ঢাকা বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

Motobad news

ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস পেলেই আঁতকে উঠেন চরাঞ্চলের মানুষ

ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস পেলেই আঁতকে উঠেন চরাঞ্চলের মানুষ
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

মেঘনার বুক চিরে বয়ে যাওয়া জলরাশির মাঝে মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে কয়েকটি সবুজ দ্বীপ। সেখানে হাজার হাজার  লোকের বসবাস এবং ওই দ্বীপই তাদের জীবিকার প্রধান উৎস। বলছি ভোলার দৌলতখান উপজেলার মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মদনপুর ,হাজিপুর চর ,ও ভবানীপুর চর হাজারির  কথা। 

সেখানে নেই কোন আশ্রয়ণ কেন্দ্র, উন্নত মানের স্কুল, বেড়ি বাঁধ, স্বাস্থ্য কেন্দ্র। শীতকালে থাকে বিশুদ্ধ পানির সংকট এবং বর্ষা কালে জোয়ারের পানি আর প্রকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেই চলে এ চরের মানুষের জীবন তরী। তাই ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস পেলেই আঁতকে উঠেন এসব চরের  বাসিন্দারা।  এবার ঘুর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে দৌলতখান উপজেলার এ চরাঞ্চলগুলো। মেঘনা নদী বেষ্টিত ইউনিয়নগুলোতে প্রায় কয়েক হাজার লোকের বসবাস । 

সেখানকার ওই দ্বীপই তাদের জীবিকার প্রধান উৎস কৃষি, মৎস্য আহরণ ও পশু পালন করেই তাদের জীবিকা নির্বাহ করেন। এবারের ঘুর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে বসবাস করা প্রতিটি পরিবারই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারো ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে, কারো বা গবাদিপশু জোয়ারে ভেসে গেছে। আবার অনেকের মাছের ঘেরে জোয়ারে পানি ঢুকে কোটি টকার মাছ চলে গেছে। জোয়ারের প্রভাবে এসব চরে কাচা রাস্তা ভেঙে বড় বড় গর্তে পরিনত হয়েছে। 

কোনো কোনো রাস্তার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না। দিনভর এসব চরে ঘুরে দেখা যায়, জোয়ারের পানিতে এসব ইউনিয়নে গুচ্ছগ্রামের ঘরের ভিটার মাটি চলে গেছে। কারো ঘর ঝড়ে পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। মাছের ঘের জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেকের গরু-মহিষ জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে। সাগরের অতিরিক্ত লোনা পানি খেয়ে গরু, ছাগল ও মহিষ অসুস্থ হয়ে মারা যাচ্ছে। জোয়ারে প্রতিটি রাস্তার মাটি ধুয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।

 এসব চরের বাসিন্দারা গত বছরের ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের ক্ষতি ঠিকমত এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তাই ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস পেলেই আঁতকে উঠেন এসব চরের  বাসিন্দারা। এসব চরগুলো মেঘনা নদীর মাঝে অবস্থান ও যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় অনেকের নজরেই পড়েনি এখানকার ক্ষয়ক্ষতির বাস্তব চিত্র। হাজিপুর চরের ইউপি সদস্য মো. আবু তাহের, মদনপুর চরের বাসিন্দা মনির মাঝি,সহ ২০-২৫জন নারী-পুরুষ জানান,  গুচ্ছগ্রাম ও বসতঘর মিলে এসব চরে  হাজার হাজার লোকের বসবাস। তিন-চার ফুট জলোচ্ছ্বাসে তাদের ঘরের ভিটার মাটি নিয়ে গেছে।

 অনেকের গবাদিপশু জোয়ারে ভেসে গেছে। এখন তাদের ঘরগুলোতে বসবাসের অনুপযোগী। কিন্তু তারা কোনো সরকারি সহায়তা পায়নি। এছাড়াও এখানে কোনো রাস্তাঘাট নেই। নেই কোনো আশ্রয়ণ কেন্দ্র। জোয়ারে পানি উঠলে তারা জোয়ারের পানিতে ভাসতে হয়। কেউ অসুস্থ্য হলে তাকে চিকিৎসা দেয়ারও ব্যবস্থা নেই।

কোমর সমান পানিতে নেমে ১০-১২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ঘাটে এসে ট্রলারে করে মূল ভ‚খন্ড আসতে হয়। মদনপুর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক জানান, ঘুর্ণিঝড় ইয়াসে মদনপুর ইউনিয়নে কমবেশি প্রতিটি পরিবারই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জলোচ্ছ্বাসে ইউনিয়নের সাড়ে চার কিলোমিটার হেরিং বোন ও ১৫ কিলোমিটার কাচা রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লোনাপানিতে প্রায় শতাধিক গবাদিপশু মারা গেছে। অসুস্থতায় ভুগছে অনেক গবাদিপশু। 

এবার উপজেলা মৎস্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে দৌলতখান উপজেলায় ৯৫টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে ৭৪ মেট্রিক টন মাছ ও অবকাঠামো মিলে এক কোটি ৬১ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এসব চরে যদি সরকারি সহায়তা না পৌঁছায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ঘুরে দাড়াতে পারবে না। এ বিষয় ভোলার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. তৌফিক-ই-লাহী চৌধুরী জানান, ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় প্রাথমিকভাবে খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তালিকা করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে প্রয়োজনীয় সহায়তা করা হবে।
 


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন