ঢাকা শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫

Motobad news

ডায়রিয়ার প্রকোপ অনুসন্ধানে বরিশালে আইইডিসিআর’র টিম

ডায়রিয়ার প্রকোপ অনুসন্ধানে বরিশালে আইইডিসিআর’র টিম
ছবি : সংগৃহীত
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

মহামারি করোনা ভাইরাসের মতই ছড়িয়ে পড়ছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। প্রতিদিনই বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিটি হাসপাতালে বাড়ছে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। চাপ এতোটাই বেড়েছে যে হাসপাতালের অভ্যন্তরে জায়গা দেয়া যাচ্ছে না রোগীদের। জায়গার সংকুলন না হওয়ায় ওয়ার্ড ছাপিয়ে রোগীদের স্থান হয়েছে হাসপাতালের বাইরে গাছতলায়।
 
এমন চিত্রই দেখা গেছে বরিশাল জেনারেল হাসপাতাল এবং বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এর মধ্যে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা হু হু করে বেড়ে যাওয়ায় জেনারেল হাসপাতাল চত্বরে কাঁঠাল গাছের নিচে চাদর বিছিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা।
 
হঠাৎ করেই বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে স্বাস্থ্যবিভাগও। এমনকি ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানে বরিশালে এসেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আইইডিসিআর’র প্রতিনিধি দল। গ্রাম পর্যায়ে তারা ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধান করছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
 
এদিকে, ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়লেও চিকিৎসা সেবা নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। সঠিক সময়ে ওষুধ এবং আইভি স্যালাইন না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন তারা। এসব ওষুধ বাইরে থেকে কিনে আনতে হচ্ছে বলে দাবি তাদের।
 
যদিও চিকিৎসা সেবা নিয়ে রোগী স্বজনদের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হাসপাতালের দায়িত্বরতরা। তাদের দাবি সরকারিভাবে যতটা বরাদ্দ রয়েছে তার সবটুকুই দেয়া হচ্ছে রোগীদের। আবার রোগীর চাপ বাড়লেও জনবল সংকট আগের মতই রয়ে গেছে বলে দাবি স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান প্রধানদের।
 
মঙ্গলবার দুপুরে বরিশাল জেনারেল হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, হাসপাতালটির ডায়রিয়া ওয়ার্ডে চারটি মাত্র বেড রয়েছে। অথচ গত কয়েক দিন ধরেই ওয়ার্ডটিতে প্রতিদিন গড়ে ৫০ থেকে ৬০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। সে হিসেবে চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল দুপুর পর্যন্ত এ হাসপাতালে প্রায় ৬০০ ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। এর আগে গত মার্চ মাসে চিকিৎসা নিয়েছেন ৭৫১ জন।
 
এ হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স আয়শা আক্তার জানিয়েছেন, ‘হঠাৎ করেই আমাদের রোগী বেড়ে গেছে। এতোটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে তাদের ওয়ার্ডে এমনকি বারান্দায়ও জায়গা দিতে পারছি না। সংকট মোকাবেলায় ওয়ার্ডের বাইরে গাছতলায় চাদর বিছিয়ে রোগীদের চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
 
তিনি আরও বলেন, ‘রোগীর চাপ কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। এমনকি প্রতি মুহূর্তে রোগীর চাপ বেড়েই চলছে। তবে জনবল বাড়ানো হচ্ছে না। প্রতিদিন অর্ধশত রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে কিছুটা বিলম্ব হতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত হাসপাতালে কোন ওষুধের সংকট নেই। যা আছে তা দিয়ে ম্যানেজ করা হচ্ছে। তাই চিকিৎসা সেবা নিয়ে রোগী এবং স্বজনদের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন এই নার্সিং কর্মকর্তা।
 
বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মলয় কৃষ্ণ বড়াল বলেন, ‘আমাদের ডায়রিয়া ওয়ার্ডটি মাত্র চার শয্যার। এর মধ্যে দুটি পুরুষ এবং অপর দুটি মহিলা ওয়ার্ডের জন্য। যেখানে প্রতিদিন বহুগুন রোগী ভর্তি থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করছেন। অথচ আমাদের চিকিৎসক, নার্স এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরও সংকট রয়েছে। তাই এতোগুলো রোগীকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে কিছুটা সংকট সৃষ্টি হতেই পারে। তবে নানা সংকটের মধ্যেও আমরা সাধ্যমতো চিকিৎসা সেবা দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
 
অপরদিকে, একই চিত্র দেখা গেছে বৃহত্তর বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এ হাসপাতালটিতে শুধুমাত্র ডায়রিয়া আক্রান্ত শূন্য থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ওয়ার্ডটিতে শয্যা সংখ্যা ১৫টি’র মতো। কিন্তু মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ওয়ার্ডটিতে একসঙ্গে ৪২ জন শিশুকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দিতে দেখা গেছে।
 
ওয়ার্ডের দায়িত্বর নার্সরা জানিয়েছেন, ‘সোমবার রাত ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত এক রাতে ৩০ জন শিশুকে ভর্তি করা হয়েছে শেবাচিমের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে। এদের মধ্যে থেকে দুপুরে কয়েকজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও  দুপুরের মধ্যে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৪০ জন ছাড়িয়েছে। যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তাতে হাসপাতালটিতে ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা মঙ্গলবার রাতের মধ্যে অর্ধশত ছাড়ানোর আশঙ্কা করছেন দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স তানিয়া আফরোজ।
 
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস জানিয়েছেন, ‘হঠাৎ করে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে ডায়রিয়ার  প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত বিভাগের ছয় জেলায় মোট ২৪ হাজার ৩৩৭ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। তাছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৪৫ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন।
 
তিনি বলেন, ‘ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধির কারণে স্বাস্থ্য বিভাগও অনেকটা উদ্বিগ্ন। এ কারণেই বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানে সরকারের আইইডিসিআর এর একদল গবেষক বরিশালে এসেছেন। তারা বর্তমানে বরগুনা জেলায় অবস্থান করছেন। তাদের রিপোর্ট পেলে ডায়রিয়ার প্রধান কারণ কি সেটা নিশ্চিত হওয়া যাবে।
 
তবে ডায়রিয়াকে পানিবাহিত রোগ উল্লেখ করে স্বাস্থ্য বিভাগের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘গ্রাম অঞ্চলের মানুষ বেশিরভাগ সময় গৃহস্থালীর কাজে পুকুর এবং ডোবার পানি ব্যবহার করে থাকেন। আবার শহর পর্যায়ে বিশুদ্ধ পানি পান করলেও রাস্তার পাশে নোংরা এবং উন্মুক্ত স্থানে তৈরি অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে থাকেন। এ খাবার থেকেই ডায়রিয়ার জীবাণু মানুষের শরীরে প্রবেশ করছে। এমন পরিস্থিতিতে গৃহস্থালীর কাজে টিউবওয়েলের পানির ব্যবহার নিশ্চিত করার পাশাপাশি রাস্তার পাশে উন্মুক্ত স্থানে তৈরি হওয়া খাবার না খেতে পরামর্শ দিয়েছেন ডা. বাসুদেব কুমার দাস।
 


এমবি
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন