চরমোনাই আমিরের আসনে ভাগ বসাতে চায় জামায়াত

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনের নেতৃত্বে গঠিত সমমনা আট দলে আসন সমঝোতা নিয়ে হিসাব-নিকাশ। এক ব্যালটে ইসলামপন্থি ভোট একত্রিত করার লক্ষ্য সামনে রেখে প্রার্থী বাছাই ও আসন বণ্টন অনেকটা চূড়ান্ত বলছেন জোটের নেতারা।
তবে বরিশালের সংসদীয় ২১টি আসন নিয়ে জটিলতা কাটেনি জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী আন্দোলনে। বিশেষ করে বিভাগের অন্য আসনগুলোতে ছাড় দিলেও মর্জাদার আসন বরিশাল সদর নিয়ে চলছে দ্বিমুখী লড়াই। এই আসনটি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমিরের আসন হলেও সেখানে ভাগ বসাতে অনড় জামায়াতে ইসলামী।
জোটের নেতারা বলছেন, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যার জনপ্রিয়তা যেখানে বেশি সেই আসন দেয়া হবে সেই দলকে। সে হিসেবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রাজনৈতিক কেন্দ্রস্থল বরিশাল বিভাগের পিরোজপুরের দুটি বাদে বাকি ১৯টি আসনেই শক্তপোক্ত অবস্থান রয়েছে বলে দাবি করেছেন দলের নেতারা। যে কারণে বিভাগের অন্তত ১৫টি আসন চাইছে ইসলামী আন্দোলন।
জানাগেছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এক ব্যালটে ইসলামপন্থি ভোট একত্রিত করার লক্ষ্যে আট দলীয় নির্বাচনী জোট করেছে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এই জোটে রয়েছে- খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা), বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি।
রাজনৈতিক অবস্থানগত দিক থেকে আট দলের মধ্যে বরিশাল অঞ্চলে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনের পর খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন এবং দ্বীপ জেলা ভোলায় বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির অবস্থান রয়েছে। বিভাগের সংসদীয় আসনগুলোতে প্রার্থীও ঘোষণা করেছে দলগুলো। তবে তাদের মধ্যে শুধুমাত্র জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী আন্দোলন ২১টি আসনেই প্রার্থী দিয়েছে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা সিরাজুল ইসলাম বলেন, বরিশাল হলো ইসলামী আন্দোলনের ভোট ব্যাংক। এখানে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীরা জনপ্রিয়তায় আগানো। পিরোজপুরে জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান ভালো। সেখানে দুটি আসন আমরা জামায়াতে ইসলামীকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। সেখানে আল্লামা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর দুই পুত্র মাসুদ সাঈদী এবং শামীম সাঈদী আট দলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। ভোলা-৩ আসন বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট পার্টির (বিডিপি) সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ নিজামুল হক নাঈমকে ছাড় দেয়া হতে পারে।
এছাড়া বরগুনার বরগুনার দুটি আসনেও ইসলামী আন্দোলন ভালো অবস্থানে আছে। বরগুনা-২ আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গোলাম সরোয়ার হিরু ১৯৯৬ থেকে ইসলামী ইসলামী ঐক্যজোটের দুই বারের সাবেক সংসদ সদস্য ছিলেন। ২০১৯ সালেও তিনি ইসলামী আন্দোলনের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ভালো অবস্থানে ছিলেন। সেই হিসেবে বরগুনার দুটি আসনে ইসলামী আন্দোলন ভালো অবস্থানে আছে।
মাওলানা সিরাজুল ইসলাম বলেন, বরিশাল অঞ্চল চরমোনাই ইউনিয়নের ঘাঁটি। তার পরও জামায়াতে ইসলামীর একটা বড় অংশ এই অঞ্চলে আছে। এর বাইরে খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলনও ২১টি আসনের মধ্যে বড় অংস দাবি করছে। কিন্তু ইতোপূর্বে এই অঞ্চলে তাদের রাজনৈতিক এবং ফ্যাসিস্ট বিরোধী আন্দোলনে অবস্থান ছিল না। তার পরও জিয়াজোঁ কমিটি যেই সিদ্ধান্ত দিবে, বৃহৎ স্বার্থে আমরা সেটা মেনে নিবো।
জানাগেছে, পটুয়াখালীর বাউফল আসনটি জামায়াতের প্রার্থী ডা. শফিকুল ইসলাম মাসুদকে ছাড় দিচ্ছে ইসলামী আন্দোলন। তবে ঝালকাঠি-১ এবং ঝালকাঠি-২ আসনও চাচ্ছে জামায়াত। ঝালকাঠি-১ আসনে ড. ফয়জুল হক এবং ঝালকাঠি-২ আসনে শেখ নেয়ামুল করীম দাড়িপাল্লা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কিন্তু যে কোন মূল্যে ঝালকাঠি-২ আসন ছাড়তে নারাজ ইসলামী আন্দোলন। সেখানে মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির প্রভাবশালী নেতা নওমুসলিম মাওলানা সিরাজুল ইসলাম সিরাজী।
অপরদিকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলনের হয়ে চরমোনাই পীরের তিন ভাই চারটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে দলের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুর করীম বরিশাল-৫ (সদর) ও বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনে এবং অপরজন দলের সহকারী মহাসচিব মুফতি সৈয়দ এছহাক মুহাম্মাদ আবুল খায়ের বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা জেলার ছয়টির মধ্যে তিনটি আসন দাবি করছেন।
এর মধ্যে বরিশাল সদর এবং হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) আসনে শক্তিশালী প্রার্থী দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। সদর আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে অনেক আগে থেকেই দাড়িপাল্লা প্রতীকে ভোট চেয়ে প্রচার প্রচারণা এগিয়ে আছেন দলের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট মুয়ায্যম হোসাইন হেলাল এবং বরিশাল-৪ আসনেও শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন জেলার আমির অধ্যাপক আব্দুল জব্বার।
বরিশাল সদর আসনে জামায়াতের প্রার্থী অ্যাডভোকেট মুয়ায্যম হোসাইন হেলাল বলেন, চাইলে তো হবে না। ১৯৭০ সাল থেকে এখানে জামায়াতে ইসলামী রাজনীতি করছে। এর অনেক পরে অন্যরা রাজনীতিতে এসেছে। জামায়াতে ইসলামী ১৯৯১ এবং ১৯৯৬ সাল এবং পরে জোটের আমলে নির্বাচন করেছে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমরা সংগঠনের প্রচারণা করছি। জগণের কাছে পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছি। এখন আট দল সিদ্ধান্ত দিবে কার জনপ্রিয়তা এবং অবস্থান ভালো।
অপরদিকে সম্প্রতি সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির ও হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বলেন, জামায়াতে ইসলামীর আমিরের আসন তো আমি চাইতে পারি না। চাইলে সেটা হবে বোকামি। তেমনিভাবে বরিশাল সদর হলো ইসলামী আন্দোলনের আমিরের আসন। এই আসন তো জোটের অন্য কেউ চাইতে পারে না। যদি চায় তাহলে কোসের জোট?
তিনি বলেন, আট দলে যার অবস্থান যেখানে ভালো, জনপ্রিয়তা আছে, সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেই আসন সেই দলকে দেয়া হবে। সেই হিসেবে বরিশাল বিভাগের ২১টি আসনেই ইসলামী আন্দোলনের অবস্থান ভালো। তার পরও আমরা জোটের স্বার্থে কিছু আসন ছাড় দিবো। আশাকারী খুব শীঘ্রই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে।
এইচকেআর