আগৈলঝাড়ায় বেইলি সেতুতে ঝুঁকি নিয়ে যান চলাচল, ঘটছে দুর্ঘটনা
বরিশালের আগৈলঝাড়ায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের একটি বেইলী সেতুর পাটাতনগুলো মরিচা ধরে বিভিন্নস্থানে ভেঙ্গে ছোট-বড় গর্তের কারণে শিক্ষার্থী, লোকজনসহ যানবাহন চলাচলে ঘটছে প্রতিনিয়িত দুর্ঘটনা। বর্তমানে ব্রীজটি মরন ফাঁদে পরিনত হয়েছে। সংস্কারের জন্য স্থানীয়রা ইউএনওর কাছে লিখিত আবেদন করেছেন।
জানা গেছে, সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের সেতুটি বেশির ভাগ স্থানেই পাটাতন ভেঙ্গে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। তাই যে কোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনা। সেতুটির বেশ কিছু অংশ ভেঙে পড়ে মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে সেতুটি। চলাচলের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত সেতুর উপর দিয়ে অসংখ্য ভারী যানবাহন চলাচল করছে। ফলে যেকোনো মুহুর্তে ঘটতে পারে বড় ধরণের দুর্ঘটনা। এছাড়াও সেতুটি পারাপারের সময় দুর্ভোগ পোহাতে হয় যানবাহন ও পথচারীদের। অতিরিক্ত যানবাহন চলাচলের কারণে সেতুটি দুর্বল হয়ে ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। বিকল্পপথ না থাকায় প্রয়োজনের তাগিদে অতিরিক্ত ও ভারী যানবাহন চলাচল করতে থাকে।
কালুপাড়া গ্রামের সিফাত হোসেন জানান, ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর উপর দিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য যানবাহন চলাচল করে। এছাড়া স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীসহ হাজারো মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। এজন্য আমাদের সব সময় আতংকের মধ্যে থাকতে হয় কখন সেতুটি ভেঙ্গে পড়ে যায়। সেতুর ভাঙ্গা অংশে পরে গিয়ে এখন পর্যন্ত শতাধিক লোক আহত হয়েছে। তারপরও বড় ধরনের কোন সংস্কার কাজ এই সেতুর জন্য করা হয়নি। এছাড়াও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বিষয়টি জেনেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।
স্থানীয় সাবেক শিক্ষার্থী শহিদুল ইসলাম জানান, সেতুটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হলেও তার ওপর দিয়েই চলছে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। আর সেতুতে রাতের আঁধারে কোন আলোর ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিদিনই ভ্যানগাড়ি, ইজিবাইক, মোটরসাইকেল ও লোকজন ভাঙ্গা অংশে পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। এই লোহার বেইলি সেতু সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সেতুটির স্টীলের পাটাতনগুলো বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সেতুটির নাট সব ঢিলে হয়ে গেছে। সেতুটির উপর উঠলেই দুলতে থাকে। মনে হয় এই হয়তো ভেঙ্গে পড়ছে।
এ সড়কে চলাচলকারী ইজিবাইক চালক শহিদুল সরদার, অটো ভ্যান চালক শাহিন ফকির, মটরসাইকেল চালক সুমন ফকিরসহ প্রায় ৪০/৫০জন ও বিভিন্ন যানবাহনের চালকের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, পাশে অপরিকল্পিত ভাবে তৈরি একটি সেতুর উচ্চতার জন্য এবং বিকল্প কোন পথ না থাকায় আমরা বাধ্য হয়ে এ ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর ওপর দিয়েই চলাচল করছি। তাই প্রায় প্রতিদিনই আমরা দুর্ঘটনার শিকার হয়েছি। গৈলা বাজার ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুর ওপর দিয়ে প্রতিদিন শতশত মানুষ যাতায়াত করে। অথচ এতো গুরুত্বপূর্ণ সেতুটি দীর্ঘদিন যাবৎ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পরে থাকা সত্বেও টনক নড়েনি কর্তৃপক্ষের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, সারাদিন কাজ করার পরে সন্ধ্যার পর বাড়ি ফেরার সময় এ সেতুর উপর দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে কয়েকদিন দুর্ঘটনার শিকার হয়েছি। অল্পের জন্য প্রানে রক্ষা পেয়েছি। এর মধ্যে একজনের সেতুর ভাঙ্গা অংশে পা আটকে গেলে সেতুর স্টিলের পাটাতন কেটে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হয়। সরকারি গৈলা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জহিরুল হক জানান, মহামরি করোনার পর যে কোন সময় বিদ্যালয় খুলে দেয়ার চিন্তা ভাবনা করছে সরকার। বিদ্যালয় খুলে দেয়ার আগে সেতুটি সংস্কার করা না হলে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা কিভাবে এই সেতুর উপর দিয়ে চলাচল করবে? প্রায় দিনই এই সেতুর উপর চলাচলকারী যানবাহন ও পথচারী পরে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুল হাশেম জানান, সেতুটি সরেজমিন গিয়ে সংস্কারের জন্য ইতিমধ্যে উপজেলা প্রকৌশলীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এব্যাপারে সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী অরুন কুমার বিশ্বাস জানান, সেতুটি আমাদের দপ্তরের হলেও রাস্তাটি আমাদের নয়। এই সেতুটি আমাদের অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবীর প্রেক্ষিতে মানবিক কারনে সেতুটি অপসারণ করা হয়নি। সেতুটি সংস্কারের ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এইচেকআর