ঢাকা শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

Motobad news
শিরোনাম
  • কুরআন অবমাননাকারী অপূর্বপালের শাস্তির দাবিতে বরিশালে মানববন্ধন জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেনি এনসিপি ও ৪ বাম দল শান্তিরক্ষা মিশন থেকে ফিরবে আরও ১৩১৩ বাংলাদেশি কীভাবে নির্বাচন করবেন, একটা সনদ করেন—রাজনৈতিক নেতাদের ড. ইউনূস উজিরপুর সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল গ্রেফতার  উজিরপুরে জেলেকে এক মাসের কারাদণ্ড  বিশেষ মহল আ'লীগকে পুনর্বাসন করে বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত: রহমাতুল্লাহ  জুলাই সনদ স্বাক্ষরের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের সূচনা: ড. ইউনূস সংসদ ভবন এলাকায় সংঘর্ষ থেমেছে, অবস্থান নিয়েছে সেনাবাহিনী জুলাই যোদ্ধাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জুলাই সনদে পরিবর্তন আনা হয়েছে
  • শান্তিরক্ষা মিশন থেকে ফিরবে আরও ১৩১৩ বাংলাদেশি

    শান্তিরক্ষা মিশন থেকে ফিরবে আরও ১৩১৩ বাংলাদেশি
    বর্তমানে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা বিশ্বের ১০ দেশ বা অঞ্চলে দায়িত্ব পালন করছেন/ছবি: সংগৃহীত
    গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

    জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে চলমান অর্থ সংকট মোকাবিলার অংশ হিসেবে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের সংখ্যা কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে জাতিসংঘ সদরদপ্তর। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী নয় মাসের মধ্যে বিভিন্ন মিশন থেকে সামরিক বাহিনীর মোট এক হাজার ৩১৩ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হবে। যারা সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী থেকে নানা দেশ বা অঞ্চলে নিয়োজিত আছেন।

    এর আগে শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ পুলিশের একমাত্র অবশিষ্ট কন্টিনজেন্টকে কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র থেকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হয়। ১৮০ সদস্যের এ কন্টিনজেন্টের মধ্যে ৭০ জন নারী পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন। তারা আগামী নভেম্বরের মধ্যে দেশে ফিরে আসবেন। মাত্র দুই মাস আগে এ কন্টিনজেন্টের অংশ হিসেবে জাতিসংঘের একমাত্র সর্ব-নারী পুলিশ ইউনিট মোতায়েন করা হয়েছিল।

    জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের মিলিটারি অ্যাফেয়ার্স কার্যালয়ের (ওএমএ) ভারপ্রাপ্ত সামরিক উপদেষ্টা শেরিল পিয়ার্সের পাঠানো এক চিঠিতে সামরিক সদস্য প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তটি জানানো হয়। 

    গত ১৪ অক্টোবর পাঠানো এ চিঠিতে স্বাক্ষর করেন কার্যালয়ের চিফ অব স্টাফ ক্যাপ্টেন লনি ফিল্ডস জুনিয়র এবং খসড়া প্রস্তুত করেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. তানবির আলম। ওই কার্যালয়ের মিলিটারি পিস অপারেশন সাপোর্ট শাখার প্রধান হিসেবে তানবির আলম দায়িত্ব পালন করছেন।

    এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশের একজন সদস্য সাংবাদিকদের বলেন, ওএমএ হলো জাতিসংঘের সামরিক শাখা। তাই সেখান থেকে সংখ্যা হ্রাস করতে বলা কেবল সামরিক সদস্যদের জন্য হতে পারে।

    চিঠিতে বলা হয়, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে চলমান আর্থিক সংকটের কারণে ১৫ শতাংশ বাজেট হ্রাস পরিকল্পনা বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন। এ পরিকল্পনার আওতায় ইউনিফর্মধারী সদস্যদের জন্য বরাদ্দ অর্থ ১৫ শতাংশ কমানো হবে। যদিও এটি সরাসরি সমান হারে জনবল কমানোর নির্দেশ নয়, তবে বাজেট কমায় বাস্তবে মাঠপর্যায়ে শান্তিরক্ষীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে।

    মিলিটারি অ্যাফেয়ার্স কার্যালয় জানায়, এ সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের অংশগ্রহণ থাকা পাঁচটি শান্তিরক্ষা মিশনে সদস্যসংখ্যা কমবে। সবচেয়ে বেশি হ্রাস পাবে ‘ইউএনমিস’ বা দক্ষিণ সুদানে জাতিসংঘ মিশনে, যেখান থেকে ৬১৭ সদস্য প্রত্যাহার করা হবে। এছাড়া মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের জাতিসংঘ মিশন ‘মিনুসকা’ থেকে ৩৪১, সুদানের আবেই অঞ্চলের জাতিসংঘ মিশন ‘ইউনিসফা’ থেকে ২৬৮, কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের জাতিসংঘ মিশন ‘মনুসকো’ থেকে ৭৯ ও পশ্চিম সাহারার জাতিসংঘ মিশন ‘মিনুরসো’ থেকে আট বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী প্রত্যাহার করা হবে।

    জাতিসংঘ সদর দপ্তর এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট মিশনগুলোকে এ পরিকল্পনা বিলম্ব না করে বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। এতে আরও বলা হয়, জাতিসংঘের লজিস্টিক বিভাগ, ইউনিফর্মড ক্যাপাবিলিটিজ সাপোর্ট বিভাগ ও মিশন সাপোর্ট বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে শান্তিরক্ষীদের প্রত্যাবাসন কার্যক্রম নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করার প্রক্রিয়া চলছে।

    জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনকে আশ্বস্ত করে ওএমএ’র চিঠিতে বলা হয়, সিদ্ধান্তটি শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে চলমান আর্থিক সংকটের কারণে নেওয়া হয়েছে। যদি পরিকল্পনায় কোনো পরিবর্তন আসে, যা বাংলাদেশকে প্রভাবিত করবে, তাহলে ওএমএ যত দ্রুত সম্ভব তা জানাবে। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের সঙ্গে শান্তি ও সহযোগিতার অভিন্ন লক্ষ্য বাস্তবায়নে তাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

    এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মো. নজরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা কিছু জানতে পারিনি।

    গুরুত্বের সঙ্গে পর্যালোচনা প্রয়োজন
    বিষয়টি নিয়ে কথা হলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট ফর পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের (বিআইপিএসএস) জ্যেষ্ঠ ফেলো শাফকাত মুনীর জাগো নিউজকে জানান, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ কেবল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করেনি, বরং এটি বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের সংযোগ স্থাপন এবং কূটনৈতিক প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

    এ বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ সৈন্য প্রেরণকারী দেশগুলোর মধ্যে প্রথম বা দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। কিন্তু জাতিসংঘের বাজেটের ঘাটতির কারণে আমাদের শান্তিরক্ষীদের সংখ্যা কিছুটা হ্রাস পেতে পারে। তবে এখনই এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। সংখ্যা আগের মতো ধরে রাখা নাও যেতে পারে, কারণ মিশনের কলেবর হ্রাস পাবে। তবে নতুনভাবে ভ্যালু যোগ করার উপায় খুঁজে বের করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে সিনিয়র পদে নিয়োগ পাওয়ার সুযোগ বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে অংশগ্রহণ। এছাড়া, জাতিসংঘের অন্যান্য মিশনেও কীভাবে আমরা অংশ নিতে পারি সেই বিষয়ে পরিকল্পনা করা প্রয়োজন।’

    শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশ
    ১৯৮৮ সালে মাত্র ১৫ জন পর্যবেক্ষককে জাতিসংঘের ইরাক-ইরান মিলিটারি অবজারভার গ্রুপ মিশনে পাঠানোর মাধ্যমে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী বাহিনীর ‘নীল হেলমেট’ পরার যাত্রা শুরু হয়। পরের বছর ১৯৮৯ সালে এতে বাংলাদেশ পুলিশ যোগ দেয়। ১৯৯৩ সালে অংশগ্রহণ শুরু করে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী।

    এ পর্যন্ত বাংলাদেশ সফলভাবে প্রায় ৪৩টি দেশ বা অঞ্চলে ৬৩টি শান্তিরক্ষা মিশন সম্পন্ন করেছে। যেখানে এক লাখ ৭৮ হাজার ৭৪৩ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী অংশ নিয়েছেন।

    বর্তমানে পাঁচ হাজার ৬১৯ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী বিশ্বের ১০টি দেশ বা অঞ্চলে দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে পশ্চিম সাহারায় একটি, সুদানের আবেই অঞ্চলে একটি, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে ছয়টি, কঙ্গোতে নয়টি, লেবাননে একটি ও দক্ষিণ সুদানে চারটি কন্টিনজেন্ট দায়িত্ব পালন করছে। এছাড়া সাইপ্রাস, ইয়েমেন ও লিবিয়ায় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তারা স্টাফ অফিসার হিসেবে নিয়োজিত আছেন। এসব মিশনে বাংলাদেশের সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যরা পেশাদারিত্ব, সাহসিকতা এবং মানবিকতার মাধ্যমে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অনন্য ভূমিকা রেখে চলেছেন।

    বাংলাদেশ পুলিশের প্রথম মিশন ছিল নামিবিয়ায়। ২০২৫ সালের মে মাস পর্যন্ত পুলিশের ২১ হাজারেরও বেশি কর্মকর্তা বিশ্বজুড়ে ২৪টি দেশে ২৬টি মিশনে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র, দক্ষিণ সুদান ও মধ্য আফ্রিকা।
     


    এইচকেআর
    গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

    সর্বশেষ