ঢাকা শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

Motobad news
শিরোনাম
পাল্টাপাল্টি দুর্নীতির অভিযোগ

সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজে অধ্যক্ষ-শিক্ষক মুখোমুখি

সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজে অধ্যক্ষ-শিক্ষক মুখোমুখি
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষকে দুর্নীতিবাজ আখ্যায়িত করে তাঁর অপসারণ দাবিতে কালো ব্যাচ ধারণ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেছেন শিক্ষকরা। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত কলেজের একাডেমিক ভবনের নিচ তলায় বসে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। এসময় সদ্য বদলি হওয়া অধ্যক্ষ মেজর সাহিদুর রহমান কে অপসারণ করা না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি’র হুশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষকরা।

তবে শিক্ষকদের এ ধরনের আন্দোলন কর্মসূচি ষড়যন্ত্র এবং শাক দিয়ে মাছ ঢাকার সামিল বলে পাল্টা অভিযোগ করেছেন কলেজের বিদায়ী অধ্যক্ষ মেজর সাহিদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘কলেজ সরকারি হওয়ার পরে নিজস্ব ফান্ড থেকে নেয়া অতিরিক্ত অর্থ ফেরত না দিতেই তারা এ ধারণের আন্দোলন করছে বলে দাবি তাঁর।

সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক ও অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক মাসুম বিল্লাহ্ বলেন, ‘কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ মেজর সাহিদুর রহমান এই প্রতিষ্ঠানে যোগদানের পর থেকেই নানা অনিয়ম এবং দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ইতিপূর্বে তিনি একাধিকবার দুর্নীতিবাজ হিসেবে কাগজে-কলমে প্রমাণিত হয়েছেন।

ওই শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষের দুর্নীতির সংক্ষিপ্ত পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ‘২০২০ সালে করোনার সময়ে ২৪ মার্চ থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত কলেজ বন্ধ ছিল। এ কারণে তখনকার সময়ে অধ্যক্ষ বরিশালে ছিলেন না। অথচ তিনি ওই কলেজ বন্ধকালিন সময়ে গাড়ির জালানি খরচ বাবদ মোটা অংকের বিল ভাউচার জমা দেন। যার তদন্ত হলে অধ্যক্ষের গোমর ফাঁস হয়ে যায়।

 বন্ধের মধ্যে গাড়ির চাকা না ঘুরলেও তিনি চালককে দিয়ে খরচের ভাউচার করে অর্থ আত্মসাতের চেষ্টা করেন। বিষয়টি তদন্তে বেরিয়ে আসলে সেই টাকা ফেরত দিতে হয়েছে অধ্যক্ষ সাহিদুর রহমানকে।

শিক্ষক নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘শুধু ওই একটি ঘটনাই নয়, বরং এমন আরও একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। যার প্রমাণও হয়েছে তদন্তসহ নানা মাধ্যমে। এর পরেও তার স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ হচ্ছে না। বরং এর মাত্রা দিন দিন আরও বেড়ে চলছে।

আন্দোলনকারী শিক্ষকরা বলেন, ‘মেজর সাহিদুর রহমানকে বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজে প্রেসনে অধ্যক্ষ’র দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। দুর্নীতিতে আলোচিত এই অধ্যক্ষকে গত ২২ এপ্রিল মডেল স্কুল এন্ড কলেজ থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। পরবর্তীতে তাকে সেনাবাহিনীর অন্য ডিভিশনে পদায়ন করা হয়েছে বলেও আমরা শুনেছি। কিন্তু তিনি মডেল স্কুলের দায়িত্ব ছাড়ছেন না। 

বরং গত ৮ মে থেকে তিনি কোন পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। তিনি ছুটেতে আছেন কিনা সেটাও আমাদের জানা নেই। আর কাউকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্বও দিয়ে যাননি। এজন্য কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

