করোনাকালীন দেনা শোধ করতে কিডনি বিক্রি করবেন নবীন


একজন মুক্তিযোদ্ধার গল্প লেখক, শিশু সাহিত্যিক ও চিত্রশিল্পী সাইফুল্লাহ্ নবীন। শিল্পচর্চা করে যা উপার্যন তা দিয়েই চলতো তার পাঁচ সদস্যের সংসার। বৈশ্বিক মহামারি করোনায় কাজ হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি। উপার্জন বন্ধ হওয়ায় সংসার চলছে না তার। করোনার শুরু থেকে ধার দেনা করে সংসার চালাচ্ছিলেন নবীন।
এখন এক দিকে সংসারে অভাব, অন্যদিকে পাওনাদারদের চাপ। দুয়ে মিলে দারুন হতাশাগ্রস্থ নবীন এখন নিজের কিনটি বিক্রি করে দেনা শোধ করতে চাচ্ছেন।
রোববার বেলা পৌঁনে ১২টার দিকে বরিশাল নগরীর সদর রোডস্থ অশ্বিনী কুমার টাউন হলের সামনে দাঁড়িয়ে গলায় ঝুলিয়ে কিডনি বিক্রির প্লাকার্ড প্রদর্শন করেন তিনি।
যেখানে লেখা ছিলো- ‘করোনা দুই বছরের কাছাকাছি, অসহায় মানুষ, অসহায় আমি, কাজ নেই কর্ম নেই ৩ লাখ টাকা ঋণ, ঋণ পরিশোধ করতে কিডনি বিক্রি করতে চাই, রক্তের গ্রুপ ‘বি’ পজেটিভ’।
সাইফুল্লাহ্ নবীনের গলায় ঝুলানো এমন প্ল্যাকার্ড দেখে চলার গতি থেমে যায় কৌতূহলী পথচারীদের। তারা দাঁড়িয়ে থেকে নবীনের গলায় প্রদর্শিত কিডনি বিক্রির প্ল্যাকার্ড প্রত্যক্ষ করেন। করোনাকালে সরকারি সুযোগ সুবিধা নিয়েও মুখরোচর মন্তব্য করেন অনেকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ‘বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার চরহোগলা গ্রামের চেলে সাইফুল্লাহ্ নবীন। করোনার পূর্বে লেখালেখির পাশাপাশি ঢাকায় বাংলা একাডেমীর একুশের বই মেলায় বর্ণমালা শিল্প ও স্টল সাজসজ্জার কাজ করতেন তিনি।
আলাপকালে সাইফুল্লাহ্ নবীন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার প্রকাশিত ৪৯টি বই বাজারে আছে। এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক ১০টি, শিশুতোষ গল্পের বই ২১টি, উপন্যাস ১৪টি, এবং শিশুদের ছবি আঁকার বই রয়েছে ৪টি। মোটামুটি ভালই চলতো বইগুলো। কিন্তু করোনাকালে বই বিক্রি শূণ্যের কোটায় নেমে গেছে। সাইনবোর্ড শিল্প তথা ছবি আঁকার কাজও নেই।
নবীন আরও বলেন, ‘করোনাকালীন প্রায় দুই বছরে জমি বন্ধক রেখে এবং আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা ধার দেনা করে সংসারের ভরন পোশন করেছি। শোধ করতে না পারায় এখন আর কেউ নতুন করে টাকা ধার দিতে চাচ্ছে না। বই লেখার যে সম্মানী রয়েছে তাও দিচ্ছেন না প্রকাশকরা। এমন পরিস্থিতিতে পাঁচ সদস্যের পরিবার নিয়ে পথে বসার উপক্রম ঘটেছে।
সাইফুল্লাহ্ নবীন বলেন, ‘আমার কাছে আর কোন বিকল্প পথ নেই। আমাদের মত অসহায়দের দিকে হাত বাড়ানোর কোন মানুষ নেই। তাই ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া এবং সংসারের ব্যয় নির্বাহ এবং পাওনাদারদের ঋণ পরিশোধ করতে কিডনি বিক্রি করার উদ্যোগ নিয়েছি। বেঁচে থাকার চেয়ে কিডনি দুটি বিক্রি করে দেনা শোধ করে মরে যাওয়া অনেক ভালো বলেন তিনি।
কেআর
