফে রুবেল সংসার চালানো ও ঋণ পরিশোধের চিন্তায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে গলা কেটে হত্যা করেছেন। এমনটাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১০ মে) দুপুরের দিকে ঘিওর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ) মো. রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বিপ্লব মুঠোফোনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে রোববার (৮ মে) সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আব্দুন নূর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আসাদুজ্জামান রুবেল।
মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সোমবার (৯ মে) বিকেলে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী, সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘিওর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মৃতদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে। এরপর মৃতদেহ ময়না তদন্তের জন্য মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। ঘটনাস্থল থেকে হত্যার কাজে ব্যবহৃত অস্ত্র (ধারালো দা) ও রক্তমাখা জামা-কাপড় জব্দ করার পাশাপাশি তাৎক্ষণিক অভিযান পরিচালনা করে হত্যায় জড়িত আসাদুজ্জামান ওরফে রুবেলকে (৪০) গ্রেফতার করা হয়। এরপর হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে ঘিওর থানায় হত্যার শিকার লাভলীর পিতা (রুবেলের শ্বশুর) সাইজুদ্দিন বাদী হয়ে মামলা করেন।
মামলার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত আসামি আসাদুজ্জামান ওরফে রুবেলের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদালত কর্তৃক রেকর্ড করানো হয়। সেইসঙ্গে ১২জন সাক্ষীর জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করাসহ মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতাল থেকে মামলার ঘটনায় মৃত লাভলী আক্তার (৩৯), তার দুই মেয়ে মৃত লাজলী আক্তার ছোয়া (১৬) ও মৃত ইহা মনি কথার (১২) ময়না তদন্ত প্রতিবেদন সংগ্রহ করা হয়।
তদন্তে জানা যায়, আসামি আসাদুজ্জামান ওরফে রুবেল নানান ধরনের ঋণে জর্জরিত ছিলেন। স্ত্রী-কন্যাদের নিয়ে সংসার চালানো ও ঋণ পরিশোধের চিন্তায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে এই জঘন্য হত্যাকাণ্ড ঘটান তিনি। মামলা রুজুর পর ঘিওর থানা উপপুলিশ পরিদর্শক বেলাল হোসেন মামলাটি তদন্ত করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সোমবার বিকেলে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
ঘিওর থানার ওসি মো. রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা ২৪ ঘণ্টার ভেতর মামলার তদন্ত প্রতিবেদন সোমবার বিজ্ঞ আদালতে পাঠিয়েছি। মামলার তদন্ত করতে গিয়ে জানা যায়, ‘দন্ত চিকিৎসক’ আসাদুজ্জামান ওরফে রুবেল ঋণে জর্জরিত ছিলেন এবং ওই কারণেই হতাশাগ্রস্ত হয়ে এই জঘন্য হত্যাকাণ্ড ঘটান।
প্রসঙ্গত, ঘিওর উপজেলার বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের আঙ্গারপাড়া গ্রামের আব্দুল বারেকের ছেলে আসাদুজ্জামান ওরফে রুবেল গত রোববার ভোর রাতে ঘুমিয়ে থাকা নিজ স্ত্রী ও দুই কন্যাকে প্রথমে দা দিয়ে আঘাত করেন। এরপর বালিশচাপা দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করার পর ধারালো অস্ত্র (দা) দিয়ে স্ত্রী লাভলী আক্তার, বড় মেয়ে লাজলী আক্তার ছোঁয়া ও ছোট মেয়ে ইহা মনি কথাকে জবাই করেন। আসাদুজ্জামান ওরফে রুবেল স্থানীয় একটি দোকানে দাঁতের চিকিৎসা করতেন। গণমাধ্যমে তার পরিচয় ‘দন্ত চিকিৎসক’ হিসেবে প্রচার পেলেও তিনি ডেন্টাল বিষয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রিধারী নন।
এইচকেআর