শিক্ষক নেতা মো. মাসুম বিল্লাহ্ বলেন, ‘আমাদের একজন ছাত্রী এবার মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য উত্তীর্ণ হয়েছেন। এটা আমাদের কলেজের জন্য সুনাম এবং গর্বের বিষয়। অথচ আমরা তাকে কোনভাবে সহযোগিতা করতে পারছি না। বরং তাকে বিপদে ফেলতে হয়েছে। সে মেডিকেলে ভর্তির জন্য প্রত্যায়নপত্র নিতে কলেজে এসেছিল। অধ্যক্ষ না থাকায় তাকে আমরা প্রত্যয়নপত্র দিতে পারিনি। অধ্যক্ষ যাওয়ার পূর্বে কাউকে তিনি দায়িত্ব দিয়ে গেলে অন্তত আমরা ওই শিক্ষার্থীর উপকারে আসতে পারতাম।

শিক্ষক নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘বর্তমান অধ্যক্ষের এমন অনিয়ম এবং দুর্নীতি অব্যাহত থাকলে আমাদের কলেজের শিক্ষার মান তলানিতে গিয়ে ঠেকবে। তাই আমরা বর্তমান অধ্যক্ষ সাহিদুর রহমানের অপসারণ দাবি করছি। এ দাবি নিয়েই শনিবার থেকে ক্যাম্পাসের মধ্যে অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেছি। তাকে অপসারণ করে অন্য কাউকে অধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত করার আগ পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি এবং কালো ব্যাচ ধারণ অব্যাহত থাকবে। এমনকি প্রয়োজনে এর থেকেও বৃহৎ কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন শিক্ষকরা।

এসব বিষয় নিয়ে বরিশাল মডেল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মেজর সাহিদুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, ‘মডেল স্কুল এন্ড কলেজ সরকারি হয় ২০১৭ সালে। তবে তারা কোন স্কেলে বেতন পাবেন সেটা নির্ধারন হয় অনেক পরে। এ কারণে শিক্ষক-কর্মচারীদের কলেজের নিজস্ব ফান্ড থেকেই বেতন ভাতা দেয়। পরবর্তীতে যখন সরকারিভাবে বেতন স্কেল নির্ধারন হলো তখন দেখা যায় কলেজের মোট ৪০ জন শিক্ষক কর্মচারীর কাছে প্রতিষ্ঠান প্রায় ১৫ লাখের মত টাকা পাবে। 

বাড়তি অর্থ আদায়ের জন্য শিক্ষক কর্মচারীদের নোটিশ দেয়ার পর থেকেই তারা এ ধরনের আন্দোলনের নামে ষড়যন্ত্র এবং আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করেছেন।

তবে জ্বালানি তেল নিয়ে দুর্নীতির বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হলে তিনি বলেন, এগুলো অত্যন্ত পুরানো বিষয়। তখন একাডেমিক কাউন্সিল ছিল। বিভাগীয় কমিশনার ছিলেন কমিটির সভাপতি। সেখানে কিছু চক্র আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছি। এ নিয়ে তদন্ত হয়েছে। সেখানে আমার কোন অপরাধ খুঁজে পায়নি।

দায়িত্ব বুঝিয়ে না দিয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী উপাধ্যক্ষের নিকট দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে হবে। কিন্তু আমাদের কলেজে উপাধ্যক্ষ নেই। যারা শিক্ষক হিসেবে রয়েছেন তারা কেউ বিসিএস নয়। তাদের সবাইকে এডহোকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাদের নিয়মিত হতে তিন বছর সময় লাগবে। এখানে কোন একাডেমিক কাউন্সিলও নেই। এটির দায়িত্বে শিক্ষা অধিদপ্তর। আমার প্রেষণ আদেশ বাতিলের নোটিশ পাওয়ার পর পরই বিষয়টি ডিজি অফিসে জানিয়েছি। তারা এখন পর্যন্ত আমাকে কোন প্রতিউত্তর দেননি। নতুন অধ্যক্ষ পদায়ন হলে তার হাতেই দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
 


এমবি
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

সর্বশেষ