ঢাকা সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪

Motobad news

আমতলীতে ভবন নির্মাণে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ

আমতলীতে ভবন নির্মাণে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের গুরুদল গ্রামে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে প্রতিষ্ঠিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম তলা ভবন নির্মানের কাজে দুর্নীতি এবং অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

এছাড়া কাজ ১৮ মাসে শেষ করার কথা থাকলেও ঠিকাদারের গাফেলতির কারনে ৫ বছরেও শেষ হয়নি। নির্দিষ্ট সময়ে ভবন নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় শিক্ষক শিক্ষার্থীরা পড়েছে ভোগান্তিতে। 

ভবন না থাকায় নিরুপায় হয়ে তারা এখন বৃষ্টিতে ভিজে ছোট একটি টিন শেডেরে ঘরে ক্লাশ করতে বাধ্য হচ্ছে। দ্রুত ভবন নির্মানের দাবী জানিয়েছে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা।

জানা গেছে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময় ১৯৭২ সালে আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের গুরুদল গ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে ‘বঙ্গবন্ধু নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়’ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়।

বিএনপি ও জাতীয় পার্টির শাসনামলে নানা চড়াই উৎরাই পেড়িয়ে বিদ্যালয়টি বর্তমানে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে উন্নীত হয়েছে। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে একটি জরাজীর্ন ভবনে প্রায় ২শতাধিক শিক্ষার্থীদের নিয়ে ক্লাশ পরিচালনা করে আসছে শিক্ষকরা। 

ভবনের  দুরবস্থার কথা বিবেচনা করে সরকার ৩ কোটি ৭১ লক্ষ ৫৯ হাজার ৮শ’ ১৩ টাকা ব্যায়ে চতুর্থতলা একটি ভবন বরাদ্ধ দেয় এই স্কুলের নামে। 

২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের আহবান করা দরপত্রের মাধ্যমে কাজটি পায় যৌথ ভাবে পরিচালিত পটুয়াখালীর মেসার্স হাজী এন্টার প্রাইজ ও মেসার্স কহিনুর এন্টার প্রাইজ নামে পটুয়াখালীর দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠান দুটির মালিক হচ্ছেন পটুয়াখালীর জাহাঙ্গীর বিশ্বাস নামে এক ঠিকাদার। 

তিনি ২০১৯ সালের ৭ এপ্রিল কার্যাদেশ পেয়ে কাজ শুরু করেন। কার্যাদেশের তারিখ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে অর্থাৎ ২০২০ সালের ৬ মার্চের মধ্যে ভবনটি নির্মাণ শেষে স্কুল কর্তৃপক্ষের নিকট বুঝিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও দীর্ঘ  ৫বছরেও ভবন  নির্মাণ কাজ শেষ না করে ঝুলিয়ে রেখেছে ঠিকাদার। 

ভবন নির্মাণে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে দুর্নীতিরও অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, ঠিকাদার পরিমানের চেয়ে রড, সিমেন্ট কম দিয়েছেন এবং নিম্ন মানের বালু ইট ব্যবহার করেছেন। এতে ভবন বেশীদিন টিকসই হবে না।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কঙ্কালের মত পিলারে উপর এবকটি চারতলা ভবন দাড়িয়ে রযেছে। কিছু স্থানে দেয়ালের ইটের গাথুনি দেওয়া হলেও চারতলার পুরো জায়গা এখনো ফাকা।

 অন্যান্য তলায় কিছু ইটের গাঁথুনি দিলেও অধিকাংশ জায়গা রয়েছে গাথুনি বিহীন। পলেস্তারের আচর পরেনি এখনো কোথাও। বর্তমানে বৃষ্টির অজুহাত তুলে ভবনের নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে ঠিকাদার। 

এভাবে বিদ্যালয় ভবনটি পরে থাকতে দেখে গ্রামের অভিভাবক কদম আলী হাওলাদার আক্ষেপ করে বলেন, আদৌ কি এই ভবন নির্মান হবে নাকি ঠিকাদার টাকা মেরে খেয়ে চলে যাবে। 

ভবন নির্মাণের কাজ এভাবে ৫ ভছর ধরে পরে থাকায় নিরুপায় হয়ে পাশের ৩ কক্ষের একটি ভাঙ্গা টিন সেডের ঘরে প্রায় দেড় থেকে দুই শতাধিক শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রতিদিন ঠাসাঠাসি করে ক্লাশ করছেন শিক্ষকরা। 

বহু পূর্বে নির্মিত চালার টিন মরিচা ধরে নষ্ট হওয়ায়  বৃষ্টির সময় পানি পড়ায় তখন ক্লাশ বন্ধ রাখতে বাধ্য হন শিক্ষকরা।

বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী হৃদয়, অষ্টম শ্রেণির সুরাইয়া ও সপ্তম শ্রেণির মাইসা বলেন, ভবনের অভাবে আমরা পুরাতন একটি টিনের ঘরে গাদাগাদি করে ক্লাশ করি। 

জায়গার অভাবে আমরা ঠিকমত ক্লাশ করতে পারি না। বৃষ্টির সময় পানি পরে। পানিতে বই খাতা ভিজে যাওয়ায় স্যারেরা তখন নিরুপায় হয়ে ক্লাশ বন্ধ রাখেন। দ্রুত আমরা ভবন নির্মাণের দাবী জানাই।

বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আউয়াল বলেন, ঠিকাদার ভবন নির্মাণে নানা রকম দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন। দ্রুত ভবন নির্মানের জন্য আমি উপজেলা মাধ্যমিক এবং বরগুনার শিক্ষা প্রকৌশল অফিসকে জানিয়েছি তাতেও কোন কাজ হচ্ছে না।

বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সাবেক সভাপতি এ্যাডভোকেট আরিফ উল হাসান অভিযোগ করে বলেন, ঠিকাদার ভবন নির্মাণে নানা রকমের দুর্নীতি করেছে। সে ভবনের নির্মাণে নিম্ন মানের ইট বালু রড ব্যাবহার করেছেন।

তার দুর্নীতির কারনে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় তৈরি হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ভবন নির্মাণে বিলম্ভের জন্য আমরা বহুবার ঠিকাদরকে তাগাদা দিয়েছি। সে আমাদের কথা কর্নপাত করছে না। 

বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সাবেক সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডভোকেট এমএকাদের মিয়া বলেন, আমি সভাপতি এবং উপজেলা চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় ঠিকাদারসহ শিক্ষা অফিস এবং বরগুনার শিক্ষা প্রকৌশলীকে জানিয়েছে। কিস্তু ঠিকাদার কারো কোন কথা আমলে নিচ্ছে না।

আমতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অলি আহাদ বলেন, ভবন নির্মানের বিষয়ে আমি অবগত না। শিক্ষা প্রকৌশল  বরগুনা এ বিষয়ে আমাকে খকনো কোন বিষয়ে কিছু জানায়নি।  

অভিযুক্ত ঠিকাদার জাহাঙ্গীর বিশ্বাস মুঠোফোনে ভবন নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বৃষ্টির কারনে আপাতত কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু শুকনো মৌশুমে কেন কাজ শেষ করেননি এ প্রশ্নের তিনি কোন উত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দেন।

বরগুনার শিক্ষা প্রকৌশল কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাশেদুল ইসলাম বলেন, আমি ৩ মাস হয় বরগুনায় যোগদান করেছি। যোগদানের পর বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভবন নির্মানের কাজ পরিদর্শন করে ঠিকারকে দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য চিঠি দিয়েছি। চিঠি দেওয়ার পর কাজও শুরু করেছিল।

শুনেছি এখন আবার কাজ বন্ধ রেখেছে। বর্তমানে তার বিল বন্ধ রাখা হয়েছে। অনিয়ম এবং দুর্নীতির বিষয়টিও তদন্ত করে দেখা হবে বলে জানান। তিনি আরো বলেন, এ বিষয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী সিদান্ত নেওয়া হবে।

আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম বলেন, বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভবন নির্মানে অনিয়মের বিষয়টি আমি জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় উত্থাপন করেছি। এবং এ বিষয়ে তদন্ত করার জন্য সিদান্ত হয়েছে।  

বরগুনার শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী বদরুল আলম বলেন, বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভবন নির্মাণে অনিয়মের বিষয়ে জেলা সমন্বয় সভায় আলোচনা এবং তদন্ত করার বিষয়ে সিদান্ত হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত করা হবে।  তদন্তে দুর্নীতির প্রমান পাওয়া গেলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ না হওয়া প্রসঙ্গে বলেন, ঠিকাদার সময়ের আবেদন করেছে কাজে বিলম্ব হলে ঠিকাদারকে জরিমানা করারও ব্যবস্থা আছে। 

বরগুনা জেলা প্রশাসক রফিকুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভবন  নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতিরি বিষয়ে জেলা সমন্বয় সভায় আলোচনা শেষে নির্বাহী প্রকৌশলীকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্তে অনিয়ম এবং দুর্নীতি প্রমান পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে  আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন