চারদিনেও খোঁজ মেলেনি নিখোঁজ ৩ ছাত্রীর

রাজধানীর পল্লবী থেকে বহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হওয়া তিন কলেজছাত্রীকে রবিবার পর্যন্ত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। পুলিশ ও নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের পরিবারের সন্দেহ তারা কোনো মানবপাচারকারী চক্রের খপ্পরে পড়েছে।
তাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পল্লবী থানায় দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার চার আসামির মধ্যে মো. রকিবুল্লাহর দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। অপর তিন আসামির বয়স নির্ধারণের পর রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে তারা আর ফেরেনি। গতকাল বিকাল ৫টা পর্যন্ত তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল। ফেসবুকেও তাদের পাওয়া যাচ্ছে না।
এ অবস্থায় তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে পল্লবী থানার ওসি পারভেজ ইসলাম বলেন, নিখোঁজ তিন শিক্ষার্থী এখনো উদ্ধার হয়নি। অভিযান চলছে। সীমান্তবর্তী এলাকায়ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
তাদের সম্ভাব্য অবস্থান সম্পর্কে কোন তথ্য পাওয়া গেছে কি না জানতে চাইলে পল্লবী থানার ওসি পারভেজ ইসলাম বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি নিখোঁজ তিন শিক্ষার্থীর বিদেশে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। তবে তারা এখন পর্যন্ত দেশে আছে বলেই আমাদের কাছে আছে তথ্য রয়েছে। যেহেতু ওই শিক্ষার্থীদের কোন পাসপোর্ট নাই, ধরেই নেওয়া যায় বৈধ উপায়ে তাদের দেশ ত্যাগের কোন সুযোগ নেই। অবৈধ পথে যাতে তারা দেশ ত্যাগ করতে না পারে সেটা নিয়ন্ত্রণ এখন বড় চ্যালেঞ্জ। তাদের খুঁজে বের করতে অভিযান চলমান রয়েছে।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, মানবপাচারকারী চক্রের পাশাপাশি টিকটক চক্রসহ সম্ভাব্য অপহরণকারী চক্র জড়িত কি না তা নিয়েও তদন্ত চলছে। এর আগে টিকটক চক্র ভারতসহ বিভিন্ন দেশে নারী পাচার করেছিল। নিখোঁজ তিন শিক্ষার্থীর মধ্যে স্নেহা নামের মেয়েটি ছিল খুবই উচ্চাভিলাষী। ধারণা করা হচ্ছে, তার সঙ্গে টিকটক চক্রের যোগাযোগ রয়েছে। সে-ই অন্য দুই শিক্ষার্থীকে কৌশলে সঙ্গে নিয়ে পাচারকারীদের সঙ্গে লাপাত্তা হয়েছে।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর কাজী দিলখুশ জান্নাত নিসা, কানিজ ফাতেমা ও স্নেহা আক্তার পল্লবী ১১ নম্বর প্যারিস রোডের ‘সি’ ব্লক ১৮ নম্বর লাইন এলাকা থেকে নিখোঁজ হয়। তারা সবাই উচ্চ মাধ্যমিকের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে জান্নাত নিসা মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউট, স্নেহা পল্লবী ডিগ্রি কলেজ ও কানিজ ফাতেমা দুয়ারীপাড়া কলেজের ছাত্রী। তারা একে অন্যের পরিচিত ও বান্ধবী।
গত ২ অক্টোবর পল্লবী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে নিখোঁজ এক শিক্ষার্থীর বড় বোন এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করেন। নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করে বলা হয়, একটি মানব-পাচারকারী চক্রের সদস্যরা ওই তিন শিক্ষার্থীকে বিদেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে বাসা থেকে বের করে নিয়ে যায়। এরপর থেকেই তারা নিখোঁজ রয়েছেন। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় তারা নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, স্কুল সার্টিফিকেট ও মূল্যবান সামগ্রী সঙ্গে করে নিয়ে গেছে।
এদিকে গত শনিবার রাতে নিখোঁজ শিক্ষার্থী দিলখুশ জান্নাত নিশার বড় বোন কাজী রওশন দিল আফরোজ বাদী হয়ে পল্লবী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
ওই মামলায় গ্রেফতার মো. রকিবুল্লাহর (২০) দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম মাহমুদা বেগমের আদালত শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। একইসঙ্গে অপর তিন আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। তারা হলেন-মো. তরিকুল্লাহ (১৯), জিনিয়া রোজ (১৮) ও শরফুদ্দিন আহম্মেদ অয়ন (১৮)।
আদালত সূত্র জানায়, গ্রেফতার চারজনকে আদালতে হাজির করে রাজধানীর পল্লবী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে করা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাদের সাত দিন করে রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। অপর দিকে আসামি তরিকুল্লাহ, জিনিয়া ও অয়ন শিশু হওয়ায় তাদের রিমান্ড শুনানি শিশু আদালতে করার জন্য আবেদন করেন তাদের আইনজীবীরা।
মামলার এজাহারে বলা হয়, নিখোঁজ কাজী দিলখুশ জান্নাত নিশা (১৬) পল্লবী থানাধীন সেকশন-১১, ব্লক-সি, ১৮ নম্বর রোডের বাসায় বসবাস করতো। সে মিরপুর গার্লস আইডিয়াল কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। লেখাপডার সুবাদে এক নম্বর আসামি তরিকুল্লাহ, রাকিকুল্লাহ, জিনিয়া ও অয়নসহ দিলখুশের বান্ধবী লেহা আক্তার (১৭) ও কানিজ ফাতেমার (১৮) সঙ্গে পরিচয় হয়। এর মধ্যে তিন নম্বর আসামি জিনিয়া প্রায় সময় দিলখুশের বাসায় আসা-যাওয়া করতো এবং প্রায় সময় তরিকুল্লাহ ও জিনিয়া বাসায় এসে নিশাকে ঘোরাফেরার জন্য বাইরে নিয়ে যেতো। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৩০ সেপ্টেম্বর সকালের দিকে দিলখুশ বাসা থেকে বের হয়।
এমবি