ঢাকা শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫

Motobad news

শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে গ্রেপ্তার

শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে গ্রেপ্তার
শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে। ছবি: সংগৃহীত
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দেশটির নতুন বামপন্থী সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের মধ্যে তিনিই এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ পর্যায়ের বিরোধীদলীয় কোনো নেতা, যাকে গ্রেপ্তার করা হলো।

পুলিশ কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ৭৬ বছর বয়সী বিক্রমাসিংহেকে তাঁর ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে লন্ডন সফরের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ওই সময়ে তিনি রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি তাঁর স্ত্রীর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এই সফরে গিয়েছিলেন। এই সফরের জন্য সরকারি তহবিলের অপব্যবহার করেছেন। বিক্রমাসিংহে হাভানা থেকে জি৭৭ শীর্ষ সম্মেলন শেষে লন্ডন সফর করেছিলেন। পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তাঁকে কলম্বো ফোর্ট ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করা হবে। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত কাজে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যবহারের অভিযোগ আনা হয়েছে।

স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিক্রমাসিংহে আজ শুক্রবার সকালে নিজেই কলম্বোর আর্থিক অপরাধ তদন্ত বিভাগে (এফসিআইডি) আত্মপক্ষ সমর্থন করে তাঁর বিবৃতি দিতে গিয়েছিলেন। সেখানে তাঁকে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের পর হেফাজতে নেওয়া হয়।

এই গ্রেপ্তারের মাধ্যমে বর্তমান প্রেসিডেন্ট অনুরা কুমারা দিশানায়েকের সরকার সাবেক রাষ্ট্রপ্রধানদের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের তদন্তে তাদের কঠোর অবস্থান তুলে ধরল।

উল্লেখ্য, দিশানায়েকের নতুন সরকার গত সেপ্টেম্বরে ক্ষমতায় আসার পরই দুর্নীতি দমনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

রনিল বিক্রমাসিংহের গ্রেপ্তার শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। তাঁর সমর্থকেরা এই গ্রেপ্তারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিযোগ করছেন। তাঁরা মনে করছেন, এটি বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমনের একটি কৌশল। অন্যদিকে, ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, দুর্নীতি দমন ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্যই এই পদক্ষেপ।


বিক্রমাসিংহে ছাড়াও নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে দুই জন সাবেক জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীকে দুর্নীতির অভিযোগে ২৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসের পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধেও রাষ্ট্রীয় তহবিলের অপব্যবহারের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ছাড়া, তৎকালীন পুলিশ প্রধান ও কারা প্রধানকেও দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত ও কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে দেশব্যাপী গণবিক্ষোভের মুখে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে পদত্যাগ করে পালিয়ে যান। রনিল বিক্রমাসিংহে ২০২২ সালের জুলাইয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন। তাঁর মেয়াদকালে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা নিশ্চিত করেন এবং কঠোর ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করে অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার কৃতিত্বও তাঁর।

তবে, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে আয়োজিত জাতীয় নির্বাচনে পরাজিত হন। তাঁর জোট ২২৫ আসনের পার্লামেন্টে মাত্র দুটি আসন পায়। তবুও তিনি বিরোধী দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে রয়ে গেছেন।


গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন