ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি এখন জনদুর্ভোগের কারণ!

তরমুজ বিক্রিকে কেন্দ্র করে বরগুনার যত্রতত্র গড়ে উঠেছে নানা ধরনের ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি। এসব ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি বরগুনা পৌরসভাসহ নানা স্থানে নিয়ম না মেনেই ট্রাক ও লরি পার্কিং করে রাখছে। ফলে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ জনগণ।
সরেজমিনে দেখা যায়, বরগুনা সদর পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের বিআরটিসি বাসস্ট্যান্ড থেকে টাউনহল চৌরাস্তা পর্যন্ত আধা কিলোমিটার সড়কের দুপাশে সারিসারি ট্রাক পার্কিং করে রাখা হয়েছে। ফলে, স্কুল- কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও পথচারীরা নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।
বরগুনা পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা অ্যাডভোকেট আবদুল্লাহ আল মামুন মোল্লা জানান, ' পটুয়াখালীর পায়রা সেতুতে ওভারলোড ট্রাক পারাপার নিষিদ্ধ হওয়ায় পায়রাবন্দর, কুয়াকাটা, কলাপাড়া থেকে আগত অনেক ট্রাক- লরি বরগুনার এই রাস্তা থেকে চলাচল করে। তদুপরি, নতুন করে রাস্তার দুপাশে এভাবে ট্রাক রাখলে জনগণের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছুবে এবং প্রধান সড়কটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।'
বরগুনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান মারুফ মৃধা জানান, 'চরকলোনী হামিদিয়া সঃপ্রাঃ বিদ্যালয়ের সামনে ১০-১২ ট্রাক নিয়মিত রাখা হয়। এতে পথচারীদের চলাচলে অসুবিধা হয়। দু-তিনদিন আগে রাস্তার রেলিং ভেঙে পরার ঘটনাও ঘটেছে৷ তাছাড়া যারা সাধারণ যানবাহনে চলেন এবং বাইকাররা রাস্তায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।'
এছাড়া বরগুনার নতুন বাসস্ট্যান্ডের আশেপাশে অবাধে অনেকগুলো ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি গড়ে উঠেছে। এসব ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির বেশিরভাগ ট্রাকই যত্রতত্র পার্কিং করে রাখা হয়। সদরের ৯ নং বালিয়াতলী গ্রামে সাইনবোর্ড টানিয়ে গড়ে ওঠা পরিবহন এজেন্সির অফিসের সামনে ট্রাক ও লরি পার্কিংয়ের দৃশ্য চোখে পড়ে। তবে তরমুজ চাষীরা বলছেন, এখানে ট্রাক রাখার যুক্তিযুক্ত কারণ থাকলেও শহরের মধ্যে ট্রাক পার্কিং অযৌক্তিক।
বরগুনার উদীয়মান রাজনীতিবিদ অ্যাডভোকেট জুনায়েদ হোসেন জুয়েল জানান, ' এসব ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি একধরণের যোগাযোগ সন্ত্রাস। এরা কৃষকদের ক্ষতি তো করেই পাশাপাশি এদের কারণে সাধারণ জনগণ ভোগান্তির শিকার হন।'
পায়রা ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির সত্ত্বাধিকারী ইফতেকার রসূল মনু জানান, 'এখানে ট্রাক রাখার নির্ধারিত কোন স্থান না থাকায় এই সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। পৌর শহরের মধ্য থেকে বাসস্ট্যান্ড খাজুরতলা সরিয়ে নেওয়ার পর এখনো শহরে বিশৃঙ্খলভাবে বাস রাখা হয় অপরদিকে ট্রাক স্ট্যান্ডের জন্য সাময়িকভাবে যে স্থান নির্ধারণ করা তাও সীমিত। আমরা সমস্যা এড়াতে নতুন করে শহরের বাইরে ট্রাকস্ট্যান্ড চাই।'
জেলার অবহেলিত সড়কগুলো দীর্ঘ সময় পরে আলোর মুখ দেখলেও কিছুদিন যাবৎ মহাসড়ক ও প্রধান সড়কে ট্রাক থামিয়ে গাছ ওভারলোড করার দৃশ্যও দেখা যায়। প্রশাসনের কোন বাঁধা নিষেধই যেন তোয়াক্কা করছেন না এসব ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি লোকেরা!'
সড়ক বিভাগ বরগুনার উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ আমীর হোসেন জানান, মহাসড়ক ও শহরের প্রধান সড়কে এমন আবাধ পার্কিং সড়কের দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির কারণ হবে।'
জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম জানান, ' এ বিষয়ে আমি ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির সাথে কথা বলে সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা করবো।'
বরগুনা পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান মহারাজ জানান,' পৌরসভার মধ্যে এভাবে পার্কিং করার যৌক্তিকতা নেই, পুলিশ সুপারের সাথে কথা বলে আমরা দ্রুতই ব্যবস্থা নিবো।'
বরগুনার পুলিশ সুপার মো. আবদুস ছালাম জানান, 'শহরের মধ্যে এরকম পার্কিং করে থাকলে সেটা সম্পূর্ণ অবৈধ। এ বিষয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে ট্রাফিক বিভাগের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
অবহেলিত উপকূলের খানাখন্দে ভরা রাস্তাঘাট দীর্ঘ সময় বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে আলোর মুখ দেখছে বর্তমান সরকারের আমলে। তাই, এসব ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির যত্রতত্র পার্কিং ব্যবস্থা এখনি রোধ না করা হলে সাধারণ জনগণকে আবারো দীর্ঘ মেয়াদে ভোগান্তি পোহাতে হবে।
এইচকেআর