বাউফলে আ.লীগের দলীয় প্রার্থী বাছাইকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ


দলীয় মনোনয়নের জন্য মেয়র প্রার্থী বাছাইয়ের লক্ষে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় আওয়ামী লীগের এক বহিস্কৃত নেতার বক্তব্যকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এতে বগা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাসান মাহামুদ (৩৫), বাউফল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক অহিদুজ্জামান ডিউকসহ (৪০) দুই পক্ষের কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন।
গুরুতর আহত ইউপি চেয়ারম্যান হাসান মাহামুদ (৩৫), মো. জসিম (৩৪), মিজান মোল্লা (৪০), সুমন (৩০) মো. আশ্রাফকে (২৮) বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক সুব্রত কুমার বিশ্বাস বলেন, আহত ব্যক্তিদের মধ্যে হাসান মাহামুদ ও জসিমের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
সোমবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে ওই ঘটনা ঘটেছে।
এ ঘটনার পর জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। উপজেলা সদরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে,২৩ ডিসেম্বর বাউফল পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ি আগামি ৩১ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন ধার্য হয়েছে। এ উপলক্ষে দলীয় মনোনয়নের জন্য মেয়র প্রার্থী বাছাইয়ের লক্ষে বিশেষ বর্ধিত সভার আয়োজন করে উপজেলা আওয়ামী লীগ। বিকেল সাড়ে তিনটায় স্থানীয় সাংসদ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আ স ম ফিরোজের সভাপতিত্বে ওই সভা শুরু হয়।
একপর্যায়ে আসম ফিরোজের ভাতিজা ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত চন্দ্রদ্বীপ ইউপি চেয়ারম্যান বহিস্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক ওরফে আলকাচ মোল্লা বক্তব্য দিচ্ছিলেন। ওই সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদার তাঁকে (আলকাচ) উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি বক্তব্য দেওয়ার কে? আপনাকেতো দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে ইউপি নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বহিস্কার করা হয়েছে। তখন বিএনপি ও জাতীয়পার্টি থেকে আসা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম ফারুকের অনুসারীরা সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেবকে গালাগাল করেন।
এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে চেয়ার ছোড়াছুড়ি হয়। একপর্যায়ে ছাত্রলীগ কর্মী সৌমিক (২২), সাবেক ছাত্রদল কর্মী মো. শামীম (২৮), আতিকুর রহমান (৩০) ও কালাইয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মিজান মোল্লার (৪২) নেতৃত্বে ৬০-৭০ জনের একটি দল আবদুল মোতালেবের ছেলে বগা ইউপির চেয়ারম্যান হাসান মাহামুদকে টেনেহেচরে বাহিরে নিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করে। তাঁকে রক্ষা করতে তাঁর নেতা-কর্মীরা এগিয়ে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এতে হাসান মাহামুদ (৩৫), মো. জসিম (৪০) মো. ইসমাইল হোসেন (৩৫),সুমন (৩০), মো. ইমরান (১৯), মিজান মোল্লা (৪২), জগদিসসহ (৩৮) দুই পক্ষের কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। পুলিশ আহত কয়েকজনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
সংঘর্ষের ওই দৃশ্য ধারণ করতে গেলে সাংবাদিক অহিদুজ্জামানকে মারধর করে আহত করা হয় ও যুগান্তরের সাংবাদিক জিএম মশিউর রহমানের মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়। পরে সভা শেষ না করেই আবদুল মোতালেব হাওলাদার সভাস্থল ত্যাগ করেন।
সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব হাওলাদার বলেন,‘ঘটনার সময় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আলমগীর সাহেব আমার মুঠোফোনে ফোন দিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিতে চান। তাই আমি আওয়ামী লীগ থেকে বহিস্কৃত নেতা আলকাচ মোল্লাকে বলি, আপনিতো বহিস্কৃত নেতা। আপনার বক্তব্য দেওয়ার প্রয়োজন নাই। আর এতেই বিএনপি ও জাতীয় পার্টি থেকে আসা আরেক নেতা ইব্রাহিম ফারুকের অনুসারীরা বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করে আমাকে গালাগাল করে। আমার ছেলেসহ আমার নেতাকর্মীকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। এর জন্য সাংসদ আ স ম ফিরোজ সাহেব দায়ী।’
এ বিষয়ে জানার জন্য সাংসদ আ স ম ফিরোজের মুঠোফোনে কল করলে তিনি ধরেননি। ক্ষুদেবার্তা দেওয়া হলেও সাড়া দেননি। ইব্রাহিম ফারুককে ফোন দিলেও তিনি ধরেননি।
বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আল মামুন সত্যতা স্বীকার করে বলেন,‘বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে। লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এইচকেআর
