মুজিববর্ষের ঘর ভেঙে পড়ার কারণ জানতে বরিশালে চার তদন্ত কমিটি

বরিশালে মুজিবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর ঘর ভেঙে পড়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই সাথে ক্ষতিগ্রস্ত ঘর মেরামত এবং প্রকৃত উপকারভোগীদের মাঝে বন্টনের বিষয়ে আরও তিনটিসহ মোট ৪টি কমিটি গঠিত হয়েছে।
এর মধ্যে একটি বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় এবং অপর তিনটি কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে জেলা প্রশাসন কার্যালয় থেকে। এসব কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত বিভাগীয় প্রধান, স্থানীয় সরকার উপ-পরিচালক, জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এবং অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে। আগামী কমিঠি গঠনের সাত দিনের মধ্যে এদেরকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
শনিবার দুপুরে বরিশাল সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি’র বক্তৃতায় বিভাগীয় কমিশনার মো. সাইফুল হাসান বাদল এই তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বিভাগে প্রথম পর্যায়ে ছয় হাজার ৮৮টি এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে চার হাজার ৪৫৭টি ঘর ও জমি দেয়া হয়েছে। আরও ২ হাজার ৬৯০টি ঘর নির্মাণাধীন রয়েছে। এর মধ্যে বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জে ২০টি এবং ভোলার দৌলতখানে ১২টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ‘সাম্প্রতিক ইয়াস এবং পরবর্তী বৃষ্টির পানির প্রভাবে ঘরগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ঘরগুলো নির্মাণে কোন ত্রুটি হয়েছে কিনা এবং ত্রুটি হয়ে থাকলে কে বা কার অবহেলায় হয়েছে সেগুলো অনুসন্ধান করার জন্য বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় থেকে একটি এবং বরিশাল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে থেকে পৃথক তিনটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এর মধ্যে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় ঘর ভেঙে পড়ার ঘটনায় গত ৬ জুলাই প্রথম একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। তিন সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারকে। খুব দ্রুতই ওই কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল হাসান বাদল।
অপরদিকে, সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভার সভাপতি বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার জানিয়েছেন, ‘মুজিববর্ষের ঘর নিয়ে কোন অনিময় বা দুর্নীতি হতে দেয়া যাবে না। যারা অনিয়ম দুর্নীতি করবেন তদন্ত পূর্বক তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বর্তমান সরকারের এতো বড় একটি অর্জন কোনভাবেই ধ্বংস হতে দেয়া চলবে না।
তিনি বলেন, ‘বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ এবং চরমোনাই ইউনিয়নে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এটা আমাদের জন্য দুঃখজনক। আমরা ওইসব ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। সেখানে কোন দুর্নীতি বা অনিয়ম পাওয়া যায়নি। ইয়াস এবং পরবর্তী অতিবৃষ্টিপাতের কারণে কয়েকটি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি।
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘যেহেতু অভিযোগ উঠেছে সেহেতু বিষয়টি আমরা খাটো করে দেখছি না। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণসহ সার্বিক বিষয় তদন্তে ৪ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে প্রধান করে শনিবার ১০টি উপজেলায় একটি করে কমিটি করে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি নির্মাণ ত্রুটি বা অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে কিনা তা তদন্তে একই দিন তিন সদস্য বিশিষ্ট অপর একটি টেকনিক্যাল কমিটি করা হয়েছে।
এর বাইরে একই দিন সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর নির্মাণের অভিযোগ ওঠায় আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যে কমিটির প্রধান করা হয়েছে স্থানীয় সরকার উপ-পরিচালকে। তদন্ত কমিটিকে আগামী ৭ কার্য দিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
টেকশই ঘর নির্মাণে প্রতিবন্ধকতার বিষয়টি উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘প্রথম পর্যায়ে এক লাখ ৭১ হাজার এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে এক লাখ ৯০ হাজার টাকায় দুই কক্ষ বিশিষ্ট সেমিপাকা ঘর নির্মাণ সম্ভব নয়। তাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আরো বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পক্ষে অর্থ আত্মসাতের সুযোগ নেই। আর সেটা আমি বিশ্বাসও করি না।
মেহেন্দিগঞ্জে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরে স্থানীয় ইউপি সদস্য’র রান্না ঘর তৈরির বিষয়টি উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘যেখানে ঘটনা ঘটেছে সেখানে রাজনৈতিক কারণে অনেক কিছু করা সম্ভব হয়নি। স্থানীয় ইউএনও কে বিভিন্ন দিকের চাপ সামাল দিয়ে কাজ করতে হয়েছে। তবে ইউপি সদস্য’র রান্না ঘরের অভিযোগটিও তদন্ত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে অপরাধ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাই সার্বিক বিষয়ে সাংবাদিকদের সহযোগিতা চান বিভাগীয় কমিশনার এবং জেলা প্রশাসক।
মতবিনিময় সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. শহীদুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) রাজিব আহমেদ, বরিশাল প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মানবেন্দ্র বটব্যাল, সাধারণ সম্পাদক কাজী মিরাজ মাহমুদ, সাংবাদিক ইউনিয়ন বরিশালের সাধারণ সম্পাদক ফিরদাউস সোহাগ, সহ-সভাপতি রাহাত খান, যুগ্ম সম্পাদক কাওসার হোসেন রানা প্রমুখ।
কেআর