বাংলাদেশের সঙ্গে পানিবণ্টন নিয়ে নতুন ‘হুমকি’ মমতার


ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে এবার ‘পানিযুদ্ধে’ অবতীর্ণ হলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সোমবার (২৯ জুলাই) বিধানসভায় তিনি জানিয়েছেন, একটি কমিটি (বিধানসভা থেকে) পানি নিয়ে আলোচনা করতে কেন্দ্রীয় সেচ মন্ত্রণালয়ে যাবে। সেই সঙ্গে লোকসভা এবং রাজ্যসভা থেকে তৃণমূলের সংসদীয় দলও সেখানে যাবে।
সোমবার বিধানসভার অধিবেশনে যোগ দেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। একাধিক বিষয়ে আলোচনা করেন। প্রধান প্রসঙ্গ ছিল পানিবণ্টন। পানি ছাড়ার বিরোধিতা ছাড়াও তিনি বাংলাদেশ এবং ভুটানের নদী প্রসঙ্গ তুলেছেন। জানিয়েছেন, ভুটানের ছাড়া পানিতে প্রতি বছর উত্তরবঙ্গের ক্ষতি হয়। আর পশ্চিমবঙ্গকে না জানিয়েই কেন্দ্র তাতে সম্মতি দিয়ে দেয়।
এছাড়া ভারত-বাংলাদেশ নদী কমিশনের আদলে ভারত-ভুটান নদী কমিশন গড়ে তোলার কথাও বলেছেন মমতা। নীতি আয়োগের বৈঠকেও সেই প্রস্তাব জানিয়ে এসেছেন তিনি। মমতা বলেন, নীতি আয়োগের বৈঠকে ইন্দো-ভুটান নদী কমিশন নিয়ে আমি বিশদে কথা বলে এসেছি। বাংলা হলো নৌকার মতো। সব পানি আমাদের রাজ্যে এসে পড়ে, আমাদের ভুগতে হয়। বিষয়টি আমি প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে রেকর্ড করে এসেছি।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ভুটান এবং সিকিমে বৃষ্টি হলে উত্তরবঙ্গে ক্ষতি হয়। ভুটান থেকে কেন্দ্রকে জানানো হয়, কিন্তু রাজ্যকে জানানো হয় না। বন্যায় বনভূমি, চা-বাগান শেষ হয়ে যাচ্ছে। বন্যপ্রাণ ভেসে যাচ্ছে। পানিচুক্তি নিয়ে দিল্লিতে আমি নিজের অবস্থান জানিয়ে এসেছি।
পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে আলোচনা না করে বিভিন্ন চুক্তি সম্পাদন এবং নবায়ন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ মমতার। তিনি বলেন, ফরাক্কা চুক্তি আবার নবায়ন করেছে। তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে একতরফাভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি সরকার। এই সংক্রান্ত বিষয়ে অনলাইনে সতর্কবার্তা দেয়া যায়। কিন্তু কিছুই করা হয়নি। ২০২৬ সালে ফরাক্কা চুক্তি নবায়ন হবে। ২০২৪ সালেই ঠিক করে দেয়া হচ্ছে কমিটি। যে কমিটি পাঠানো হচ্ছে, তাতে কেন্দ্রের নয়জন এবং রাজ্যের একজন প্রতিনিধি রাখা হচ্ছে।
তিস্তা প্রসঙ্গে মমতা বলেন, সিকিম ১৪ হাইড্রোপাওয়ার করে তিস্তার পানি অনেকটাই নিয়ে নিয়েছে। প্রতি বছর দার্জিলিং, কালিম্পং পানিতে ভেসে যায়। তিস্তা বন্ধ করে দিলে তো উত্তরবঙ্গ পানীয় জল, সেচের জল পাবে না।
বাংলাদেশের সঙ্গে পানিচুক্তির বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থের কথা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা উল্লেখ করে মমতা বলেছেন, ফারাক্কা ব্যারেজ কমিউনিটি মানুষের জীবন-জীবিকার ওপর নির্ভরশীল। আমিও বাংলাদেশকে দিয়েছি। কিন্তু আমি রাজ্যের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেব। কারণ, এখানকার মানুষ আমাকে নির্বাচিত করেছেন। নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য কেন্দ্র অগ্রিম চুক্তি করে দিচ্ছে। বাংলা কোনো আলোচনায় থাকতে পারছে না।
মালদহে প্রতি বছর ভাঙনের প্রসঙ্গ বিধানসভায় তুলে ধরেন তিনি আরও বলেন, ‘ঝাড়খণ্ড, বিহার এবং উত্তরপ্রদেশে বন্যা হলে মালদহে ভাঙন হচ্ছে। ২০০৫ সাল থেকে ৩ হাজার ৩৭৩ হেক্টর জমি নদীতে তলিয়ে গেছে। রতুয়া, কালিয়াচকে ভাঙন বাড়ছে। ১৯৯৬ সালে এই চুক্তি করার সময় জ্যোতি বসুর সঙ্গে আলোচনা করেছিল কেন্দ্র। পরে তাকে বাংলাদেশ সংবর্ধনাও দেয়। কিন্তু এবার বাংলাকে পুরোপুরি বাদ দিয়ে দেয়া হয়েছে।
পানি-সমস্যা সমাধানের জন্য রাজ্য সরকার কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে, ভবিষ্যতে এর সমাধান কীভাবে করা যায়, তার উপায় বলে দিয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘নদী সংক্রান্ত বিষয়ে সেচসচিব প্রতিদিন আমাকে জানান। আমি সব খবর রাখি। পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নিই। ৫০০ কোটি টাকার বাঁধ আমরা নির্মাণ করেছি। পাঁচ লাখের বেশি পুকুর কেটেছি। ২ হাজার ২৩২ কোটি টাকা খরচ করে লোয়ার দামোদর বেসিন করেছি। এতে বর্ধমানে বন্যা কমবে।’
পানি নিয়ে রাজ্যের প্রস্তাব কেন্দ্রকে জানাতে বিধানসভার কমিটি যাবে সেচ মন্ত্রণালয়ে। মমতার বক্তৃতা শেষ হওয়ার পর বিধানসভার স্পিকার জানান, পরিষদীয় মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে এই কমিটি গঠন করা হবে। বিধানসভায় যা আলোচনা হলো, তার কপি দলের সাংসদদের কাছেও পাঠিয়ে দিতে বলেছেন মমতা। জানিয়েছেন, রাজ্যসভা এবং লোকসভা থেকে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল পানি-সমস্যা নিয়ে দিল্লিতে যাবে।
এইচকেআর
