ঢাকা রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

Motobad news

দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত আজিজ টিটো ও আজিম উদ্দিনকে দুদকে তলব

 দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত আজিজ টিটো ও আজিম উদ্দিনকে দুদকে তলব
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

অর্থ আত্মসাত, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য আজিজ আল কায়সার টিটো ও আজিম উদ্দিন আহমেদকে তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে তাদের তলব করা হয়।

আগামী ৬ জানুয়ারি মঙ্গলবার সকাল ১০টায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে তাদের হাজির হয়ে বক্তব্য দিতে বলা হয়েছে।

দুদকের তলব করা নোটিশে উল্লেখ করা হয়, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, এফডিআর করার নামে প্রতিষ্ঠানের অর্থ লোপাট, স্ত্রী, স্বজনদের চাকরি দেওয়ার নামে অনৈতিক ভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া, সরকারি শুল্ক ফাঁকি দিয়ে গাড়ি ক্রয় ও অবৈধভাবে বিলাসবহুল গাড়ির ব্যবহার এবং বিভিন্ন অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের আড়ালে প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, বসুন্ধরা, ঢাকার বোর্ড অব ট্রাস্টিজ-এর সদস্যদের বিরুদ্ধে এ নোটিশ জারি করা হয়।

নোটিশে আরও উল্লেখ করা হয়, সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে বর্ণিত অভিযোগ বিষয়ে তাদের বক্তব্য শ্রবণ ও গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন বিধায় উল্লিখিত অভিযোগ বিষয়ে বক্তব্য প্রদানের লক্ষ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হয়ে অনুসন্ধান টিমের নিকট বক্তব্য প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে হাজির হয়ে বক্তব্য প্রদানে ব্যর্থ হলে বর্ণিত অভিযোগ বিষয়ে তাদের কোনো বক্তব্য নেই মর্মে গণ্য করা হবে।

এর আগে একই অভিযোগ এবং একই রকম নোটিশ জারি করে একে একে নর্থ সাউথের ৪ ট্রাস্টি এম এ কাসেম, মোহাম্মদ শাজাহান, রেহানা রহমান ও বেনজীর আহমেদকে তলব করা হয়েছিল। কিন্তু এদের কেউই দুদকের তলবে সাড়া দেননি।

এর মধ্যে ২ জানুয়ারি সকালে তারা হাজির না হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়েছেন। মোহাম্মদ শাজাহান অসুস্থতার কারন দর্শান, অন্যদিকে এম এ কাসেম বার্ধক্যজনিত কারণে বিশ্রামে আছেন বলে আইনজীবী মারফত জানিয়েছেন।

অন্যদিকে ৪ জানুয়ারি বোর্ড অব ট্রাস্টিজের আরো দুই সদস্য রেহেনা রহমান ও বেনজীর আহমেদও ১ মাসের সময় চেয়ে আবদেন করে দুদকের তলব এড়িয়ে গেছেন।

জানা গেছে দুদকের তলব এড়িয়ে যেতে আইনের অপব্যবহার এবং ভুয়া ডাক্তারি সনদ ব্যবহার করছেন তারা। পরষ্পর যোগসাজেশে দুদকের ডাকে সাড়া না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এদেও কারোরই স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে না। কেউ কেউ সাউথ ইস্ট ব্যাংকের ব্রাঞ্চ ওপেনিংয়ে গিয়েছেন, আবার কেউ সাউথ ইস্ট ব্যাংকের বোর্ড মিটিং এ সশরীরে উপস্থিত ছিলেন। তারা অংশ নিয়েছেন নর্থ সাউথের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাতেও।

ফলে দুদকের ডাকে সাড়া না দেওয়াকে ধৃষ্টতা, আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন এবং হাস্যকর বলে দাবি করেছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগকারী সংগঠন আইন ও মানবাধিকার সুরক্ষা ফাউন্ডেশন এর উপদেষ্টা সুফী সাগর সামস। তিনি বলেন, ‘এম এ কাসেম, মোহাম্মদ শাজাহান, রেহেনা রহমান ও বেনজীর আহমেদ প্রত্যেকেই বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মিটিং, বিশ্ববিদ্যালয় মিটিংসহ সব ধরনের স্বাভাবিক কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। কিন্তু দুদকে উপস্থিতির ক্ষেত্রে অসুস্থতা, সময় প্রার্থনার মতো কারন দেখিয়ে কালক্ষেপণ করছেন। আমরা জানতে পেরেছি একই প্রক্রিয়ায় অভিযুক্ত ট্রাস্টিরাও দুদকে উপস্থিত না হওয়ার পরিকল্পনা করছেন।

