ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫

Motobad news

মনপুরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুর্দশা, ভোগান্তিতে রোগীরা

মনপুরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুর্দশা, ভোগান্তিতে রোগীরা
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

ভোলার বিচ্ছিন্ন ও দুর্গম দ্বীপ উপজেলা মনপুরার একমাত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না রোগীরা। ৫০ শয্যাবিশিষ্ট এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নিয়মিত অফিস করছেন না। মেডিকেল অফিসার, চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও ইচ্ছামতো অফিসে আসা-যাওয়া করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম। রোগীদের সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয় বেসরকারি ডায়াগনস্টিক ও ক্লিনিকে।

গত ১৯ অক্টোবর মনপুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কক্ষটি খোলা থাকলেও তিনি উপস্থিত ছিলেন না। হাসপাতালের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. তৈয়বুর রহমান ভোলা জেলা সদরে অবস্থান করছেন। 


মেডিকেল অফিসারের রুম, ইপিআই রুম, ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার, কনসালট্যান্ট গাইনি, প্রসিকিউটর, টিকাদান কেন্দ্র, অফিস সহকারীসহ কর্মকর্তাদের সব কক্ষ তালাবদ্ধ। জরুরি বিভাগ খোলা থাকলেও চিকিৎসা দেওয়ার মতো কোনো চিকিৎসক নেই। চিকিৎসকের জন্য অপেক্ষা করছেন বেশ কয়েকজন রোগী। তাঁরা বলছেন, ডাক্তারদের অপেক্ষা করেও পাচ্ছেন না। কখনো কখনো একজন থাকেন আবার অনেক সময় কোনো ডাক্তারই থাকেন না।

৫০ শয্যার এই হাসপাতালে রয়েছে জনবলের সংকট। চিকিৎসক মাত্র ছয়জন। নার্স ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ অন্যান্য অনেক পদ শূন্য। এ কারণে বিপুলসংখ্যক রোগীকে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানান কর্তব্যরত আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. আশিকুর রহমান অনিক। 

তিনি বলেন, এই হাসপাতালে ইসিজি মেশিন ছাড়া আর কিছুই নেই। এক্স-রে মেশিন নেই। প্যাথলজি ও আলট্রাসাউন্ড মেশিন থাকলেও টেকনিশিয়ান না থাকায় এগুলো রোগীদের কোনো কাজে আসছে না। এ ছাড়া নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ না করায় এই হাসপাতালের রোগীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন হাজিরহাট ইউনিয়নের চরযতি গ্রামের এক শিশু রিহানের মা বলেন, এই হাসপাতাল থেকে তেমন কোনো ওষুধ দেওয়া হয় না। সব ওষুধই বাইরের দোকান থেকে কিনে আনতে হয়। একই অভিযোগ করলেন সাকুচিয়া ইউনিয়নের তালতলা গ্রামের শিশু আরিফার বোন মুক্তাও।

মনপুরা উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী হাবিবুর রহমান বলেন, মনপুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সরকারি কোয়ার্টার থাকা সত্ত্বেও তিনি এলাকায় থাকেন না।

এ বিষয়ে মনপুরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. তৈয়বুর রহমান মোবাইল ফোনে জানান, ‘এই হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতাকর্মী নেই। নার্সের সংকট রয়েছে। ল্যাব টেকনোলজিস্ট নেই। রেডিওগ্রাফার নেই।  এ কারণে হাসপাতালের ল্যাব চালু করতে পারছি না।’ তবে স্বল্পসংখ্যক ডাক্তার দিয়ে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।

হাসপাতালে অনুপস্থিতির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তৈয়বুর রহমান বলেন, ‘আমি সপ্তাহে এক দিন মনপুরায় আসি।’

দ্বীপ উপজেলা মনপুরায় লক্ষাধিক জনসংখ্যার মধ্যে প্রতিদিন দুই শতাধিক মানুষ স্বাস্থ্যসেবা নিতে উপজেলা কমপ্লেক্সে যায় বলে জানা গেছে। 


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন