ঢাকা শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

Motobad news
আলোচনা সভায় প্রেস সচিব

সংবাদ চুরি করে যারা গণমাধ্যম চালায়, তাদের বন্ধ করে দেওয়া উচিত

সংবাদ চুরি করে যারা গণমাধ্যম চালায়, তাদের বন্ধ করে দেওয়া উচিত
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

যারা সংবাদ চুরি করে গণমাধ্যম চালান, তাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

তিনি বলেন, ‘আমাদের কপিরাইট এনফোর্সমেন্ট খুবই জরুরি। এ বিষয়ে সব সাংবাদিকদের জোরালো কথা বলতে হবে। আপনি দুই মাস খেটে একটা নিউজ করলেন, সেটা অন্য কোনো নিউজ পোর্টাল এক সেকেন্ডে কপি করে ফেলল। আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর একটা ছবি তুললেন, সেটা একটা বড় পত্রিকা আপনার অনুমতি ছাড়া প্রকাশ করে ফেলল। আপনাকে কপিরাইট এনফোর্সমেন্ট দিতে হবে। কারণ, এটি আপনার আয়ের উৎস।’

শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ‘গণমাধ্যম সংস্কার প্রস্তাব : নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

শফিকুল আলম বলেন, ‘যারা সংবাদ চুরি করে তাদের বন্ধ করে দেওয়া উচিত। প্রেস কাউন্সিল অনেক কথা বলে, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি অনেক কথা বলে, নোয়াব অনেক কথা বলে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত যারা এ রকম চুরি করছে, তাদের বন্ধ করে দেওয়া। এই চুরির কারণে আপনার আমার বেতন কমে যাচ্ছে। কপিরাইট এনফোর্সমেন্ট আমাদের দেশে নেই বলে সবাই চুরি করে।

তিনি বলেন, ‘জার্নালিজম করতে হলে আপনাকে পয়সা খরচ করতে হবে। পয়সা না থাকলে আপনি এ পথে আসবেন না। আপনাকে সাংবাদিকদের বেতন দিতে হবে। জার্নালিস্টদের রক্ত এত সহজ না। জার্নালিস্টদের নিয়ে যারা কাজ করেন, তাদের সত্যিকার অর্থে এই বিষয়টি দেখা উচিত।

সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে শফিকুল আলম বলেন, আমাদের গার্মেন্টস সেন্টারে কর্মীরা যদি তাদের বেতনের জন্য এত বড় ফাইট করতে পারে, আপনারা কেন পারবেন না? আপনি যে সংবাদ মাধ্যম চালান না কেন, আপনাকে ভালো সাংবাদিক রাখতে হবে এবং মিনিমাম মজুরি দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা গণমাধ্যমের সংস্কার করতে যাচ্ছি। কারণ, গণমাধ্যমকে গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী সরকার ব্যবহার করেছে। বাংলাদেশে যতগুলো গণমাধ্যম আছে, সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার সক্ষমতা তাদের ছিল। ডিজিএফআইয়ের একটা ফোন কল, এনএসআইয়ের একটা ফোন কল, ডিজির একটা ফোন কল, মিনিস্টারের একটা ফোন কল তখন সংবাদ মাধ্যমের জন্য এনাফ ছিল। আইসিটি নামে যেটা ছিল সেটায় ন্যায়বিচার ছিল না। সেটা ভয়াবহ অন্যায়-অবিচার ছিল।’ 

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে থাকা নসরুল হামিদ মিলনায়তন নসরুল হামিদ তার নিজস্ব টাকায় করেছেন কি না সেটা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি। এই নামটি রাখা উচিত কি না, তা রিপোর্টার ইউনিটিকে ভাবার পরামর্শও দেন।

যুক্তরাজ্য দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আকবর হোসেন বলেন, ‘৫ আগস্টের পরে আমরা অনেক পরিবর্তনের কথা বলছি। গার্মেন্টস সেক্টরের মতো ন্যূনতম মজুরির কথা বলছি। কিন্তু কয়টা মিডিয়ায় এই মানদণ্ড আছে? ওয়েজ বোর্ড যেটা আছে সেটা শুধু পত্রিকার জন্য। আমরা যদি একটা মানদণ্ড ঠিক করতে পারি, আপনি যদি এটা ঠিক করতে পারেন, তাহলে আপনি পত্রিকা রান করতে পারবেন, না হলে পারবেন না।’

তিনি বলেন, ‘অনেকে আছে যারা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলেন। কিন্তু ইন হাউজে তার রিপোর্টারকে কেয়ারই করেন না। একটা রিপোর্টারের কতটা খাটুনি, সপ্তাহে মানসম্পন্ন রিপোর্ট করতে কত খাটুনি যায়, সেটা তারা কেয়ারই করে না। মিডিয়া হাউজগুলোর অ্যাকাউন্টেবিলিটি থাকা দরকার। আমাদের ভুল হতে পারে। কিন্তু উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে কোনো কিছু করা পরিহার করতে হবে। মিডিয়া হাউজে থেকে আপনি একটিভিজম করবেন আর বলবেন স্বাধীনতা নাই এটা করা যাবে না। আপনি সাংবাদিকতা ছেড়ে দিয়ে একটিভিজম করবেন, সমালোচনা করবেন, তাতে কোনো সমস্যা নেই।’

আলোচনা সভা থেকে ১৩টি প্রস্তাবনা উত্থাপন করা হয়। প্রস্তাবনাগুলো হচ্ছে— গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ, গণমাধ্যমে নৈতিকতা ও পেশাদারিত্ব প্রতিষ্ঠা, সরকারি নিয়ন্ত্রণ রোধে স্বতন্ত্র গণমাধ্যম কমিশন গঠন, মালিকানা ও অর্থায়নের স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ, সাংবাদিকদের নিয়োগ প্রক্রিয়া ও চাকরির নিরাপত্তা, বেতন কাঠামোর সংস্কার, সাইবার নিরাপত্তা আইনের সংস্কার, সাংবাদিকদের সুরক্ষায় আইন প্রণয়ন, বাজেটে গণমাধ্যমের জন্য বরাদ্দ রাখা, গণমাধ্যম নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজিকরণ, আঞ্চলিক ও বিকল্প গণমাধ্যমের উন্নয়ন, তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিতকরণ এবং জনগণের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা।

এ সময় আরও বক্তব্য দেন- ফ্যাসিবাদমুক্ত গণমাধ্যম চাই-এর মুখপাত্র প্লাবন তারিক, আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীন শিশির, সাইবার অ্যাক্টিভিস্ট আব্বাস উদ্দিন নয়ন, আইনজীবী মোল্লা ফারুক এহসান এবং উত্তরা ইউনিভার্সিটির প্রভাষক মাহবুব আলম প্রমুখ।


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন