দিনাজপুরে গৃহবধূ হত্যার দায়ে পুত্রসহ তিন জনের মৃত্যুদন্ড

দিনাজপুরে হত্যার দায়ে সতিন শ্রীমতি প্রতিমা রাণী চৌধুরী, তার পুত্র এবং তার ভাইকে ফাঁসির আদেশ, এক জনের আমৃত্যূ কারাদন্ডসহ অপর এক জনের ১০ বছরের কারাদন্ড সেইসাথে ১ লক্ষ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদন্ড দিয়েছে দিনাজপুর অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত-৩।
বুধবার (১১ মে) দুপুর ৩ টায় দিনাজপুর জেলা অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের বিচারক এস এম রেজাউল বারী ২২জনের স্বাক্ষ্য প্রমান শেষে এ রায় ঘোষনা করেন।
আদালত ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার দক্ষিণ সুজাপুর গ্রামের সাধনানন্দ চৌধুরী তার প্রথম স্ত্রী তপতী রানী চৌধুরীর সঙ্গে সংসার করাকালীণ সময়ে তার বিনা অনুমতিতে প্রতীমারাণী চৌধুরী দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে বিয়ে করেন। দ্বিতীয় বিয়ের পর থেকে প্রথম স্ত্রী তপতী রানীকে সাধনানন্দ চৌধুরী ভরণপোষণ দিতেন না। ফলশ্রæতিতে পরিবারে প্রতিনিয়িত কলহ লেগে থাকত। এরই জের ধরে ২০১৭ সালের ৬এপ্রিল দিবাগত রাতে ১নং আসামি পিতা শ্রী সাধনানন্দ চৌধুরী, ২নং আসামি সৎ ভাই শ্রী আকাশ চৌধুরী, ৩ নং আসামি সৎ মা শ্রীমতি প্রতিমা রাণী চৌধুরীসহ আরো ৩/৪জন একে অপরে যোগসাজস করিয়া ৬ এপ্রিল ২০১৭ সালে আনুমানিক রাত নয়টা হতে পরেরদিন সকাল আটটার মধ্যে শারীরিক নির্যাতন ও শ্বাসরোধ করিয়া হত্যা করে। আলামত নষ্টের জন্য বাড়ির পার্শ্ববর্তী সন্দীপ মাষ্টারের বাঁশঝাড়ে লাশ গুম করার উদ্যেশে পরণে থাকা কাপড়ে আগুণ ধরিয়ে দেয়। ফলে বুক-পেটসহ শরীরের অনেক স্থান আগুনে ঝলসে যায়।
এঘটনায় নিহতের পুত্র শুভনন্দ চৌধুরী মাতা হত্যার অভিযোগে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী থানায় পিতা শ্রী সাধনানন্দ চৌধুরী, সৎ মাতা শ্রীমতি প্রতিমা রাণী চৌধুরীসহ পাঁচজনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ফুলবাড়ী থানার মামলা নং ৮, তারিখ ০৭-০৪-২০১৭ইং।
দীর্ঘ পাঁচবছর শুনানীঅন্তে বুধবার (১১ মে) দুপুর ৩ টায় দিনাজপুর জেলা অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের বিচারক এস এম রেজাউল বারী ২২ জনের স্বাক্ষ্য প্রমান শেষে আসামি সৎ মা শ্রীমতি প্রতিমা রাণী চৌধুরী, তারপুত্র শ্রী আকাশ চৌধুরী ও প্রতিমা রাণী চৌধুরীর ভাই কাজল মহন্তকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার আদেশ দেয়। অপর আসামী নিহতের স্বামী ও বাদীর পিতা শ্রী সাধনানন্দ চৌধুরী কে আমৃত্যু কারাদন্ড এবং আরেক আসামী জীবন দাশকে ১০বছর সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করে সেইসাথে এক লক্ষ টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদন্ডের আদেশ ঘোষণা করে।
রায় পাওয়ার পর নিহতের পুত্র ও মামলার বাদি শুভনন্দ চৌধুরী বলেন, দীর্ঘ ৫ বছর পরে আমার মায়ের হত্যার নেয় বিচার পেলাম। আমি মামলার রায়ে সন্তুষ্ট।আমার মায়ের হত্য মামলায় যারা আইনি সহযোগীতা করেছে সকলে প্রতি আমার শ্রদ্ধা। আমি আশা করি উচ্চ আদালতে মামলায় আসামিদের শাস্তি বহাল থাকবে।
রায়ের বিষয়ে মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও সহকারী পিপি এ্যাডভোকেট আতাউর রহমান বলেন, এটি একটি যুগান্তকারী রায়। এই মামলায় পাঁচজন আসামীর মধ্যে তিন জন আসামীর ফাঁসির আদেশ সেইসাথে অপর একজনকে আমৃত্যু কারাদন্ডসহ অপরজনকে ১০ বছরের কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছেন বিজ্ঞ বিচারক।
এইচকেআর