ঢাকা রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫

Motobad news
স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে লক্ষাধিক মানুষ

আমতলীতে পচা পানির দুর্গন্ধে বিপন্ন পরিবেশ

আমতলীতে পচা পানির দুর্গন্ধে বিপন্ন পরিবেশ
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন

বরগুনার আমতলীতে খালের পানি পচে ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়ায় পচা পানির দুর্গন্ধে খালের দু’পাড়ের বসবাসরতদের বাস করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

আমতলী নতুন বাজার বাধঘাট থেকে সুবান্ধী, রামজি, ঘুগুমারী পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে খালের দু পাড়ের ৩০টি গ্রামের ৯০ থেকে ১ লাখ মানুষ প্রতিনিয়ত পচা পানির দুর্গন্ধ সহ্য করে আর মশা মাছি সাপের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে আছে। পরিবেশ এবং প্রতিবেশের কারণে তাদের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে।
 
আমতলী পৌরসভার একাংশ, আমতলী সদর, হলদিয়া ৩টি ইউনিয়ন এবং আমতলী পৌরসভার মাঝ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে প্রমত্তা পায়রা নদীর সাথে মিশেছে। এই খালের অন্তত ২০টি শাখা খালের মাধ্যমে ২৬ গ্রামের প্রায় ৮০ হাজার মানুষের পানি প্রবাহ এবং জীবন জীবিকা গড়ে ওঠে। ১৯৮৩ সালে এই খালের সুবান্দী নামক স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ড অপরিকল্পিত ভাবে একটি বাঁধ নির্মাণ করে।
 
ফলে এ খালের আমতলী এবং সুবন্ধি অংশে বাঁধ দেওয়ায় ভিতরের পানি প্রবাহ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এবং পানি নিষ্কাশনের অভাবে শাখা প্রশাখাগুলো পানির অভাবে মরে যেতে থাকে এবং অপর দিকে বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশনের অভাবে জলাবদ্ধতায় ফসল হারায় প্রায় ১৪/১৫টি গ্রামের মানুষ।
 
খালটি কচুরি পানায় ভরে মানুষের সেচকাজসহ নৌচলাচল সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়। শুরু হয় মশা মাছি এবং সাপের উপদ্রব। কচুরি পানায় খাল ভরে যাওয়ায় শুকনো মৌসুমে এই খালের পানি পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। মানুষ তো দূরের কথা কোন পশু পাখিও এই পানি ব্যবহার করতে পারছে না।
 
শুকনো মৌসুমে এই খালের পানি পচে যাওয়ায় সেচ কাজেও লাগানো যাচ্ছে না। এই খালের পচা পানি ব্যবহারের ফলে অনেকের শরীরে দগদগে ঘা হয়ে গেছে।
 
হলদিয়া গ্রামের আফজাল হোসেন বলেন, আমরা এই খালের পানি ব্যবহার করতে পারি না। পানি হাতে  লাগালে হাত চুলকাতে চুলকাতে ঘা হইয়া যায়। এমনকি এ খালের পানিতে গরু বাছুর ও গোসল করাতে এবং পাানি খাওয়াইতে পারি না।

চাওরা খালের এই বাঁধের কারণে আমতলী পৌরসভার ৩ এবং ৭ নং ওয়ার্ডসহ আমতলী সদর ইউনিয়নের ছুরিকাটা, মহিষডাঙ্গা, নাচনা পাড়া, পূর্ব আমতলী, আড়ুয়া বৈরাগী, চলাভাঙ্গা, হলদিয়া ইউনিয়নের হলদিয়া, উত্তর তক্তাবুনিয়া, গুরুদল, লক্ষী, রাওঘা, কাঠালিয়া, এমপির হাট, রামজি, চিলা, ঘুঘুমারি, সোনাউটা, দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া, চিলা বিশ্বাসের হাট এবং চাওরা ইউনিয়নের চলাভাঙ্গা,কাউনিয়া, চন্দ্র, পাতাকাটা, তালুকদার হাট, লোদাসহ ৩০টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পড়েছে মহা বিপদে। এই খালের কচুরি পানার কারণে আরো প্রায় ১৫-২০টি শাখা নদীও মরে কচুরিপানা জমে ভরাট হয়ে যাওয়ায় মানুষ এখন শুকনো মৌসুমে পানি সংকটে পড়েছে মারাত্মক ভাবে।
 
মরে যাওয়া খালগুলো হচ্ছে, বলইবুনিয়া, হলদিয়ার কাউনিয়া, রামজির খাল, ঘুঘুমারি খাল, আড়–য়াবৈড়াগি খাল, নাচনাপাড়া খাল, চিলা খাল, ছুরিকাটা খাল, লোদা খাল, চলাভাঙ্গা খাল, পাতাকাটা খাল, লক্ষীর খাল এবং কালীগঞ্জের খাল।
 
চাওরা ইউপির অনেক অংশে খালের এই মরণ দশার কারণে এখন অনেক যায়গায় দখল দূষণ হয়ে যাচ্ছে দেদারছে। এই খালের পারের অন্তত ২০টি স্থানে ভূমি দস্যুরা দখল করে খাল ভরাট করে পাকা ইমারত বানিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য করছে। তারা আবার এই খালে ময়লা আবর্জনা ফেলে এবং খোলা পায়খানা বানিয়ে পরিবেশ দূষণ করছে অহরহ।
 
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, তুজির ঘোজা, তালুকদার হাট, হলদিয়া, চিলা, নাচনা পাড়া, চিলা বিশ্বাসের হাট, আমতলী পৌরসভার অংশের অনেক জায়গায় খাল দখল করে দোকান বানিয়ে দখল করে নেয়া হয়েছে।
 
খালটির এই মরণ দশার কারণে জীবন জীবিকা হারিয়েছেন অন্তত  ৫/৬ হাজার জেলে। একসময় তারা এই খালে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। আজ তারা কোথায় হারিয়ে গেছেন তার কোন পরিসংখ্যান নেই সরকারী দপ্তরে।
 

এ খালের সংকট সমাধানে ২০১৭ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড ৭শ ৫৬ কোটি টাকা ব্যয় ধরে একটি মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধমে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে দাখিল করে। এ প্রকল্পের আওতায় ছিল খাল পুন: খনন, কচুরি পানা পরিষ্কার, ৫ ব্যান্ডের স্লুইস নির্মাণ করে খালের পানি প্রবাহের গতি ফিরিয়ে আনা। কিন্তু ৫বছর অতিবাহিত হলেও সে প্রকল্প আর আলোর মুখ দেখেনি।
 
অপরিকল্পিত বাঁধের কারণে এই খালের পারে বসবাস রত ৩০ টি গ্রামের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ আজ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। খালের এই বাঁধ এখন তাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই খালের পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে সঠিক প্রকল্প গ্রহণ এখন জরুরী হয়ে পড়েছে।
 
বরগুনার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার আলম জানান, খালের কচুরি পানা অপসারণ করে খননের মাধ্যমে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করা এবং সকল ধরনের সমস্যা সমাধানের জন্য ৭শ ৫৬ কোটি টাকার একটি মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

বরগুনার জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান জানান, এ খালের পানি প্রবাহ নিশ্চিতে সকল ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
 

 


এমবি
গুগল নিউজে (Google News) দৈনিক মতবাদে’র খবর পেতে ফলো করুন