ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

Motobad news

‘নিচে আগুন, আমরা ওপরে আটকা’ বলেই ভাবির ফোন বন্ধ

‘নিচে আগুন, আমরা ওপরে আটকা’ বলেই ভাবির ফোন বন্ধ
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ফুডস কারখানায় আগুনের ঘটনার পর থেকে ভাবি ও ভাতিজার বউকে খুঁজে পাচ্ছেন না মোহাম্মদ লিটন। ঘটনার পর রাতভর ফ্যাক্টরির সামনে অপেক্ষা শেষে এখন অপেক্ষা করছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গের সামনে। মর্গে আনা লাশগুলোর মধ্যে তারা আছে কি না, সেজন্য পাগলের মতো ছোটাছুটি করছেন।

লিটনের ভাবির নাম জাহানারা আর ভাতিজার বউয়ের নাম ফাতেমা খাতুন। তাদের খোঁজে একবার পুলিশের কাছে যাচ্ছেন, আরেকবার কোম্পানির কাউকে দেখলে সেখানে দৌড়াচ্ছেন। কিন্তু লাশ দেখতে দিচ্ছে না পুলিশ। পুলিশ বলছে, লাশগুলো পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, কাউকে চেনা যাচ্ছে না।

স্বজনের মরদেহের জন্য ঢামেকের সামনে অবস্থান করা মোহাম্মদ লিটন বলেন, জাহানারা ভাবি (আমার বড় ভাইয়ের বউ) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার (বৃহস্পতিবার) দিকে আমাকে ফোন দিছিল, বলল, ‘আমাদের কারখানার নিচে অনেক আগুন, আমরা চারতলার এসি রুমে আটকা, ম্যানেজার বের হতে দিচ্ছে না। ভাই আটকা আছি, আগুন অনেক বেশি ভয় লাগতেছে, আমাদের জন্য দোয়া করবেন।’

এর ১০ মিনিট পর (৬টা ৪০ মিনিটে) আমি কল ভাবিকে কল দেই ভাবি ফোন রিসিভ করে না, সন্ধ্যা সাতটার পর থেকে মোবাইল বন্ধ হয়ে গেছে। আর ফোন যাচ্ছে না।

লিটন বলেন, যখন থেকেই ফোন বন্ধ পাচ্ছি তখনই (রাতে) আমরা ফ্যাক্টরিতে গেছি, আশপাশের মেডিকেল, হাসপাতালে খোঁজাখুঁজি করছি, কোথাও তাদের হদিস পাচ্ছি না। আজকে বিকেলে শুনেছি, যারা আগুনে পুড়েছে, তাদের লাশ ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়েছে। তাই আমরা দেখতে আসছি, এখানে তাদের লাশ আছে কি না। কিন্তু এখানে এসে তো লাশগুলো দেখতে পাচ্ছি না। পুলিশ বলছে, লাশ দেখে চেনা যাবে না। তাই দেখতে দিচ্ছে না। আমরা অপেক্ষা করছি।

রূপগঞ্জে ভয়াবহ ওই অগ্নিকাণ্ডের কারণে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম বেপারীকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শুক্রবার (০৯ জুলাই) বিকেলে জেলা প্রশাসন থেকে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় বলে জানান জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ। তদন্ত কমিটি আগুন লাগার কারণ উদঘাটনের পাশাপাশি দোষীদের শনাক্ত করবে।

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহ নুসরাত জাহান, জেলার ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন, জেলা পুলিশের একজন প্রতিনিধি এবং জেলা কলকারখানা অধিদফতরের এক কর্মকর্তা।

বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৫টার পর রূপগঞ্জ উপজেলার কর্ণগোপ এলাকায় অবস্থিত সজীব গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হাশেম ফুডস-এর ‘সেজান জুস’ কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিটের ১১০ জন সদস্য আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করেন। শুক্রবার (০৯ জুলাই) দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে আগুন মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপরই লাশ উদ্ধার শুরু হয়।


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন