পরকীয়ার জেরে যুবককে বরিশাল থেকে কুমিল্লায় নিয়ে গলা কেটে হত্যা


পরকীয়ার জেরে বরিশাল থেকে কুমিল্লায় নিয়ে শ্বাস রোধ ও গলাকেটে এক যুবককে হত্যা করা হয়েছে।
গত ১২ জুলাই কুমিল্লার তিতাসে গাছের নীচ থেকে এক যুবকের লাশ উদ্ধার হয়। সেই ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
পরকীয়ার জেরে ইমতিয়াজ নামের ওই যুবককে প্রথমে শ্বাস রোধ এবং পরে গলাকেটে হত্যা করা হয়।
বৃহস্পতিবার বিকেলে কুমিল্লা পিবিআই কার্যালয়ের কনফারেন্স হলে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন কুমিল্লা পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারওয়ার আলম।
এ ঘটনায় অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই। তারা হলেন, বরিশালের কাজীরহাট থানার ছৈয়তক্তা এলাকার মৃত সিরাজুল ইসলাম মোল্লার ছেলে সোহেল ইসলাম (৪০), সোহেলের ছেলে শাহীন ইসলাম (১৯) এবং মেহেন্দীগঞ্জ থানার হেসামউদ্দিন এলাকার মৃত জালাল হাওলাদারের ছেলে হানিফ হাওলাদার (৬১)।
পুলিশ সুপার জানান, গত ১২ জুলাই কুমিল্লার তিতাস উপজেলার জিয়ারকান্দি গুলবাগ এলাকায় সড়কের পাশে গাছের নিচে গলাকাটা একটি মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেন স্থানীয়রা। পরে পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে।
নিহত ইমতিয়াজ ওরফে মান্না (২২) বরিশালের কাজীরহাট থানার পূর্ব রতনপুর এলাকার দুলাল হাওলাদারের ছেলে।
এ ঘটনায় পিবিআইয়ের ক্রাইম সিন টিম ছায়াতদন্ত শুরু করে। পরের দিন ১৩ জুলাই নিহত ইমতিয়াজ ওরফে মান্নার বাবা দুলাল হাওলাদার বাদি হয়ে তিতাস থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
কুমিল্লা পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক আবু বকর তথ্যপ্রযুক্তির সহযোগিতায় হত্যাকারীদের শনাক্ত করেন। ১৫ জুলাই (মঙ্গলবার) দিবাগত রাত তিনটার রাজধানীর কামরাঙ্গীচর থানার মুন্সিহাটি এলাকা থেকে মূল ঘাতক সোহেল ও তার ছেলে শাহীনকে গ্রেপ্তার করেন। তাদের দেওয়া তথ্যমতে ১৬ জুলাই (বুধবার) হত্যায় অংশ নেয়া আবু হানিফ হাওলাদারকে রাজধানীর রাজাবাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘাতকরা জানায়, হত্যাকারী সোহেল হোসেন বরিশালে গ্রামের বাড়িতে স্ত্রী ও মেয়েকে রেখে ছেলেকে নিয়ে ঢাকায় গাড়ি চালানোর চাকরি করতেন। গ্রামে গিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে ইমতিয়াজ ওরফে মান্নার পরকীয়া প্রেমের কথা জানতে পারেন তিনি। পরবর্তীতে সোহেল তার মাদরাসা পড়ুয়া মেয়েকে (১৫) বরিশালে দাদির কাছে রেখে স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন।
এদিকে মায়ের বিভিন্ন অশ্লীল ভিডিও ভাইরাল করার ভয় দেখিয়ে মেয়েকেও শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করে ইমতিয়াজ। এ ঘটনার কথাও সোহেল জেনে যায়।
এ ঘটনায় ক্ষুদ্ধ হয়ে সোহেল তার ছেলে শাহীন এবং মামা হানিফ হাওলাদার ইমতিয়াজ ওরফে মান্নাকে হত্যার ছক আঁকেন। হত্যার দিন একটি লাল মাইক্রোবাসে করে ইমতিয়াজ কে সিলেট নেওয়ার প্রলোভন দেখান হত্যাকারীরা। পরে সিলেট না গিয়ে কুমিল্লার তিতাসের জিয়ারকান্দি এলাকায় আসেন তারা। এ সময় গাড়িতেই ইমতিয়াজকে শ্বাসরোধ করেন তিনজন মিলে। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর রাস্তায় লাশ ফেলে রাখেন তারা।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, ঘটনায় জড়িত এবং গ্রেপ্তার করা তিনজনকে বৃহস্পতিবার আদালতে তোলা হয়েছে। তিন আসামিই আদালতে ১৬৪ ধারায় হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলাটির তদন্ত আরও চলমান রয়েছে। ঘটনায় জড়িত অন্য কেউ থাকলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই কুমিল্লা কার্যালয়ের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এইচকেআর
