ইলিশের জন্য মেঘনার তীরে দোয়া-মোনাজাত ও কোরআন খতম


শ্রাবণের শেষেও ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশের দেখা নেই। চলছে ইলিশের চরম আকাল। বর্ষায় নদীতে ইলিশ বাড়ার পরিবর্তে এবার কমতে দেখা গেছে। পাল্টে গেছে নদীর আচরণ। আর ভরা মৌসুমে ইলিশ সংকটের কারণে জীবন-জীবিকা নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন ভোলার দুই লক্ষাধিক জেলে। চলমান এ সংকট উত্তরণে ইলিশের আশায় মেঘনা নদীর তীরে খতমে ইউনুস ও দোয়া মোনাজাতের আয়োজন করেছেন জেলেরা।
রোববার (৩ আগস্ট) বিকেল ৩টায় ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ঘাটে এক ব্যতিক্রমী দোয়া-মোনাজাত ও খতমে ইউনুসের আয়োজন করেন জেলেরা। সকাল থেকেই স্থানীয় আলেম-ওলামাদের নিয়ে খতমে ইউনুস পড়া হয়। পরে বৃষ্টি উপেক্ষা করে নদীর পাড়ে শত শত জেলে একত্রিত হয়ে ‘ইলিশের জন্য’ আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করেন।
দোয়া পরিচালনা করেন বোরহানউদ্দিন উপজেলার বাটামারা দরবারের পীর সাহেব মাওলানা মুহিববুল্লাহ। দোয়া-মোনাজাতে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও অংশগ্রহণ করেন।
মাছ ব্যবসায়ী মো. মিরন জানান, সাধারণত বৈশাখের মাঝামাঝি থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত ইলিশের ভরামৌসুম। কিন্তু এবার তিন মাস পেরিয়ে গেলেও নদীতে তেমন ইলিশ নেই। জেলেরা প্রতিদিন খালি হাতে ফিরে আসছেন। মাঝেমধ্যে দু-চারটি মাছ পেলেও তা বিক্রি করে ট্রলারের খরচই ওঠে না। জেলেরা ধারদেনা করে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।
১৫ বছরের অভিজ্ঞ জেলে মো. লাবলু বলেন, নদীতে একবার গেলে খরচ পড়ে কমপক্ষে পাঁচ হাজার টাকা। গতবার তিনটি ইলিশ পেয়ে মাত্র ৬ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। এতে জেলেরা ভাগে পেয়েছে মাথাপিছু মাত্র ১০০ টাকা।
২০ বছর ধরে মেঘনায় মাছ ধরা জেলে মো. নিরব জানান, রোববার ট্রলারে ৩ হাজার টাকা খরচ করে নদীতে গিয়ে ফিরেছি একটি বড় ইলিশ ও এক হালি জাটকা নিয়ে। বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৩০০ টাকায়, উল্টো ৭০০ টাকা লোকসান হয়েছে।
জেলে ফরিদ উদ্দিন মাঝি বলেন, চেয়ারম্যান ঘাটে প্রায় শতাধিক ট্রলার থাকলেও গত দুই বছরে মাছ কমে যাওয়ায় অন্তত ৫০ জন জেলে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। আমরা যারা এখনো আছি, তারাও টিকে থাকা নিয়ে শঙ্কায়। তাই আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়ে এ দোয়া-মোনাজাত করেছি।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ইলিশের প্রজনন মৌসুম ও অভ্যাসে পরিবর্তন এসেছে। এছাড়া নদীতে ডুবোচরের কারণে পানির রং ঘোলা থাকায় ইলিশ নদীতে ঢুকছে না। তবে সামনের পূর্ণিমায় পরিস্থিতি উন্নতির আশা করছি।
এইচকেআর
