ঢাকা সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫

Motobad news

দাফনের ৫ দিন পর গোপালগঞ্জে নিহত ৩ জনের মরদেহ উত্তোলন 

দাফনের ৫ দিন পর গোপালগঞ্জে নিহত ৩ জনের মরদেহ উত্তোলন 
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত রমজান কাজী, ইমন তালুকদার ও সোহেল রানার মরদেহ দাফনের ৫ দিন পর আদালতের নির্দেশে কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। 


সোমবার (২১ জুলাই) বেলা ১০টার দিকে নিহতের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা আদালতে লাশ উত্তোলনের আবেদন করলে আদালত নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে বেলা ১২টা ৪৫ মিনিটের দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাসেল মুন্সি ও রন্টি পোদ্দারের উপস্থিতিতে জেলা শহরের পৌর কবরস্থান থেকে নিহত ইমন তালুকদার ও রমজান কাজীর মরদেহ উত্তোলন করা হয়।

 

এদিকে টুঙ্গিপাড়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মারুফ দস্তেগীরের উপস্থিতিতে নিহত সোহেল রানার মরদেহ দক্ষিণ টুঙ্গিপাড়া কবরস্থান থেকে উত্তোলন করা হয়। এসময় নিহতের পরিবারের সদস্যসহ সদর ও টুঙ্গিপাড়া থানার পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। 

বিষয়টি নিশ্চিত করে গোপালগঞ্জ সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির মো. সাজেদুর রহমান বলেন, নিহতের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা  আজ আদালতে নিহতের সুরতহাল প্রতিবেদন ও ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ উত্তোলনের আবেদন করেন। পরবর্তীতে বিজ্ঞ আদালত ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে নিহত রমজান কাজী, ইমন তালুকদার ও সোহেল রানার লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে সুরতহাল প্রতিবেদন ও ময়নাতদন্তের জন্য নির্দেশ দেন। 


এরই ধারাবাহিকতায় বেলা ১২ টা ৪৫ মিনিটের দিকে জেলা শহরের পৌর কবরস্থানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাসেল মুন্সি ও রন্টি পোদ্দারের উপস্থিতিতে নিহত রমজান কাজী ও ইমন তালুকদারের মরদেহ উত্তোলন করা হয়। অন্যদিকে, টুঙ্গিপাড়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মারুফ দস্তেগীরের উপস্থিতিতে নিহত সোহেল রানার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতদের মরদেহ উদ্ধার শেষে সুরতহাল প্রতিবেদন করে ময়নাতদন্তের জন্য গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। 

এর আগে গত বুধবার (১৬ জুলাই)  জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশ শেষ করে মাদারীপুর ফেরার পথে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও দুষ্কৃতকারীদের সাথে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় ৫ জন নিহত হয়। নিহতরা হলেন- গোপালগঞ্জ শহরের উদয়ন রোডের বাসিন্দা দীপ্ত সাহা (২৫), বিসিক এলাকায় রমজান কাজী (১৮), টুঙ্গীপাড়ার সোহেল রানা (৩০) ও গোপালগঞ্জ সদরের ভেরারবাজারের ইমন তালুকদার  (২৪) ও শহরের নতুন বাজার এলাকার রিকশাচালক রমজান মুন্সি। ঘটনার দিন রাতেই নিহত রমজান কাজী, ইমন তালুকদার ও সোহেল রানার দাফন সম্পন্ন করে। এছাড়াও নিহত দীপ্ত সাহার সৎকার সম্পন্ন করা হয়। 


গত  শনিবার (১৯ জুলাই) রাতে ইমন তালুকদার, রমজান কাজী, সোহেল রানা ও দীপ্ত সাহা নিহতের ঘটনায় সদর থানার ৪ উপ-পরিদর্শক (এসআই) বাদী হয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানায় চারটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এছাড়াও রমজান মুন্সি নিহতের ঘটনায় পরবর্তীতে মামলা দায়ের করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। 

তিনটি মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ জনকে ও একটি মামলায় আসামি করা হয়েছে ৮০০ থেকে ৯০০ জনকে। 

গোপালগঞ্জ সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আইয়ুব হোসেন বাদী হয়ে রমজান কাজী নিহতের ঘটনায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় আসামি করা হয়েছে ৮০০ থেকে ৯০৯ জনকে। 

মামলায় তিনি উল্লেখ করেছেন, গত বুধবার (১৬ জুলাই) এনসিপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশ শেষে পৌর পার্ক থেকে দুপুরে মাদারীপুরের উদ্দেশে গাড়িবহর নিয়ে রওনা দিয়ে নেতৃবৃন্দ গোপালগঞ্জ শহরের এসকে সালেহিয়া মাদরাসার কাছে পৌঁছালে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী এবং দুষ্কৃতকারীরা গাড়ি বহরে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা করে। পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এতে বাধা দেয়। হামলাকারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর গুলি চালায়। এ সময় রমজান কাজী (১৭) গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মক আহত হন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।                  

দীপ্ত সাহা (২৭) নিহতের ঘটনায় সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শামীম হোসেন বাদী হয়ে ১৯ জুলাই গভীর রাতে অজ্ঞাতনামা ১ হাজার ৪০০ থেকে  ৫০০ জনকে আসামি করে ওই থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় তিনি উল্লেখ করেছেন, গত বুধবার (১৬ জুলাই) এনসিপির গাড়ি বহরে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং দুষ্কৃতকারীদের হামলার ঘটনা শহরে ছড়িয়ে পড়ে। কলেজ মসজিদের পাশে মিলন ফার্মেসির সামনের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এটি প্রতিরোধ করতে গেলে হামলাকারীরা গুলি করে। সেখানে দীপ্ত সাহা গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। সংকটজনক অবস্থায় তাকে গোপালগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। 

মোবাইল ব্যবসায়ী সোহেল রানা মোল্লা নিহতের ঘটনায় বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন একই থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল কালাম আজাদ। আসামি করা হয়েছে  ১ হাজার ৪০০ থেকে ৫০০ জন। মামলায় তিনি উল্লেখ করেছেন, লঞ্চঘাট এলাকায় হোটেল রাজের সামনে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও দুষ্কৃতকারীরা এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের ওপর হামলা চালায়। পুলিশ ও সেনাবাহিনী এগিয়ে এলে তাদেরকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় তারা। এ সময় সোহেল রানা মোল্লা (৩০) মারাত্মক আহত হন। তাকে উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

অপরদিকে সদর থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) শেখ মিজানুর রহমান বাদী হয়ে ১ হাজার ৪০০ থেকে  ৫০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে ইমন তালুকদার হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় তিনি উল্লেখ করেছেন, ঘটনার দিন গত ১৬ জুলাই আসামিরা শহরের পুরাতন সোনালী ব্যাংকের সামনে এনসিপির গাড়ি বহরে হামলা করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এতে বাধা দিলে দুষ্কৃতকারী আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা গুলি করে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ইমন তালুকদার আহত হয়। পরে হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
 


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন