জলবায়ু পরিবর্তনে কুয়াকাটায় মরছে সৈকত রক্ষাকারী হাজারো গাছ


কুয়াকাটা সৈকতের গঙ্গামতি পয়েন্ট এলাকায় বনাঞ্চলের বিশাল একটি অংশের বিভিন্ন প্রজাতির গাছ মরছে। ফলে একদিকে যেমন পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে তেমনি প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপকূলবাসীর জানমালের ঝুঁকিও বাড়ছে।
বন বিভাগ ও পরিবেশকর্মীদের দাবি, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে স্ফীত জোয়ারের সঙ্গে সৈকতে বালু জমা হয়ে গাছের শিকড় আটকে থাকছে। আর এতেই মরছে এসব গাছ।
গঙ্গামতি এলাকার প্রবীণ জেলে রতন মল্লিক জানান, সিডরের সময় উপকূলীয় বাসিন্দাদের অন্যতম বন্ধু ছিল এসব গাছ। কিন্তু সিডরের পর থেকেই এসব গাছ মরতে শুরু করে। আগের চেয়ে জোয়ারের পানিও বেড়েছে। গাছ না থাকায় উপকূলবাসীর ঝুঁকিও বেড়েছে অনেক।
বন বিভাগের তথ্য মতে, প্রায় ২০ একর জায়গাজুড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে মরা যাওয়া গাছগুলো। এসবের বেশিরভাগই কেওড়া ও গেওয়া। এছাড়া ছইলা, হিজল, কাঠবাদাম, ক্যাজা, নিম, পাকুড়, তেঁতুলসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছও রয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপার কলাপাড়া জোনের সাধারণ সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন মাননু বলেন, সিডর ও আইলা-পরবর্তী সময়ে উপকূলীয় অঞ্চলে আয়তন ঠিক থাকলেও কমছে বন। নদীভাঙনের কারণে অনেক গাছ বিলীন হচ্ছে। আবার সমুদ্র পিষ্টে পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় অতিরিক্ত বালু জমা হয়ে হাজারো গাছের শ্বাসমূল বালুতে আটকে থেকে মরছে।
গঙ্গামতি ট্যুরিজমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক লুৎফুল হাসান রানা জানান, কুয়াকাটা সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগের একমাত্র জায়গা গঙ্গামতির সৈকতের সবুজ বনায়ন, যা এখন ধ্বংসের পথে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেগে ওঠা চরে বনায়ন করা জরুরি।
পটুয়াখালী বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, বছরে কমপক্ষে ১০ হাজার কেওড়া গাছসহ কয়েক হাজার বিভিন্ন জাতের গাছ মরছে। এর প্রধান কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব। সমুদ্রগর্ভে পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়া, বালু জমাট থাকার কারণেই মূলত গাছ মরছে।
তিনি আরও জানান, ওই অঞ্চলে যখন মাটির অংশ বেশি হবে তখন পরিবেশটা ফিরবে। এছাড়া গাছ মরা এলাকা এবং নতুন জেগে ওঠা চরে বনায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা দ্রুত বাস্তবায়ন হবে বলে আশা করছি।
