ঢাকা সোমবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৫

Motobad news

ভোলায় ইলিশের দেখা মিলছে, তবে আকারে ছোট

ভোলায় ইলিশের দেখা মিলছে, তবে আকারে ছোট
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

ভোলার দৌলতখান উপজেলা সদর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে মেঘনা নদীর সুবেদারের মোড় মাছঘাট। আজ শুক্রবার সেখানে দেখা হলো মো. রুবেল মাঝির (৪৩) সঙ্গে। এই মৎস্যজীবী বৃহস্পতিবার  দিবাগত রাত রাত ৩টা থেকে সকাল সাড়ে ৯ টা পর্যন্ত নদীতে জাল ফেলেছেন। ছোট-বড় মিলিয়ে ইলিশ পেয়েছেন ১০ হালি বা ৪০টি। বিক্রি করেছেন ৯ হাজার টাকায়। নৌকায় মোট আছে সাতজন। তাদের পেছনের ব্যয়সহ খরচ হয়েছে ২ হাজার টাকার বেশি।

এই সেপ্টেম্বরের দুটি জোতেই বা অমাবস্যা ও -পূর্ণিমার সময় ইলিশ-শূন্য ভোলার জলসীমানায় (মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদী ও সাগর মোহনা) ইলিশের দেখা মিলেছে। তবে সবার ভাগ্যে ঝাঁকে-ঝাঁকে ইলিশ পড়ছে না। ইলিশ যেন লটারি। যার ভাগ্য ভালো ইলিশ মিলছে তাদের জালে। 

এমনই একজন আব্দুল গনি মাঝি। দৌলতখান শহর লাগোয়া পাতারখালের তীরে তাঁর সঙ্গে দেখা হলো। গণি মাঝি বলেন, পূর্ণিমার জোতে সাগরে গিয়ে ৪ লাখ টাকার মাছ পেয়েছেন। গত বুধবারে দৌলতখানে মাছ বিক্রি করতে ফিরেছেন। আবার বাজার নিয়ে আজ রাতেই রওনা হবেন। ৪ অক্টোবর মা-ইলিশে ধরা বন্ধ হয়ে যাব। সেদিনই ফিরবেন। এই নিষেধাজ্ঞা চলবে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত।


ভোলার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, গত জুলাই-আগস্ট মাসে যে ইলিশ পাওয়া গেছে সেপ্টেম্বরের ১৫ দিনে তার দ্বিগুণ ইলিশ পড়েছে। নদী ইলিশ শূন্য হয়ে পড়েছিল, এখন জেলেরা ২ থেকে ১০ হালি ইলিশ পাচ্ছে। টানা বৃষ্টিতে নদীর পানি মিষ্টি হয়েছে। অমাবস্যায় জোঁতে (জোয়ারে) মেঘনা-তেতুলিয়া আরও ইলিশ পড়বে।

জেলার সাত উপজেলায় জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর ইলিশ আহরণ হয়েছে ৩৮ হাজার ২০০ মেট্রিক টন। সেপ্টেম্বরের ১৫দিনেই আহরণ হয়েছে ২১ হাজার ৫২০ মেট্রিক টন। 
মেঘনা ও এর মোহনায় ইলিশ আসতে শুরু করলেও দাম কমছে না।

এক কেজির বেশি ওজনের মাছ এক হাজার থেকে ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সাড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের মাছের কেজি সাত শ থেকে সাড়ে ৭০০ টাকা কেজি দরে। 

ভোলার দৌলতখান উপজেলার থানার পেছনের মাছঘাট। সেখানে দাঁড়িয়ে শতাধিক মাছ ধরার নৌকা বা ফিশিং বোট। এসব নদী থেকে সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আজ শুক্রবার সকালে গিয়ে দেখা মেলে নৌযানগুলোর। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে যারা নদীতে মাছ শিকারে বেরিয়েছিল, তারা ভোরে ঘাটে ফিরছে। তাদের প্রত্যেকের হাতে ইলিশ আছে। তবে এখানেও বড় ইলিশের সংখ্যা কম।


এ উপজেলার মৎস্য ব্যবসায়ী, ফিশিংবোটের মালিক কমিশনার মো. বাবুল বলেন, দৌলতখানে প্রায় ১৫০টি ফিশিংবোট আছে। এর মধ্যে ৭ থেকে ৮টি বোট ১০ থেকে ২২লাখ টাকার মাছ পেয়েছে। এর মধ্যে আকতার কোম্পানি অন্যতম। বাকিদের খরচের টাকা ওঠাতে কষ্ট হবে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাবেলা ভোলার সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের নাছিরমাঝি মাছঘাটে গিয়ে দেখা যায়, খালি হাতে ফিরছে না জেলেরা। তবে আড়তের বাক্সে বড় ও ডিমওয়ালা ইলিশ একেবারেই কম।

