দক্ষিণাঞ্চলের দুর্ধর্ষ ডাকাত সর্দার শহিদুল গ্রেপ্তার


এক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ও ওয়ারেন্টসহ ডাকাতি ও অস্ত্র আইনের আট মামলার আসামি দক্ষিণাঞ্চলের ডাকাত সর্দার শহিদুল। কোথাও ডাকাতির আগে যেমন রেকি করতেন, তেমনি এক জায়গায় ডাকাতি শেষে অবস্থান নেন অন্যত্র। নতুন স্থানে নিয়ে ফল বা সবজি বিক্রেতার ছদ্মবেশে এলাকা ও বাসা রেকি ডাকাতির পরিকল্পনা করতেন মো. শহিদুল মোল্লা (৪১)।
সম্প্রতি ঢাকা, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, খুলনা, বরিশালসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে চাঞ্চল্যকর ডাকাতির ঘটনার মূলহোতা শহিদুল মোল্লাকে গ্রেফতারের পর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এসব তথ্য জানিয়েছে।
বুধবার (২৫ মে) দুপুরে মালিবাগ সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির এলআইসি শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) মুক্তা ধর এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, গ্রেফতাররা ডাকাতির সময় বা পরে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা কর্তৃক গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘদিন হাজতবাস করেন। জামিনে বেরিয়ে পুনরায় দল গঠন করেন ও নতুন উদ্যমে ডাকাতি শুরু করেন। অনেকে আবার বড় ধরনের ডাকাতি করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য ঘটনাস্থল হতে দূরবর্তী এলাকায় অবস্থান করে সাময়িকভাবে নতুন পেশা বেছে নেন। তাদের কেউ কেউ আদালত থেকে জামিন নিয়ে পুনরায় হাজির না হয়ে আত্মগোপনে চলে যান। তাদের বিরুদ্ধে আদালত থেকে জারি হওয়া গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিলের অপেক্ষায় বছরের পর বছর মূলতবি থাকে।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, এ ধরনের ডাকাত চক্রের সদস্যদের শনাক্ত ও তাদের কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে দীর্ঘদিন ধরে অনুসন্ধান করে আসছিল সিআইডি। এরই ধারাবাহিকতায় একাধিক ডাকাত সদস্যকে শনাক্ত করা হয়।
এলআইসি শাখার একটি চৌকস দল অভিযান পরিচালনা করে মঙ্গলবার (২৪ মে) দিবাগত রাতে রাজধানীর উত্তরা থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের দুর্ধর্ষ ডাকাত দলের সর্দার ও ৮ মামলার এজাহারনামীয় ও সাজাপ্রাপ্ত আসামি মো. শহিদুল মোল্লা গ্রেফতার করে।
মুক্তা ধর বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার শহিদুল জানান তার নেতৃত্বে ১০/১২ সদস্যের একটি সুসংগঠিত ডাকাত দল রয়েছে। তিনি দল নিয়ে বরিশালের উজিরপুর, বিমানবন্দর থানা, গৌরনদী, মাদারীপুরের কালকিনীসহ বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করেছেন। তার বিরুদ্ধে দুটি ডাকাতির প্রস্তুতি, দুটি অস্ত্র আইনে মামলা, দুটি চুরি, একটি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ও একটি অন্যান্য ধারার আইনের মামলা রয়েছে। ৭টি মামলায় তিনি আদালত হতে জামিন নিয়ে আত্মগোপনে যান।
এই সময়ে তিনি রাজধানীর উত্তরা এলাকায় মৌসুমী ফল ও সবজি বিক্রেতার বেশ ধরে বসবাস করে আসছিলেন। পাশাপাশি ডাকাতি জন্য এলাকা ও বিভিন্ন বাসা রেকি করে আসছিলেন।
আদালত থেকে ৭টি মামলায় তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করা হয়। বরিশাল অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তার বিরুদ্ধে ২০১৭ সালে উজিরপুর থানায় দায়ের করা মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের কারাদণ্ড প্রদান করেন, যা তামিলের অপেক্ষায় মূলতবি রয়েছে।
এসএসপি মুক্তা ধর আরও বলেন, গ্রেফতার শহিদুল আন্তঃজেলা ডাকাতদলের সর্দার। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে তার নামে নিজস্ব ডাকাত বাহিনী রয়েছে। তিনি ২০১০ সাল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ভয়-ভীতি দেখিয়ে টাকা, স্বর্ণালংকার ও মূল্যবান সামগ্রী ডাকাতি করে আসছিলেন।
এইচকেআর
