ঢাকা বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

Motobad news

ভিজিএফের চাল নিয়ে বিএনপি, জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের সংঘর্ষে আহত ৮

ভিজিএফের চাল নিয়ে বিএনপি, জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের সংঘর্ষে আহত ৮
ছবি: সংগৃহীত 
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

ভোলার মনপুরায় ভিজিএফের চাল বণ্টন নিয়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনের কর্মী-সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়েছে। রবিবার (২৩ মার্চ) উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়ন পরিষদে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় অন্তত আটজন আহত হন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, সকালের দিকে উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের কাছে ছমেদপুরা বাংলাবাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ঈদ উপলক্ষে বিজিএফ চাল বিতরণ করা হচ্ছিল।


চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ এনে সেখানে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত হন। এ সময় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন সংঘর্ষে জড়ান।

এই ঘটনায় অন্তত ১২ জন আহত হন। আহতরা হলেন মো. নোমান, মো. রাসেল, মো. রাশেদ, মো. কাওছার, হুমায়ুন কবির, মহিউদ্দিন, হাফেজ রাকিব ও আব্বাস।


তাদের মধ্যে পাঁচজনকে চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। বাকিরা মনপুরা উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন। 

মনপুরা উপজেলা ইসলামী আন্দোলনের সভাপতি মো. এনায়েত হোসেন ও উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা আবু সুফিয়ান জানান, ঈদ উপলক্ষে উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নে ১০ কেজি করে এক হাজার ৫০০ জনের নামে ভিজিএফ চাল এসেছে। ইউনিয়নের প্রশাসক উপজেলা সমবায় অফিসার নাছির উদ্দিন এ দেড় হাজার নামের মধ্যে স্থানীয় বিএনপিকে ৮০০, জামায়াতে ইসলামীকে ১০০ ও ইসলামী আন্দোলনকে ৫০টি নাম দিয়েছে।


তাদের দেওয়া নামগুলো হতদরিদ্রদের দিলেও বিএনপির নেতাকর্মীরা একেক জন ৫-৭ বস্তা করে চাল নিয়ে যাচ্ছেন। যার ফলে হতদরিদ্ররা চাল ঠিকমতো পাচ্ছেন না। এর প্রতিবাদে একটি মিছিল নিয়ে স্থানীয় ছমেদপুর বাংলাবাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মাঠে (চাল বিতরণের স্থান) যান তারা। 

তিনি আরো জানান, মিছিলের নেতৃত্বে থাকা ৪-৫ জন প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলতে যান। বাকিরা বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন।


পরে প্রশাসক তাদেরকে বিদ্যালয়ের পাশে ইউনিয়ন পরিষদের নিয়ে যান। তারা যখন পরিষদের মধ্যে প্রবেশ করেন তখনই বিএনপির ২০০-৩০০ নেতাকর্মী লাঠিসোঁটা নিয়ে তাদের নেতাকর্মীদের ওপর অতর্কিত হামলা করেন। হামলার নেতৃত্বে ছিলেন ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সভাপতি মো. নোমান দালাল, তার ভাই মামুন, সামছু ও সাহাবুদ্দিন।

অভিযুক্ত উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের যুবদলের সাবেক সভাপতি মো. নোমান হামলার বিষয়টি অস্বীকার করে কালের কণ্ঠকে জানান, তারা মিছিল নিয়ে এসে প্রশাসককে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় লোকজন তাদের ওপর হামলা করেছে। তিনি এ হামালার সাথে জড়িত না।

মনপুর উপজেলা সমবায় অফিসার ও উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের প্রশাসক মো. নাছির উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, তার ইউনিয়নে ঈদ উপলক্ষে দরিদ্রের জন্য যে ভিজিএফ চাল এসেছে সেগুলো স্থানীয় বিএনপিকে ৮০০, জামায়াতে ইসলামীকে ১০০ ও ইসলামী আন্দোলনকে ৫০টি নাম দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ইসলামী আন্দোলন ও জামায়াতে ইসলামী আপত্তি জানালে তিনি তাদেরকে আরো ৫০টি করে নাম বাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেন। এই প্রস্তাব তারা অনেকটা মানেনও। 

তিনি আরো জানান, সকালে চাল বিতরণের সময় ইসলামী আন্দোলন ও জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দ একটি মিছিল নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলতে আসেন। এ সময় তাদের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের অস্থায়ী কার্যালয়ে যাওয়ার সময় সংঘর্ষ বাধে। এ সময় তিনি থামানোর চেষ্টা করলেও কেউ তার কথা শুনেনি।

মনপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান কবির জানান, মনপুরায় ভিজিএফ চাল বিতরণ চলছিল। এ সময় তাদের দলীয় সমর্থকরা কার্ড না পাওয়া নিয়ে ইসলামী আন্দোলন ও জামায়াতে ইসলামীর কর্মী-সমর্থকরা এক হয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত হয়। এতে হাতাহাতির এক পর্যায়ে মারামারির ঘটনায় কয়েকজন আহত হয়। পরে পুলিশ ও নৌবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এ ঘটনায় কোনো পক্ষ থানায় অভিযোগ করেনি।


মনপুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিখন বণিক  জানান, উত্তর সাকুচিয়ায় ভিজিএফ চাল নিয়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনের সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছে। কোনো দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে নাম ভাগ করে দেওয়ার সুযোগ নেই। ইউনিয়নের প্রশাসক যদি এরকম করে থাকেন তাহলে বিষয়টি নিয়ে বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন