আল্লাহতায়ালা যে চার মাসেকে বিশেষভাবে সম্মানিত করেছেন মহররম তার অন্যতম
আল্লাহতায়ালা যে চার মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ এবং বিশেষভাবে সম্মানিত করেছেন, মহররম তার অন্যতম। এটি হিজরি বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস। মহররম মাসের ১০ তারিখকে আশুরা বলা হয়।
জাহেলি যুগে প্রাচীন আরবদের মধ্যে গুরুত্বের সঙ্গে পালিত হতো এ দিনটি। আশুরার দিন মক্কার মানুষ রোজা রাখত এবং কাবাঘরের গিলাফ পরিবর্তন করত। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দিনে রোজা রাখতেন এবং অন্যদের রোজা রাখার উৎসাহ ও নির্দেশ দিতেন। এ ছাড়া রমজানের রোজার আগে আশুরার রোজা ফরজ ছিল। রমজানের রোজা ফরজ হলে আশুরার রোজা মোস্তাহাব পর্যায়ের ঐচ্ছিক ইবাদত হিসেবে গণ্য করা হয়।
মহররম মাসে বহু স্মরণীয় ও যুগান্তকারী ঘটনা সংঘটিত হওয়ায় বিভিন্ন দিক দিয়ে এ মাসের গুরুত্ব অপরিসীম। মহররমের দশম দিবসে অর্থাৎ আশুরার দিনে সংঘটিত ঐতিহাসিক ঘটনাবলির মধ্যে রয়েছে–
১। আকাশ জমিন পাহাড়-পর্বত সবকিছুর সৃষ্টি।
২। আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়।
৩। নূহ (আ.) মহাপ্লাবন শেষে জুদি পাহাড়ে অবতরণ।
৪। হজরত ইব্রাহিম (আ.) নমরুদের প্রজ্বালিত অগ্নিকুণ্ড থেকে মুক্তিলাভ করেন।
৫। দীর্ঘ ১৮ বছর রোগ ভোগের পর হজরত আইয়ুব (আ.) দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্তি লাভ করেন।
৬। হজরত সুলাইমান (আ.)-কে পৃথিবীর একচ্ছত্র রাজত্বদান।
৭। হজরত ইউনুস (আ.)-কে ৪০ দিন পর দজলা নদীতে মাছের পেট থেকে উদ্ধার করা হয়।
৮। হজরত মুসা (আ.) ফেরাউনের কবল থেকে রক্ষা পান।
৯। হজরত ঈসা (আ.)-এর পৃথিবীতে আগমন এবং জীবিতাবস্থায় আসমানে উত্তোলন, যা পবিত্র কোরআনে সুরা আল ইমরানের ৫৫ নম্বর আয়াতে উল্লেখ রয়েছে।
১০। হজরত ইদ্রিস (আ.)-কে আসমানে উত্তোলন।
১১। হজরত দাউদ (আ.)-কে বিশেষ সম্মানে ভূষিত করা হয়।
১২। গাজওয়ায়ে খায়বার বিজয় অর্জন।
১৩। মাদায়েন ও কাদিসিয়ার যুদ্ধে বিজয় অর্জন।
১৪। প্রথম মানব হজরত আদম (আ.)-কে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়।
১৫। হজরত আদম (আ.)-কে জান্নাত থেকে দুনিয়ায় পাঠানো এবং গুনাহ মার্জনার পর তার সঙ্গে বিবি হাওয়াকে আরাফাতের ময়দানে জাবালে রহমতে পুনঃসাক্ষাৎ লাভ।
১৬। হজরত নূহ (আ.)-কে তুফান ও প্লাবন থেকে পরিত্রাণ।
১৭। হজরত সোলায়মান (আ.)-কে হারানো বাদশাশি ফিরিয়ে দেয়া।
১৮। হজরত ইয়াকুব (আ.)-এর হারানো পুত্র হজরত ইউসুফ (আ.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ লাভ।
১৯। প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) মক্কা থেকে হিজরত করতে মদিনায় যান।
২০। হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) এবং তার ৭৭ ঘনিষ্ঠজন স্বৈরশাসক ইয়াজিদের সৈন্যের মাধ্যমে কারবালা প্রান্তরে নির্মমভাবে শাহাদতবরণ করেন।
সূত্র: (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ১/১৩২, উসদুল গাবাহ, ১/২১ ফাতহুল বারী, ৪/২৯১ আর রাহিকুল মাখতুম ১/৬৮)
আরজেএন