এক যুগে ৩৭ শিক্ষার্থী খুন

দেশের ১২ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, একটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এবং তিন কলেজে সংঘর্ষ-সহিংসতায় গত ১২ বছরে ৩৭ শিক্ষার্থীসহ ৩৯ জন খুন হয়েছেন। এসব ঘটনার পুরোভাগে ছিল ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ। নিজেদের মধ্যে বিরোধেও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা হতাহত হয়েছেন। এসব ঘটনার পাঁচটি মামলায় আদালতের রায়ে সব আসামিই খালাস পেয়েছেন। সর্বশেষ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদসহ চারটি হত্যা মামলার রায়ে অভিযুক্তদের সাজা হয়েছে। তবে কোনো সাজাই এখনো কার্যকর হয়নি। বাকি মামলাগুলোর বেশির ভাগই বিচারাধীন।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বেশির ভাগ হত্যার ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০২০ সালের ৭ অক্টোবর বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে শিবির সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার আগে ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর পুরান ঢাকায় দর্জি বিশ্বজিৎ দাসকে হরতালের পিকেটার সন্দেহে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আলোচিত এই দুই ঘটনা দ্রুত আদালতে গড়িয়েছে। অন্যান্য ঘটনার ক্ষেত্রে এমন চিত্র দেখা যায়নি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ছাত্ররাজনীতি ও ক্যাম্পাসের দখলসহ বিভিন্ন কারণে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটছে। তদন্তের দুর্বলতা এবং সাক্ষীর অভাবেই বিচারপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আবরার ফাহাদ হত্যার রায় কার্যকর হলে এ ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত স্থাপিত হবে।
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ওমর ফারুক বলেন, ছাত্ররাজনীতির নামে যেসব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, মূলত রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে সেগুলোর বিচার হয়নি। সাক্ষ্য-প্রমাণের ঘাটতি থাকে। তদন্তও দুর্বল হয়। এ কারণে কিছু মামলায় রায় হলেও উচ্চ আদালতে তা বহাল থাকে না। ক্ষমতার প্রভাবমুক্ত তদন্ত ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা দরকার।
সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, প্রসিকিউশনকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। দেরি হলে সাক্ষী পাওয়া কঠিন। কারণ ক্যাম্পাসের ছাত্ররা বাইরে চলে যান। সাক্ষীদের সুরক্ষা প্রয়োজন।
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) আবদুল কাইউম বলেন, ‘তদন্তে দুর্বলতার ব্যাপারে আমি পুরোপুরি একমত নই। সমস্যা হলো, কেউ সাক্ষ্য দিতে সাহস পায় না। সাক্ষী পাওয়া যায় না।’
এমবি