ইউনিয়নের দড়িরামশংকর গ্রামের জেলে মহিউদ্দিন মাঝি (৪৩) বৃহস্পতিবার সন্ধ্যারাতে আড়তদার এরশাদ সরকারের কাছে সারা দিনে ৬ হাজার ৩৪০টাকার ইলিশ বিক্রি করেছেন। আড়তের খাতা দেখে জানা যায়, তিনি আটজন সহকারী নিয়ে সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম ৪দিনে ১৮হাজার ৬৭০ টাকার ইলিশ বিক্রি করেছেন। পরের চার দিনে ২৭হাজার ২০০টাকার, ১৪ সেপ্টেম্বর ৬হাজার ৯৭০টাকার ও সর্বশেষ বুধবার ৮হাজার ৯৪০টাকার মাছ বিক্রি করেছেন।

মহিউদ্দিন মাঝি বলেন, 'এ বছর ইলিশ পেয়েছি গত ১৭দিনে। এই ১৭দিনে খরচের টাকা বাদ দিয়ে কিছু টাকা ভাগে পেয়েছি। বাকি সময়ে খরচের টাকা ওঠেনি।'

মেঘনা নদীর তীরের এই নাছিরমাঝি মাছঘাটের সফিক মাঝি (৫১) বলেন, বৃহস্পতিবার সারা দিনে প্রায় ৫ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করেছেন। এক হাজার টাকার বেশি খরচ হয়েছে। জালে মাছ পড়ায় এখন তিনি দিন-রাতে দুইবার ‘খেয়ো’ দিচ্ছেন।


এ ঘাটের আরেক মাঝি মো. সবুজ (৩২) সাগর মোহনায় মাছ শিকার শেষে বৃহস্পতিবার রাতে ফিরেছেন। তিনি জানালেন, সাগরেও এখন বড় ইলিশের আকাল। সব টেম্পু ইলিশ ( জাটকার চেয়ে একটু বড়)। যার কারণে দাম কম। যে ইলিশ পেয়েছেন, এগুলো বড় হলে ৩ থেকে ৪লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারতেন। কিন্তু বিক্রি করেছেন ৮০হাজার টাকায়। খরচ গেছে ৪০হাজার টাকা।

নদীতে ইলিশ না পেয়ে জেলেরা গত ১৭ থেকে ১৮দিন (অমাবস্যা-পূর্ণিমার জোতে) সাগর ও সাগর মোহনায় মাছ ধরতে গেছে।


ভোলার সবচেয়ে বড় চরফ্যাশন উপজেলার সামরাজ মাছঘাটের আড়তদার জাকির হোসেন মিঞা বলেন, ৫ থেকে ৪০ লাখ টাকার মাছ পেয়েছে লটারির মতো ২ থেকে ৪জন। গড়-পড়তা জেলেরা ৫০ হাজার থেকে দেড়-দুই লাখ টাকার ইলিশ পেয়েছে। কোনোও জাল শূন্য না হলেও, বেশির ভাগ জেলে খরচ ওঠাতে পারবে না। অনেক ফিশিংবোট মাছ না পেয়ে অন্যের মাছ ছিনিয়ে নিচ্ছে।

ইলিশের এ মৌসুমে দাদন বা ঋণ নেওয়ার রীতি চালু আছে। মৌসুমের শুরুতে জেলেরা দাদন নেন। পরে শোধ করে দেন।

ঢালচরের আড়তদার শাহে আলম মাঝি বলেন, মৌসুমের শুরুতে (১জুলাই-৪অক্টোবর) একজন সাগরগামী জেলেকে ১০ থেকে ১২লাখ টাকা দাদন দেন আড়তদার। মাঝি এ টাকায় বোট, ইঞ্জিন, জাল সংস্কার, বাজার ঘাটসহ ভাগীদের(মাল্লা) নিয়োগ দেন। 

একবার সাগরে বা সাগর মোহনায় যেতে দেড়- দুই লাখ টাকার বাজার নিতে হয়। যার বেশির ভাগ জ্বালানি তেল ও বরফ। ভরা মৌসুমে জেলেরা পর্যাপ্ত ইলিশ না পাওয়ার কারণে ৯০ ভাগ আড়তের দাদন শোধ করতে পারেনি জেলেরা।


এইচেকআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন