তুমব্রুতে গোলাগুলির মধ্যে জ্বলছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প


বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তে দিনভর গোলাগুলির মধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্প দাউ দাউ করে জ্বলতে দেখা গেছে। এই সংঘর্ষে একজনের মৃত্যুর নিশ্চিত হওয়া গেলেও আরও হতাহত রয়েছে বলে স্থানীয়দের দাবি। তাঁরা বলছেন, মিয়ানমারের দুই সশস্ত্র গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলি এখনো চলছে।
আজ বুধবার সকাল ৬টা থেকে গোলাগুলি চলছিল। এর মধ্যে সন্ধ্যায় তুমরু শূন্যরেখায় থাকা কোনারপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প দাউ দাউ করে জ্বলতে দেখা যায়। এ ঘটনায় হামিদ উল্লাহ (২৭) নামে একজন নিহত হয়েছেন। যিনি ক্যাম্পের বাসিন্দা ছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
স্থানীয়রা বাসিন্দাদের অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সন্ধ্যায় রোহিঙ্গাদের বসতিতে আগুন দেওয়া হয়, যাতে অন্তত হাজারখানেক বাড়ি-ঘর পুড়ে যায়। এর আগেই প্রায় ২০০ রোহিঙ্গা পরিবার ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয় নেয়। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) অবস্থান নিতেও দেখা গেছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমেন শর্মা বলেন, ‘বিকাল ৫টার দিকে তুমব্রু শূণ্য রেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। আগুন এখনও জ্বলছে। ওই ক্যাম্পে আশ্রয়রত রোহিঙ্গাদের অনেকেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। আবার অনেক রোহিঙ্গা মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলে গেছেন। গোলাগুলির শব্দ আগের চেয়ে বেড়েছে।’
শূন্যরেখার কোনারপাড়া ক্যাম্পের বাসিন্দা রোহিঙ্গা কমিউনিটি লিডার দিল মোহাম্মদ বলেন, ‘মিয়ানমারের আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) নামে দুই সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে সকালে এই গোলাগুলি শুরু হয়।’
এর আগে দুপুরের দিকে শূন্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে দুজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় কুতুপালং আশ্রয়শিবিরসংলগ্ন এমএসএফ হাসপাতালে নিয়ে আসার কথা জানান উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী।
তিনি জানান, তাঁদের হাসপাতালে আনার পর একজনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। অপরজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁকে কক্সবাজার জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
গোলাগুলিতে আরেকজন নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেলেও পুলিশ বা বিজিবির পক্ষ থেকে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাঁকে আরসার সদস্য বলছেন স্থানীয়রা।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা আবদুল মাজেদ ও রশিদ আহমদ জানান, সকাল সোয়া ৬টায় আরসার গ্রুপ ‘আল-ইয়াকিনের’ ওপর প্রথম হামলা চালায় আরএসওর সদস্যরা। এতে আরসার দুই সদস্য আহত হন। অনেক নিরস্ত্র ও নিরীহ মানুষও আঘাত পেয়েছেন। বিকেল পর্যন্ত উভয় পক্ষের মধ্যে কয়েক হাজার গুলিবিনিময় হয়।
তুমব্রু বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, আজ বুধবার সকাল সোয়া ৬টায় হঠাৎ এই গোলাগুলির আওয়াজে বাজার কেঁপে ওঠে। পুরো রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকা রণক্ষেত্র পরিণত হয়।
তুমব্রুর আলী আকবর, আবদুর রাজ্জাক ও মোহাম্মদ সোহেল মিয়ার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তুমব্রু শূন্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ পুরো এলাকা আজ সারা দিন ছিল রণক্ষেত্র। মেশিন গান, রাইফেলসহ ভারী অস্ত্র থেকে গোলাগুলির আওয়াজে আতঙ্কিত স্থানীয় লোকজনের অনেকে নিরাপদে চলে গেছেন।
বেলা সাড়ে ৩টার দিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন জ্বলতে দেখেন তাঁরা। সন্ধ্যা নাগাদ পুরো ক্যাম্প আগুনে ভস্মীভূত হয়েছে বলে ধারণা করছেন তাঁরা।
এদিকে ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আজিজ গনমাধ্যমকে বলেন, ‘সকাল থেকে অব্যাহত গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। সেখানে কী হচ্ছে বলা যাচ্ছে না। ঘটনায় স্থানীয়রা চরম আতঙ্কে রয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে কক্সবাজার ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম চৌধুরীর মোবাইল ফোর নম্বরে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমেন শর্মা সাংবাদিকদের বলেন, ‘সকাল থেকে তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় থেমে থেমে গোলাগুলির খবর স্থানীয়দের মাধ্যমে জেনেছি।’
সূত্র: আজকের পত্রিকা
এইচকেআর