তিনি বলেন, অন্যরা যাতে একই রকম অজুহাতে পার পেয়ে না যায় সে ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি প্রতিষ্ঠানকে বাঁচাতে দোষীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির কোনো বিকল্প নেই। বিষয়টি দুদক দ্রুত আমলে না নিলে তারা ফের কঠোর আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দেন।

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় বাঁচাতে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলণ করা সুফী সাগর সামস এবার আমরণ অনশনের ডাক দিয়েছেন।

এদিকে দুদকের ডাকে সাড়া দেওয়ার ধারাবাহিকতা প্রসঙ্গে নাম প্রসঙ্গে অনিচ্ছুক একজন দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘একই মামলার অনুসন্ধানে অভিযুক্তরা প্রত্যেকেই রহস্যজনকভাবে অসুস্থ বলে দাবি করছেন, কেউই হাজির হচ্ছেন না। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমরা শিগগিরই ব্যবস্থা নেব।’

এদিকে জানা গেছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিযুক্ত ট্রাস্টিদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ট্রাস্টি বিদেশ ভ্রমণের উদ্দেশ্যে বিমান বন্দরে যাওয়ার পর তাকে সেখান থেকে ফেরত পাঠানো হয়।


অভিযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য আজিম উদ্দিন, এমএ কাসেম, রেহানা রহমান, মোহাম্মদ শাহজাহান, বেনজীর আহমেদ, আজিজ আল কায়সার টিটোসহ বোর্ড অব ট্রাস্টির সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন যাবতই প্রতিষ্ঠানটিকে লুটেপুটে খাচ্ছেন। মূলত এই সিন্ডিকেটের কারনেই নর্থ সাউথে অনিয়মই পরিণত হয়েছে নিয়মে।

ছাত্রদের টিউশন ফি থেকে অবৈধভাবে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যের জন্য বিলাসবহুল গাড়ি ক্রয়, এক লাখ টাকা করে সিটিং এলাউন্স, অনলাইনে মিটিং করেও সমপরিমান এলাউন্স গ্রহণ, নিয়ম ভেঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ফান্ডের ৪০৮ কোটি টাকা নিজেদের মালিকানাধীন ব্যাংকে এফডিআর, মঞ্জুরি কমিশনের নির্দেশনা অমান্য করে কয়েকগুণ শিক্ষার্থী ভর্তিসহ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা অনিয়ম ও জঙ্গি মদদ বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে জমেছে অভিযোগের পাহাড়।

পারষ্পরিক যোগসাজেশে আশালয় হাউজিং এর কাছ থেকে জমি ক্রয়ের নাম করে অর্থ লোপাট করেছেন ৪২৫ কোটি টাকা। বিষয়গুলো দুদকের নজরে আনার পর এখন সেগুলো নিয়েই অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।

এ বিষয়ে অভিযোগকারী প্রোটেকশন ফর লিগ্যাল এইড এন্ড হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা ড. সুফী সাগর সামস বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে গত জুলাইয়ে দুদকসহ আরো কিছু সরকারী কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করেছি। এরপর ব্যক্তিগত অনুসন্ধানে বেশ কিছু প্রমাণ হাতে এনেছি। এরপর মানববন্ধন ও স্মারকলিপির মাধ্যমে আমি আমার লড়াই অব্যাহত রেখেছি। আর এই উদ্যোগের কারণে আমার নামে মামলা করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত হুমকি পাচ্ছি। এরপরও লড়াই চালিয়ে যেতে চাই। যেহেতু তারা প্রভাবশালী তাই তারা যেন অনুসন্ধান ও তদন্ত কার্যক্রম কোনোমতে ব্যাহত করতে না পারে সেজন্য আমি যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’


এইচকেআর
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন