গাছের প্রতি এত নির্দয় কেন মানুষ


কাজী ফিরোজ : উদ্ভিদের যে জীবন আছে, আছে কষ্ট, বাঙালী বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু শতবছর আগে একথা প্রমাণ করেছেন। সৃষ্টির শুরু থেকেই উদ্ভিদের প্রান ছিল কিন্তু তার আগে উদ্ভিদের প্রাণ সম্পর্কে মানুষ জানত না। উদ্ভিদের দেহের উত্তেজনার বেগ নিরুপণ যন্ত্রও তিনি আবিষ্কার করেন।
বিজ্ঞান বলে গাছ হাসে, কান্না করে,কথা বলে। গাছ আমাদের ছায়া দেয়,ফুল -ফল দেয়,পাখির খাবার,বাসা বানাবার জায়গা দেয়।সবচেয়ে প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের উৎস গাছ। গাছ কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করে। গাছেরও অনুভূতি আছে।
এসকেনোগ্রাফ যন্ত্রের মাধ্যমে গাছের প্রাণ থাকার বিষয়টি তিনি প্রমান করেছেন। গাছ অন্যান্য প্রাণীর ন্যায় বিশ্ব স্রস্টার আনুগত্য প্রকাশ করে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে গাছের গুরুত্ব অপরিসীম।
অথচ এমন উপকারী গাছের প্রতি আমরা অনেক ক্ষেত্রেই নির্দয় আচরন করে থাকি। ওদের সংকেত আমাদের কানে আসেনা তাই ওদের দুঃখবোধ, নীরবকান্না আমাদের নজরে পড়ে না।
গাছ নিজেদের উজাড় করে অন্যের কল্যাণে বিলিয়ে দেয়। গাছ পাখি, ক্ষুদ্রপ্রাণ,পরিবেশ এবং মানুষের বন্ধু। এতদসত্ত্বেও অবিবেচক মানুষের নিষ্ঠুরতা থেকে রেহাই পাচ্ছে না।
আমাদের বরিশাল নগরীর বিভিন্ন রাস্তার মোড়, বাসস্ট্যন্ড, লঞ্চঘাট, হাটবাজার, সড়কের পাশের গাছগুলিতে পেরেক ঠুকে লাগানো হচ্ছে প্রচারপত্র, ব্যানার, বিজ্ঞাপন। আহত হয়ে গাছগুলো ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে, তার স্বাভাবিক সৌন্দর্য্য হারিয়ে যাচ্ছে। পেরেক লাগানোর কারনে গাছের গায়ে ছিদ্র হয়ে পানির সাথে ব্যাক্টেরিয়া,ছত্রাক ও অণুজীব প্রবেশ করে গাছে পচন ধরে গাছের খাদ্য ও পানি শোষণ প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়ে গাছটি একসময় মারা যেতে পারে।ফলে পাখি,কীটপতঙ্গ তাদের বাসা, খাদ্য হারায়। এগুলি সাদা চোখে ধরা পড়ে না।
এর বিপরিতে আশার চিত্রও আছে।আমরা অনেকেই মিডিয়ার কল্যাণে যশোরের একজন গাছ দরদী ওয়াহিদ সরদারের নাম শুনেছি। তিনি যশোর অঞ্চলের ৮০০ কিঃমিঃ সড়কের পাশ থেকে পেরেক,লোহার তার, নাইলনের দড়ি তুলে ফেলেছেন। এছাড়া কয়েক হাজার গাছও লাগিয়েছেন। গাছকে যন্ত্রণামুক্ত করতে ২০১৮ সালে তিনি গাছ পেরেক,জঞ্জাল মুক্ত করতে শুরু করেন।
মাত্র এক বছরেই ৬মন ১০ কেজি পেরেক তুলে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। গাছ দরদী ওয়াহিদ সরদার বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কার লাভ করেছেন।
এর বাইরেও দেশ বিদেশ থেকেও একাধিক সম্মাননা এবং অর্থ সহায়তা পেয়েছেন।
দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ গাছের প্রতি নির্দয় আচরণের বিষয়টি নজরদারিতে আনলে এবং ধীরেধীরে মানুষ সচেতন হলে এক সময় আমরা এই ক্ষতিকর বদঅভ্যাস থেকে বেড়িয়ে আসতে পারব। এর সাথে নগরবাসী কতটা পরিবেশ সচেতন তা যেমন ফুটে উঠে তেমনিভাবে রুচিবোধের বিষয়ও জড়িত। প্রাচ্যের ভেনিসের মর্যাদা রক্ষার দায়িত্ব সকলের।
লেখক : পরিবেশ ও সমাজকর্মী
(ফেসবুক থেকে নেওয়া)
এসএমএইচ
